ফেসবুক লাইভে এসে যা বললেন মামুনুল হক
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টের ঘটনায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বক্তব্য দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। শনিবার রাতে নিজের ফেসবুকে লাইভ করে বক্তব্য দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলো:
আসসালামু আলাইকুম, দেশ ও প্রবাস থেকে এই মুহূর্তে আমার ফেসবুক লাইভে যারা যুক্ত আছেন দেশবাসী, গণমাধ্যমকর্মী ভাইয়েরা। এই মুহূর্তে দেশে একটি বিষয় নিয়ে অনেকের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে, অনেক বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়েছে। সেই বিভ্রান্তির অপনোদন (দূরকরণ) এবং প্রকৃত ঘটনার বিবরণ তুলে ধরতে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
আমরা এই মুহূর্তে পারিবারিকভাবে এই লাইভ করছি। আমার সঙ্গে উপস্থিত আছেন আমার বড় ভাই জনাব হাফেজ মাহমুদুল হক সাহেব, আমার মেঝ ভাই মাওলানা মাহবুবুল হক, উপস্থিত আছেন রিফাদুল মাদারেসুল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব হজরত মাওলানা মাহফুজুল হক সাহেব।
আমরা পারিবারিকভাবে যে বিষয়টি মিডিয়ার সামনে তুলে ধরার জন্য এখানে এসেছি, আশা করছি এ বক্তব্যের পর এ বিষয় নিয়ে আর কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না। এবং ভিন্ন কোনো বক্তব্য আর কেউ দেওয়ার চেষ্টা করবে না।
আজকে যে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে, যে আমি বেশ কয়েকদিন টানা রাতদিন পরিশ্রমের কারণে অনেকটাই হাপিয়ে উঠেছিলাম। তাই বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল। তো বিশ্রামের জন্য আমি ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের দর্শনীয় স্থানে গিয়েছিলাম। সঙ্গে আমার স্ত্রী ছিলেন।
আমার স্ত্রীর পরিচয় নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। ওখানে যে ছিলেন, তিনি আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। এবং তাঁর সাক্ষী-সুবত নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়া শুরু করেছিল। ওখানে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তা সম্ভবত একজন সার্কেল এএসপি ছিলেন, জনাব মোশারফ সাহেব। তিনি আমার কাছ থেকে যাবতীয় বিষয়ের বিবরণ শোনেন এবং তথ্য-প্রমাণ যাচাই করে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত হন।
যিনি আমার সঙ্গে ছিলেন তিনি আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আমার সহকর্মীর সাবেক স্ত্রী। তাঁর সঙ্গে তাঁর আড়াই বছরের কলহের জের ধরে, তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। সেই সূত্র ধরে আমি একান্ত পারিবারিকভাবে আমার ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধু-বান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে, তাদের উপস্থিতিতে আমরা বিবাহ বন্ধনের ব্যবস্থা করি। এবং এই বিবাহের মাধ্যমেই তিনি আমার বিবাহিতা শরিয়তসম্মত স্ত্রী। এবং আমার এ বক্তব্যে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সন্তুষ্ট হয়েছেন।
কিন্তু সেখানে স্থানীয় কিছু সংবাদকর্মীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় কিছু যুবলীগ এবং সরকার দলীয় কিছু লোক আমার সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন। এবং লাইভ ভিডিও ধারণ করে সেখানে তারা সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা এবং আক্রমণ চালিয়েছেন।
এ বিষয়গুলো যখন তারা লাইভ ভিডিও সম্প্রচার করেছেন, দেশবাসী জেনেছে। এবং আমার সেখানকার বক্তব্য দেশের মানুষ শুনেছে। আমার বক্তব্য শুনে এবং আমার পারিবারিক ও স্ত্রীসহ পরিচয় তুলে ধরার পর, সেটা ভাইরাল হয়। এবং স্থানীয়ভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উপস্থিতি টের পেয়ে আমাকে তারা উদ্ধার করার জন্য সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। তারা উত্তেজিত অবস্থায় সেখানে ছুটে যায়। আমি তৎক্ষণাৎ জনতাকে শান্ত করার জন্য চেষ্টা করি। শেষ পর্যন্ত আমি জনতাকে নিয়ে সেখান থেকে স্থান ত্যাগ করি। কিছুটা উত্তেজিত অবস্থায় তারা ভাঙচুর করে।
এই ঘটনা আমার পরিবার জানে, আমার অভিভাবকরাও জানে। এবং সেখানে উপস্থিত পুলিশের কর্মকর্তাও আমার পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হন। কাজেই এ বিষয় নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তিমূলক কোনো কথা যেন কেউ প্রচার না করে। আমার আহ্বান থাকবে, আপনারা কোনো অবস্থাতে কোনো উত্তেজিত আচরণ করবেন না। শান্ত-শিষ্ট থাকবেন এবং জানমালের কোনো ক্ষতি হয় এ ধরনের কোনো আচরণ আপনারা করবেন না।
এটা আমার অফিসিয়াল বক্তব্য আমার নিজস্ব আইডি থেকে উপস্থাপন করলাম। কোনো ধরনের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে কোনো ধরনের কোনো সংঘাত সৃষ্টি হয়—এ ধরনের আচরণে আপনারা কেউ লিপ্ত হবেন না।’
এর অাগে শনিবার সন্ধ্যায় অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্ট থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন স্থানীয় লোকজন ও মাদ্রাসার ছাত্ররা বিকেলে রয়েল রিসোর্টে মামুনুল হকের অবস্থানের খবর পেয়ে স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনও সেখানে উপস্থিত হয়। এ ঘটনা ফেসবুকে লাইভ করেন কয়েকজন ব্যক্তি। ওই লাইভ দেখে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর স্থানীয় লোকজন ও মাদ্রাসার শত শত ছাত্র ওই রিসোর্ট গিয়ে মামুনুল হককে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। বের হয়ে এসে মামুনুল হক জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
এ নিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় কিছু লোক মাওলানা মামুনুল হককে রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে অবরুদ্ধ করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ সময় মামুনুল হক তাদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে রিসোর্টে আসেন। স্ত্রীর নাম আমেনা তৈয়বা। শরিয়ত অনুযায়ী তিনি দুই বছর আগে আমেনাকে বিয়ে করেন। এ বিষয়ে তাঁর কাছে প্রমাণ রয়েছে।
ফেসবুক ভিডিওতে দেখা যায়, মামুনুল হক প্রশ্নের জবাবে বলছেন, ‘আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, উনি আমার স্ত্রী। আমি শরিয়ত মোতাবেক বিবাহ করেছি। আমি সব ধরনের প্রমাণ দেব। আমি কোনো দুর্বলতা নিয়ে এখানে আসি নাই। আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে রিফ্রেশমেন্টের জন্য এখানে বেড়াতে এসেছি। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের লোকবল আমাকে হেনস্তা করেছে।’
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক বলেন, ‘আজ (শনিবার) দুপুরে স্ত্রীকে নিয়ে সোনারগাঁয়ে যাই। জাদুঘর ঘুরে দেখে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এখানে (রিসোর্টে) আসি। আমার বক্তব্য পরিষ্কার, আমরা এখানে একটু রিফ্রেশমেন্টের জন্য এসেছিলাম। ... এখানে অনেক উচ্ছৃঙ্খল লোক এসেছে। আপনারা দেখেছেন। আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। নিরাপত্তার জন্য তাঁকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে স্থানীয় লোকজন এলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।