জন্মদিন
একষট্টিতেও অপ্রতিরোধ্য রেখা
লক্ষ-কোটি পুরুষের হৃদয়ে দোলা দিয়ে আজও তিনি স্বপ্নের নায়িকা। আজও তিনি খুবসুরত আওরত। বলিউডের এক এবং অদ্বিতীয় ‘উমরাও জান’ তিনি। তাঁর ‘আখো কি মস্তিমে’ আজও বিভোর হয়ে থাকে তামাম রুপালি জগত। তাঁর মাদকতা ভরা চোখের জাদুতে ডুবসাঁতার কাটেনি এমন পুরুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তিনি রেখা। বলা যায়, বলিউডের বিদ্যুৎ ঝলক। যার কাছে সময়ও হার মানে। আসল নাম ভানুরেখা গনেশন। হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ ৬১ বছরে পা রাখলেন রেখা। আজ জন্মদিন তাঁর।
১৯৫৪ সালের ১০ অক্টোবর মাদ্রাজে জন্মগ্রহণ করেন রেখা। বাবা গেমিনী গনেশন। মা পুষ্পাভ্যাল্লী। বাবা-মা দুজনেই ভারতের দক্ষিণী ছবির জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রী। কিন্ত জনপ্রিয় তারকাদের সন্তান হওয়া সত্বেও রেখার ললাট লিখন ছিল ভিন্ন। শৈশবের সাবলীলতা ছিল না তাঁর জীবনে। বাবা গেমিনী গনেশন রেখাকে স্বীকার করেননি। জন্মের পরই তিনি পরিত্যাগ করেছিলেন রেখাকে। কারণ, রেখার বাবা-মায়ের প্রথাগত বিয়েটাই হয়নি। ফলে পিতৃত্ব অস্বীকার করেছিলেন শিশু ভানুরেখার বাবা। ফলে শৈশবেই নিয়তি তাকে ঠেলে নিয়ে যায় চরম এক একাকিত্বে। ছোট থেকে ঈষত স্থুল আর শ্যামবর্ণ ছিল ভানুরেখা। একরকম পেটের তাগিদেই ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিতে পা রাখেন তিনি।
কৈশোর থেকেই চোখভরা ছিল অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন। নিজেকে অভিনেত্রী মুমতাজের জায়গায় দেখার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিন্ত ছোট থেকেই ভাগ্যের পরিহাস ছিল তাঁর কাছে বড় নিদারুণ। শ্যামবর্ণ হওয়ায় ভানুরেখাকে বলিউডের ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রি ফিরিয়ে দিয়েছে বারবার। এরপর নিজের অদম্য জেদ আর ভালোবাসার টানে নিজের মেকওভার পালটে ফেলেন তিনি। বলিউডে সহকর্মীদের হাত ধরে চালিয়ে যেতে থাকেন দাঁতে দাঁত চাপা লড়াই। তবে লুক পালটে ফেলার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি ভানুরেখার।
রেখা নাম নিয়ে সেই সময় বলিউডের নারীকেন্দ্রিক হাওয়ায় ভেসে তরতর করে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। বলিউডে নারীকেন্দ্রিক ব্যাটনকে হাতে তুলে নিয়ে এগিয়ে যান রেখা। ‘খুন ভরি মাংগ’, ‘উমরাও জান’ ছবিতে অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়ে দেন রেখা। তৎকালীন সিনে দুনিয়াকে তোলপাড় করে রেখা ম্যানিয়ায় উত্তাল করে তোলেন দর্শককুলকে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাননি রেখা। উজ্জ্বল সিনে দুনিয়ার মায়াবি আলোর মাঝেও এক কুহেলিকা সৃষ্টি করে একের পর এক নিজের সঙ্গে অমোঘ আকর্ষণে বেঁধে নিয়েছিলেন দর্শকদের। চিরকাল এক রহস্যের জালে নিজেকে বন্দি রেখে গেছেন। প্রথম জীবনে বাবা-মায়ের সান্নিধ্য যেমন পাননি, তেমনি বিবাহিত জীবনেও সুখের ছোঁয়া তাঁর জন্য স্থায়িত্ব দেয়নি। তিনি মুখর নন, আবার নীরবও নন। তিনি একাকী আবার একাকীও নন। কুহেলিকার এক আবছা চাদরে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছেন। এই রহস্যাবৃত রেখাকে নিয়ে কানাকানি গুঞ্জন অবশ্য কম হয়নি বলিউডে।
আজ বলিউডের সেই স্বপ্ন সুন্দরীর ৬১ তম জন্মদিনের আগে ৮০-এর দশকের পরিচালক তথা অভিনেতা রণজিৎ জানিয়েছেন, এই রেখাই জীবনের এক সময়ে নাকি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে স্রেফ সময় কাটানোর জন্য শুটিংয়ের রি-শিডিউল করতে করতে বাধ্য করেছিলেন। এমনকি অমিতাভের জন্য নাকি তিনি ভালো ছবির অফার ছেড়ে দিতেও পিছপা হননি। রণজিতের কথায়, ‘করনাম’ ছবির জন্য রেখা, ধর্মেন্দ্র আর জয়াপ্রদাকে নিয়েছিলেন তিনি। একদিন বিকেলে ছবির শুটিং ছিল। কিন্ত রেখা অমিতাভের জন্য বিকেলে সময় কাটাবেন বলে শুটিং শিডিউল সকালে সেরে ফেলার জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিন্ত সকালে ধর্মেন্দ্রকে পাওয়া না যাওয়ায় রণজিত রেখার কথা মানতে পারেননি। আর তার পরই নাকি রেখা ছবির জন্য নেওয়া অগ্রিম টাকাও ফেরত দিয়ে দেন। সেই ভালোবাসার কাঙাল রেখা জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতেও অমিতাভের জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন নীরবে।
জীবনের বসন্তে অমিতাভ-রেখাকে নিয়ে বলিউডে গুঞ্জন কম হয়নি। সেই গুঞ্জনের মধ্যেও যেন মৌন-মূখর রেখা এক অদ্ভুত রহস্যে সরিয়ে রেখেছেন নিজেকে। আজও রহস্যেঘেরা এক নারী তিনি। যে চেনা হয়েও অচেনা। যে জানা হয়েও অজানা।