আন্দোলন করে অধিকার আদায় করতে হবে : শাহজাহান ওমর
আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে কোনো কিছু দাবি করে লাভ নেই উল্লেখ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেছেন, ‘আন্দোলন সংগ্রাম করে বিএনপির অধিকার আদায় করতে হবে। সেই অধিকার হবে এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা।’
শাহজাহান ওমর বলেন, আওয়ামী লীগ কখনই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। সেই ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ বিনা ভোটে নির্বাচনের বীজ বপন করেছিল।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শনিবার বিকেলে খুলনা মহানগরে আয়োজিত বিএনপির মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলে সরকারের চেষ্টা প্রসঙ্গে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘সেদিন বেশি দূরে নয়, আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানের নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলবে। আওয়ামী লীগ একটি শরণার্থী দল। তারা ভারতের শরণার্থী শিবিরে গিয়ে রেশন খেয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেজেছে। আর জিয়াউর রহমান শুধু কালুরঘাটে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে খ্যান্ত হননি, তিনি হালুয়াঘাটে যুদ্ধ করেছেন। পরবর্তীতে তাঁর নেতৃত্বে সিলেট মুক্ত করা হয়েছে। তিনি জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। আজ তাঁর খেতাব বাতিলের দুঃসাহস দেখায় আওয়ামী লীগ।’
১৯৭৩ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে জ্যেষ্ঠ এ বিএনপি নেতা বলেন, ‘সেদিন কুমিল্লায় ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশিদকে পরাজিত করার জন্য শেখ মুজিব ভোটের বাক্স ঢাকায় এনে খোন্দকার মুশতাক আহমেদকে এমপি বানিয়েছিলেন। আজ শেখ হাসিনাকে বলব, আপনি যাদের বিনা ভোটে এমপি বানাচ্ছেন, তারাই একদিন আপনার সঙ্গে বেইমানি করবে।’
দেশের বর্তমান অবস্থা বিবরণ দিয়ে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘পত্রিকার পাতায় আজ দেখি—ধর্ষণ, ব্যাংক থেকে টাকা লুট, অর্থপাচার, ক্যাসিনোকাণ্ড ও ইয়াবা-গাঁজার খবর। তাই এখন মানুষ বলছে আওয়ামী লীগ মানে ধর্ষণ লীগ, ক্যাসিনো লীগ, পাচার লীগ ও ইয়াবা-গাঁজা লীগ। পুরাতন মুসলিম লীগের নাতি-পুতিরা আওয়ামী লীগে যোগ দিলে হয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার মুক্তিযোদ্ধা আর আমরা রণাঙ্গনে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, তারা অন্য দলে থাকলে হয়ে যাচ্ছি রাজাকার।’
‘আগামীতে আপনাদের খেসারত দিতে হবে। তাই আসুন আর দেরি নয়, সংগ্রামের মাধ্যমে এই সরকারের পতন নিশ্চিত করে একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু করি।’—বলেন শাহজাহান ওমর।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয় আজ দুপুর আড়াইটার দিকে।
সমাবেশের বিশেষ অতিথি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এই বছর হবে সরকার পতনের বছর, এই বছর হবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা গ্রহণের বছর, এই বছরই হবে দেশনায়ক তারেক রহমানের দেশে ফেরার বছর। আওয়ামী লীগের নেতারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। জনগণের প্রতিটি পয়সার হিসাব দিতে হবে তাদের।’
বিশেষ অতিথি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘জোয়ার দেখেছেন, ভাটা দেখেন নাই। এবার ভাটা দেখার জন্য প্রস্তুত থাকুন।’
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক হুইপ মশিউর রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মুজিবর রহমান সরোয়ার, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরাজিত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, ঢাকা দক্ষিণের ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, মেহেদী হাসান রুমীসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলার কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মুজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘দেশে আজ গণতন্ত্র নাই, এই সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে।’
রাজশাহীর সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘ভোটচোরদের আর বিশ্বাস করা যাবে না। আমরা চাই নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই সরকার অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়।’
চট্টগ্রামের পরাজিত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ইভিএম এমন একটা মেশিন যে মেশিনে ধানের শীষে ভোট দিলে নৌকায় ভোট চলে যায়। আর আওয়ামী লীগে রাজাকার গেলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যান।’
ঢাকার উত্তর মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়াল বলেন, ‘এই সরকার মাফিয়া সরকার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।’
ঢাকা দক্ষিণের পরাজিত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘এই সরকারের আমলে হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ মহামারিতে পরিণত হয়েছে।’
সমাবেশের অনুমতি মেলেনি
খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত আজ শনিবারের মহাসমাবেশ করার জন্য দলের পক্ষ থেকে চারটি স্থানের জন্য দুটি আবেদন করা হয়। মৌখিকভাবে আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত কোনো স্থানে অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তবে গতকাল শুক্রবার রাত ৮টার পর থেকে পুলিশ কেডি ঘোষ রোডস্থ বিএনপির কার্যালয় ও তার আশপাশে পুলিশ সিসি ক্যামেরা লাগায়। তখন অনেকে মনে করেছিল বিএনপির সমাবেশ হয়তো দলীয় কার্যালয়ের সামনে করতে দেওয়া হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো অনুমতি মেলেনি। তারপরও দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুল নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশ করে বিএনপি। আর এই সমাবেশের দুই পাশ দিয়ে পুলিশ ব্যারিকেড গড়ে তোলে।
সমাবেশকে ঘিরে পুলিশের নজরদারি
খুলনা নগরী আজ ছিল পুলিশের দখলে। আগের দিন রাতে মানুষ আশা করেছিল শেষ মুহূর্তে হলেও প্রশাসন বিএনপির সমাবশের অনুমতি দিতে পারে। কিন্তু সে আশা শেষ হয় আজ সকাল থেকে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ রণসজ্জায় সজ্জিত থাকে। এর আগে সব ধরনের পরিবহণ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিন চাকার ছোট পরিবহণগুলো নগরীতে সীমিত আকারে চলতে শুরু করলে পুলিশ থেমে থেমে সেগুলো বাধা দেয় এবং উল্টো রুটে ঠেলে দেয়। তখন সাধারণ যাত্রীরা ভোগান্তির কবলে পড়ে। এ ছাড়া নগরীর সদর থানা মোড়, ডাকবাংলা মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, শিববাড়ী মোড়, ফেরিঘাট মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অস্থায়ী ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। আজ দুপুরের আগ থেকে পিকচার প্যালেস ও ডাকবাংলা মোড়ে চেকপোস্ট বসায়। কোনো পথচারীকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে যেতে দেওয়া হয়নি। সমাবেশ শুরুর আগে ঢাকা উত্তর সিটির পরাজিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়াল কয়েকজন সহযোগী নিয়ে সমাবেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে। এ সময় তাবিথ আওয়ালের এক সহযোগীকে পুলিশ আটক করলেও পরে অন্য কর্মীরা তাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়।
দুপুরের খাবার খেতে পারেননি অতিথিরা
বিএনপির সমাবেশে আগত ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ খুলনা বিভাগের অতিথিরা দুপুরের খাবার খেতে পারেননি। অতিথিদের জন্য প্রস্তুত রাখা একটি হোটেল আগে থেকে পুলিশ তালা মেরে দেয়। সেখানে কেউ বিশ্রাম নিতে পারেননি। অগত্যা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সমাবেশ করেন নেতারা।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘পুলিশের শত বাধা উপেক্ষা করে জনগণের বিজয় হিসেবে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।’ তিনি এই বিজয়কে জনগণের বিজয় বলে উল্লেখ করেন।