সেলিব্রিটিদের পূজা কথামালা
দুর্গাপূজার আনন্দে মেতে উঠেছে কলকাতা। পূজা ঘিরে ছুটির হাওয়া এরই মধ্যে লাগতে শুরু করে দিয়েছে কলকাতার অন্যতম বিনোদনজগৎ টলিপাড়ায়। এবার পূজায় সেলিব্রিটিরা কে কি করছেন? কোথায় থাকছেন? কী ধরনের সাজ পোশাক আর খাওয়াদাওয়া করছেন? আর সেলিব্রিটিদের অতীত দিনের স্মৃতি কার কেমন ছিল? সেসব অজানা তথ্য নিয়ে বিনা সুতায় গাঁথা এই কথামালা।
মধুমিতা সরকার (পাখি)
এই প্রথমবার পূজায় কলকাতায় থাকছেন না ‘বোঝে না সে বোঝে না’ ধারাবাহিকের ‘পাখি’ অর্থাৎ মধুমিতা সরকার। এবারের পূজায় স্বামীর সঙ্গে ছুটি কাটাতে তিনি যাচ্ছেন কেরালায়। তবে এবার কেরালায় পাড়ি জমালেও অন্যবারের পূজার স্মৃতিকে এ বছরও মন থেকে মুছতে পারছেন না তিনি। বললেন, অন্যবার তো স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গেই পূজার ছুটি কাটাতাম। যাদের সঙ্গে সারা বছর দেখা হয় না, তাদের সঙ্গেই ঠাকুর দেখতে যেতাম। কোথাও মেলা বসলে সবাই মিলে নাগরদোলা চড়তাম, খুব মজা করে ফুচকা খেতাম। যা এ বছর স্বামীর সঙ্গে গেলেও সুযোগ পেলে হাতছাড়া করতে চান না তিনি। বললেন, সাজগোজের ব্যাপারে বরাবরই আমি ক্যাজুয়াল পোশাক পছন্দ করি। আমি খুব একটা সাজগোজ করি না। তবে অষ্টমীর দিন চেষ্টা করব শাড়ি পরার। গত বছর পর্যন্ত শাড়ি পরে মায়ের সঙ্গে পূজার অঞ্জলি দিতে গিয়েছি। তবে হ্যাঁ, শাড়ির সঙ্গে গয়না ম্যাচিং না হলে আমি কিন্তু সেই শাড়ি পরবই না।
দেব
‘এই বছর মা দুর্গার আশীর্বাদ নিয়ে প্রথম ছবির প্রযোজনায় হাত দিচ্ছি’ বলে জানালেন টলিউডের এই হার্টথ্রব নায়ক। বললেন, প্রথম ছবির প্রযোজনায় হাত দিচ্ছি বলে তাই আপাতত খুব টেনশনে আছি। পূজার পরপরই আমার প্রযোজনার ছবির শুটিং শুরু হবে। তাই ছবির শুটিংয়ের জন্য পূজার ছুটিতে লোকেশন দেখতে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে যাব। তবে আমার ছোটবেলা কেটেছে মুম্বাইতে। ফলে এখনো আমি মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্কের দুর্গাপূজাটা খুব মিস করি। সেই সঙ্গে ভীষণভাবে মিস করি মুম্বাইয়ের ডান্ডিয়া নাচ। এবার ইচ্ছে আছে, অন্তত একদিন পূজার সময় মুম্বাইয়ে গিয়ে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে ডান্ডিয়া নাচে অংশ নেব। তবে জানি না শেষ পর্যন্ত কতদূর কী হবে। ডান্ডিয়া নাচতে গেলে সেখানকার ট্রাডিশনাল পোশাক পরতে হয়। ফলে এবার পূজায় সেই পোশাকই আমার ফ্যাশন করার ইচ্ছে রয়েছে।
শ্রাবন্তী
আমার ছোটবেলার দুর্গাপূজা কেটেছে বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রতিমা দেখে, পাড়ার মণ্ডপে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে আর হৈ-হুল্লোড় করে। এখন অবশ্য সেই দিনগুলো অনেকটাই হারিয়ে গেছে। বললেন, তবে এখনো মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে দুর্গা প্রতিমা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। মনে পড়ে, ছোটবেলায় পূজার সময় আমি অনেক প্রস্তাব পেতাম। একবার তো একটা ছেলেকে পাড়ার মণ্ডপে চড় মেরেছিলাম। তবে আমার পূজার ভাসানে নাচতে ভীষণ ভালো লাগে। ছোটবেলায় তো একবার নাচতে নাচতে ড্রেনের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। এখন সেই সব স্মৃতি ফ্ল্যাশব্যাকের মতো হয়ে গিয়েছে। এখন সেলিব্রিটি হওয়ার দৌলতে আর স্বাধীনভাবে ঘুরে দুর্গা প্রতিমা দেখার উপায় নেই। ভক্তদের মাঝে পড়ে গেলে হয়ে গেল...। তবে খুব ইচ্ছে করে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দেখতে। কিন্তু উপায় নেই। এখন আমাদের কম্পাউন্ডে পূজা হয়। সেখানেই সবাই মিলে আনন্দ করি। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করি। আর আমি খেতে খুব ভালোবাসি। নবমীর দিন বাড়িতে আমি নিজের হাতে রান্না করি। কিন্তু সেই রান্না যারা খায়, তাদের কন্ডিশন থাকে, আমার রান্না খেয়ে সবাইকে ভালো বলতে হবে। এ ছাড়া পূজার কটা দিন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে কখনো বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে, কখনো বন্ধুদের বাড়িতে এনে সময় পার হয়ে যায়।
হিরণ
পূজার দিনে নিখাদ বাঙালি সাজতে ভালো লাগে এই টলিউড অভিনেতার। বললেন, সারা বছর তো জিনস আর শার্ট পরি, যা পরে পরে বোর হয়ে গিয়েছি। তাই পূজার চারদিন চার রকমের পোশাকে নতুনভাবে সাজতে চাই। সপ্তমীতে কুর্তা, পায়জামা। অষ্টমীতে পাঞ্জাবি আর ধুতি। নবমী আর দশমীতে পাঞ্জাবিতেই সাজতে চাই। তবে এবার পূজাতে আমার জন্মভূমি উলুবেড়িয়ায় গিয়ে কাটাব বলে ভেবে রেখেছি। সারা বছর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না। তাই পূজার ছুটিতে সেখানে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে স্রেফ আড্ডা দিতে চাই। এবার পূজার বিসর্জনের দিন অংশ নেব বলেও ভেবে রেখেছি। আগে তো ঢাকের তালে তালে নাচতাম। এখন অবশ্য আর হয়ে ওঠে না। তবে প্রতিমা দেখতে কলকাতায় ভিড় ঠেলে যেতে আমার কখনই ইচ্ছা করে না। বলতে পারেন, অত ভিড়ভাট্টা আমার পোষায় না।
কনিনীকা
পূজা মানেই নিজেকে রিচার্জ করার সময়। অন্তত এমনটাই মনে করেন টলিউডের এই অভিনেত্রী। পূজায় বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে আর ডায়েট ভুলে হৈ হৈ করে সময় কাটাতে চান। জানালেন, ছোটবেলায় পূজাতে অনেক জামা হতো। নতুন জামা পরে বাবা মায়ের সঙ্গে প্যান্ডেলে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখতাম। পূজার সময় তো পড়াশোনার বালাই থাকত না। সারা দিন ভাইবোন সবাই মিলে হৈ চৈ করে কাটিয়ে দিতাম। অবশ্য বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সব দিনগুলো কেমন পালটে গিয়েছে। এখন পূজায় অষ্টমীর দিন মা ও বোনের সঙ্গে অঞ্জলি দিতে যাই। এখন আমার পূজার দিনগুলো শুধুই পরিবারের। পূজাতে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন শাড়ি পরব। শাড়ি ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারছি না। আর তা ছাড়া শাড়ি পরতে আমার এমনিতেই ভালো লাগে। বাঙালির পূজায় শাড়ি ছাড়া আর কিছুতেই মানায় না। আর পূজার সময় স্রেফ মায়ের হাতের রান্না খেতে চাই। অষ্টমীর দিন বাড়িতে নিরামিষ হয়, আর নবমীতে জমিয়ে মাংস। আপাতত সেটাই খাওয়ার প্ল্যান রয়েছে। আর পূজায় কলকাতা ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়ার প্রশ্নই নেই।
অঙ্কুশ
এ বছর পূজাটা বাড়িতে বসেই কাটিয়ে দিতে চান টলিউডের এই অভিনেতা। বললেন, দুর্গা প্রতিমা আমি খুব একটা দেখতে যাই না। অঞ্জলিও দেই না। এ বছর অনেকগুলো দুর্গা প্রতিমার উদ্বোধন রয়েছে হাতে। ফলে এমনিতেই ঠাকুর দেখা হয়ে যাবে। ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখার ব্যাপারে আমার কোনোকালেই উৎসাহ ছিল না। আগে তো পূজার কটা দিন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে কেটে যেত। বন্ধুদের বাড়িতেই খাওয়াদাওয়া চলত। এখন অবশ্য আর সেটা হয় না। এ বছর তো ষষ্ঠী পর্যন্ত ‘সিঁদুরখেলা’র শুটিং চলবে। পূজা শেষ হলে ফের শুটিং। মাঝে মাত্র পূজার চারদিন ছুটি। তাই ওই চারদিন স্রেফ বিশ্রাম নিয়ে কাটাতে চাই। আর এ বছর পূজায় নতুন শার্ট বা জিনস কিছুই কিনিনি। আসলে আমার টাইট জিনসের ব্যাপারে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড আছে। তার বাইরে গিয়ে অলটপকা কেনাকাটা করিনি।
অরুণিমা ঘোষ
আমার কাছে দুর্গাপূজা মানে কলকাতাই সেরা। পূজার কটা দিন আমার দারুণ কাটে। তবে ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখতে আমার ভালো লাগে না। ছোটবেলায় অবশ্য পূজা ছিল অন্যরকম। পূজায় অনেক ক্যাপ ফাটাতাম। মামাবাড়ি যেতাম, আর পূজাতে পড়াশোনা থাকত না বলে পূজাটাই হয়ে যেত মহা আনন্দের। তবে এখন পূজায় আনন্দের ধরন অনেক পালটে গেছে। পূজার সময় কিছু কাজ ছাড়া আমি বাড়িতেই থাকি। বাড়িতেই আত্মীয়-স্বজনরা আছেন। ওদের সঙ্গেই সারা দিন আড্ডা আর খুনসুটি করে সময় পেরিয়ে যায়। পূজার কটাদিন বাড়িতে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া হয়। আমার ফেবারিট খাবার হলো বিরিয়ানি আর চাপ। তাই পূজার চারদিন রাতে আমি বিরিয়ানি আর চাপ খাবই। সেই সঙ্গে মিষ্টি আর আইসক্রিম তো থাকবেই। বলতে পারেন, পূজার সময় খাওয়াদাওয়া লাগামছাড়া। প্রতিবছরই আমি পূজায় অনেক শাড়ি পাই। তবে সেগুলো একটাও আমি পূজায় পরতে পারি না। কারণ, তখন আর শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজের অর্ডার নেয় না দোকানদার। তবে এখন থেকে ভাবছি পূজায় সালোয়ার নেব।
বিক্রম
‘ইচ্ছে নদী’ ধারাবাহিকের জনপ্রিয় মুখ বিক্রম। এবার পূজায় কলকাতায় থাকছেন না তিনি। জানালেন, বন্ধুদের সঙ্গে পূজায় হিমাচল প্রদেশের কাসৌলে যাচ্ছেন। সেখানেই ২৫ তারিখ পর্যন্ত কাটিয়ে আসবেন। তবে পূজার সময় কলকাতায় থাকলেও পূজায় ঠাকুর দেখতে খুব একটা বের হন না তিনি। পরিবারের লোকদের সঙ্গেই সময় কাটান। বিক্রমের পূজার পোশাক আলাদা বলতে তেমন কিছুই নেই। বাবা-মা আর আত্মীয়স্বজনের দেওয়া পোশাকই তাঁর পূজার পোশাক। তবে পূজার সময় অষ্টমীতে বরাবরই পাঞ্জাবি পরতে ভালোবাসেন বিক্রম। আর পাড়ার প্যান্ডেলে ঘোরাঘুরি করেই সময় কাটে। তবে এবার অন্তত আর সেই সুযোগ থাকছে না। বললেন, কলকাতা ছেড়ে এবার পূজায় এমন জায়গায় যাচ্ছি যেখানে হয়তো ঢাকের শব্দও শোনা যাবে না।
শ্রীলেখা মিত্র
বললেন, দিন দিন বয়স বাড়ছে তাই পূজার এক্সাইটমেন্টটাও আর আগের মতো নেই। আগে যেমন সারা রাত জেগে ঠাকুর দেখতাম, নতুন জুতো পরে পায়ে ফোসকা পড়ে যেত, এখন সেসব অতীত। এখন পূজার সময় পূজা প্যান্ডেলের ওপেনিং আর জাজমেন্ট করে অর্ধেক দুর্গাপূজা কেটে যায়। এ ছাড়া বাকি সময় বাড়িতে বসে টিভিতে ঠাকুর দেখি। আসলে সারা বছর এত কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে থাকি যে, পূজার কটা দিন একদম নিজের মতো করে রিলাক্স করতে ইচ্ছে করে। ছোটবেলায় পূজার সময় প্রেম তো অনেক হতো। তবে সেই সব প্রেম পঞ্চমী, ষষ্ঠীতে শুরু হয়ে দশমীতে শেষ হয়ে যেত। এখন সেসব ভেবে বেশ ভালো লাগে।