যে কারণে মামুনুল হকের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী এই আদেশ দেন।
এর আগে আজ সকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাজেদুল ইসলাম আসামিকে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড আবেদনে যা আছে
গত বছরের ৬ মার্চ রাত ৮টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর সাত গম্বুজ জামে মসজিদে বাদী জি এম আলমগীর শাহীন আমল করতে যান। সে সময় আসামি মাওলানা মো. মামুনুল হক ও তাঁর ভাই মোহতামিম মাহফুজুল হকের নির্দেশে জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার (সাত মসজিদ মাদ্রাসা) ছাত্র ওমর ও ওসমান দুজনে এসে বাদী জি এম আলমগীর শাহীনসহ তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যদের আমল করিতে নিষেধ করে।
আরও বলা আছে, আসামিরা বাদীসহ তাঁর সহযোগীর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে ও মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৬ মার্চ ৮টা ৪০ মিনিটে আসামি ওমর, ওসমান, শহিদ, মাওলানা আনিস এবং জহির মসজিদের মধ্যে এসে বাদীর সঙ্গে থাকা মো. আসাদুর রহমান, আব্দুল মোতালিব, মিজানুর রহমান, আলী মোর্শেদ, ইয়াকুব আলী, শফিক, আরব রহমান, হাজি ইউসুফ বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকে।
রিমান্ড আবেদনে বলা আছে, বাদী তাদের রক্ষা করতে গেলে আসামি জহির বাদীকে মারধর করতে থাকেন। এরপর উক্ত আসামি মাওলানা মো. মামুনুল হক ও তাঁর ভাই অত্র মামলার ৬ নম্বর আসামি মোহতামিম মাহফুজুল হকদ্বয়ের নির্দেশে মাদ্রাসার আরও প্রায় ৭০/৮০ জন ছাত্র মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে বাদীকে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। তারা বাদীকে মারধর করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। ওমর ও ওসমান তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে বাদীকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। আসামি ওমরের লাথির আঘাতে বাদীর বাম চোখে গুরুতর জখম হয়। আঘাতের কারণে বাদী মসজিদের ভেতরে শুয়ে পড়ে।
আসামিরা বাদীর একটি মোবাইল, সাত হাজার টাকা এবং ২০০ ডলার, ব্র্যাক ব্যাংকের একটি ডেবিট কার্ডসহ বাদীর একটি মানি ব্যাগ নিয়ে যায়। পুনরায় মসজিদে প্রবেশ করলে বাদীসহ তার সঙ্গীদের হত্যা করবে বলে আসামিরা হুমকি দেয়। মাদ্রাসার মোহতামিম মাহফুজুল হক ও তাঁর তাই মাওলানা মো. মামুনুল হকের নির্দেশে তাদের সহযোগী অপরাপর আসামিরা বাদী ও তাঁর সঙ্গীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতসহ তাদের ওপর হামলা করে। হামলার পরে বাদীর সঙ্গে লোকজন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করে। উক্ত ঘটনায় অপরাপর আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ও চোরাইকৃত মালামাল উদ্ধার করতে আসামি মামুনুল হককে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।
এর আগে গতকাল রোববার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাঁকে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
গতকাল দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে অর্থাৎ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে বায়তুল মোকাররম মসজিদে নাশকতা ও তাণ্ডবের ঘটনার মামলার আসামি মামুনুল হক। এ তাণ্ডবের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে মামুনুল হক অন্যতম। শুধু তা-ই নয়, ২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরের ঘটনার মামলারও আসামি তিনি।’
তেজগাঁও বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানাধীন রয়েল রিসোর্টের ঘটনার পর মামুনুল হক ওই রাতেই ঢাকায় চলে আসেন। মোহাম্মদপুরে তাঁর বাসা থাকলেও তিনি সেখানে না গিয়ে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় অবস্থান করেন।