প্রধানমন্ত্রীকে ব্যতিক্রমধর্মী নৌকায় চড়াতে চান ইউছুফ
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার যাত্রী নিয়ে সড়ক পথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী এক নৌকা। যেটি নির্দ্বিধায় সড়ক পথে কিংবা পানিতে চলতে পারে।
এটিতে আছে গাড়ির মতো স্টিয়ারিং, আবার নদীতে চলার জন্য পেছনে রয়েছে দুটি পাখা। নৌকাতে উঠার জন্য রয়েছে বিমানের আদলে সিঁড়ি। রয়েছে গিয়ার, ফলো ক্যামেরা, হেডলাইট, ইন্ডিকেটর, এসিফ্যান, মিটার বোর্ড, হর্ন আর ২৪ জন যাত্রী বসার সুব্যবস্থা। পাটাতনে আছে ছাউনি। ব্যতিক্রমী এ উভচর নৌকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চড়াতে চান নৌকার কারিগর ইউছুফ।
জল ও স্থলে চলা উভচর এ যানটির নাম ‘জলডাঙা মুজিব পরিবহন’। বাহিরে জাতীয় কয়েকটি প্রতীকের সঙ্গে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি আঁকা এমন ব্যতিক্রমধর্মী নৌকা বানিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের পূর্ব চর কলাকোপা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে নৌকা তৈরির কারিগর মো. ইউছুফ।
গত ১৫ মার্চ নিজ গ্রামেই উদ্বোধন করা হয় জলডাঙা মুজিব পরিবহনটির। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে যাত্রী নিয়ে সড়ক পথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয় ভিন্ন এ নৌকা।
ইউসুফের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রী অন্তত একবার চড়ে নৌকাটি দেখবেন।
জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার কারণে মুজিব জন্মশতবর্ষে উপহারটি দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন দিনমজুর মো. ইউসুফ। কিন্তু মহামারি করোনা আর আর্থিক সংঙ্কটের কারণে প্রধানমন্ত্রীকে সময়মতো উপহারটি দিতে পারেননি।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার সুবাদে এই নৌকার নামকরণ করা হয়েছে ‘জলডাঙ্গা মুজিব পরিবহন’।
এই নৌকা তৈরিতে ইউসুফকে সহযোগিতা করেন স্থানীয় মো. করিম ও মো. আলাউদ্দিন।
স্থানীয়রা জানায়, ইউছুফ ২০১৯ সাল থেকে কিছু কাঠ দিয়ে শুরু করেছিলেন নৌকাটি নির্মাণের। দিনের বেলায় নিজের কাজ শেষে রাত জেগে তৈরি করেছিলেন নৌকা।
ইউসুফ বলেন, ‘সর্বপ্রথম বাবা আমাকে ৫০ হাজার টাকা হাতে তুলে দিয়ে নৌকা তৈরির জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। পাশাপাশি আমার স্ত্রীও সব সময় নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।’
ইউসুফের আশা প্রধানমন্ত্রী তাঁর নৌকাটিতে চড়বেন বা দেখবেন।
ইউসুফের বাবা আবুল কালাম জানান, ১৯৭০ সালের বন্যার পরে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা গুচ্ছগ্রামে আসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই সময় তাঁর বাবা মাটি কেটে ওই কিল্লা স্থাপনে সহযোগী ছিলেন। বাবার মুখে বঙ্গবন্ধুর কথা শুনে সেই থেকে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসেন তিনি। কিন্তু তাঁর ভালোবাসা নিজের ছেলের মাধ্যমেই পূরণ করতে চাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানায়, সারা জীবন মানুষের নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত ছিল মো. ইউসুফ মিস্ত্রী ও তাদের পরিবার। নিজেদের কোনো নৌকা না থাকলেও স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার নিয়ে নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছেন এ নৌকা তৈরিতে।
ইউসুফ জানান, ওইদিনই তাঁর স্বপ্ন আর কষ্ট স্বার্থক হবে যদি প্রধানমন্ত্রী তাঁর বানানো নৌকাটি ছুঁয়ে দেখেন। সেজন্য সবার সহযোগিতা চান তিনি।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল মোমিন বলেন, ‘ইউছুফ নামের এক যুবক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দীর্ঘ তিন বছর ধরে পরিশ্রম করে একটি উভয়চর নৌকা বানিয়েছেন। এই নৌকাটি তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়ার আশা করেছেন। আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি।’