যমুনায় পানি বাড়ছে, বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে সিরাজগঞ্জবাসী
যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সিরাজগঞ্জবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। গত ২৯ জুন সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের পুরাতন জেলখানা ঘাট এলাকায় ১৫০ মিটার যমুনা নদীতে ধস নামার কারণে এই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ধস নামার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই স্থানে সংস্কার কাজ শুরু করেছে। বাঁধটি ভাঙন রোধে এখন আর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধে বার বার ধস নামার প্রকৃত কারণ নিয়েও খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ড রয়েছে বিভ্রান্তিতে।
এদিকে, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় পানি বেড়েছে ৩৮ সেন্টিমিটার। এ অবস্থায় বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে রয়েছে সিরাজগঞ্জবাসী।
সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষায় ভাঙন ঠেকাতে প্রথমে ব্যবস্থা নেওয়া হয় ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে। তারপর থেকে দীর্ঘ ৮০ বছরে নানাভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে ভাঙন ঠেকাতে। কিন্তু, যমুনা পশ্চিম দিকে অগ্রসর বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হলেও তাতে বার বার ধস নামে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, একশ বছরে যমুনা নদীর গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে এই হার্ডপয়েন্ট নির্মাণ করা হয়েছিলো। আগামী একশ বছরের স্থায়িত্ব নির্ধারণ করে এই বাঁধের নকশা প্রণয়ন করা হয়েছিল। কিন্তু সে পরিকল্পনা সফল হয়নি। মূলত এই বাঁধটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
সূত্রের খবর, সে সময় যমুনা নদীর তলদেশের গভীরতা, ঘূর্ণাবর্ত ও ভাঙনের যে পরিসংখ্যান রাখা হয়েছিল, বর্তমানে তা নেই। প্রতিনিয়ত যমুনা নদীর গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন হচ্ছে। নদীর তলদেশে গভীরতা বাড়তে থাকায় বাঁধে ধস নামে। যেকোনো মুহূর্তে নতুন ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের সচেতন মানুষ তাদের প্রিয় শহর রক্ষা করতে এই বাঁধটির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। এজন্য তাদের দাবি, নতুন প্রযুক্তিতে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের।
বাঁধটি নির্মাণের ১২ বছর পর ২০০৯ সালে প্রথম দফা বাঁধে ধস শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করে—নির্মানকালীন ডিজাইনে ত্রুটির কারণে বাঁধে ধস নামে। এরপর ২০১০ সালের ১০ জুলাই প্রথম দফা, ১৭ জুলাই দ্বিতীয় দফা এবং ২০১১ সালে ১৮ জুলাই বাঁধটিতে আবারও ধস নামে। সর্বশেষ গত ২৯ জুন বাঁধের ১৫০ মিটার ধস নেমে নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পশ্চিঞ্চলের প্রধান (রাজশাহী) প্রকৌশলী এ কে এম শফিকুল হক বলেন, সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ ভাঙনের কারণ খুঁজে পাচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা ছিল না। থাকলে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতাম। যমুনা নদী কখন কীভাবে ভাঙে, তা আগে থেকেই বলা যাবে না। তবে, আমাদের প্রস্তুতি আছে কোনো জায়গায় ভাঙলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার। সুনামির মতো কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। সার্ভের রিপোর্ট পাঠিয়ে আমরা কারণ উদ্ঘাটন করব। তারপর আমরা বলতো পারব। এটি আকস্মিক ভাঙন। ভাঙনের পর পর জিও ব্যাগ ও ব্লক দিয়ে বাঁধ রক্ষা করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে ৮০ কিলোমিটার নদী পথ রয়েছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিনিয়ত যমুনার তলদেশে সার্ভে করা হচ্ছে। কোথায় সমস্য দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শহরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’