লক্ষ্মীপুরে ধীরগতিতে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
লক্ষ্মীপুরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। গত পাঁচ দিনে প্রায় পাঁচ ইঞ্চি পানি কমেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে ধীরগতিতে পানির কমার কারণে শঙ্কিত সবাই। ফের বৃষ্টি হলে পানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করছে দুর্গত লোকজন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসেব মতে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট স্লুইস গেট দিয়ে যে পানি মেঘনায় নেমেছে, তাতে এর উচ্চতা ২৫ সেন্টিমিটার কমেছে।
এদিকে বন্যার পানি কমে গেলেও জেলাবাসীকে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতার কবলে থাকতে হবে। কারণ খাল-বিল দখল ও নানা প্রতিবন্ধকতা থাকায় পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। দ্রুতই পানি নামার কোনো উপায় দেখছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্যদিকে পানি কমতে শুরু করলেও কোথাও দুর্ভোগ কমেনি, বরং বেড়েছে। খাদ্য সংকট, সুপেয় পানির অভাব, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, রান্না-বান্না নিয়ে চরম ভোগান্তিতে বন্যাদুর্গত লোকজন। বন্যায় শতভাগ ক্ষতি হয়েছে মৎস্য ও কৃষি খাতে। বন্যা ও বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়ক খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এতে এ সড়ক দিয়ে এখন আর ঢাকা রুটের গাড়ি চলে না। এ রুটের গাড়িগুলো রামগঞ্জ-চাটখিল হয়ে নোয়াখালীতে যাচ্ছে। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকার অভ্যন্তরীণ কাঁচাপাকা রাস্তাগুলোও চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে।
গত ২৩ আগস্ট থেকে জেলাতে প্রবল বেগে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করে। নোয়াখালী এবং ফেনী জেলার বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরের রহমতখালী খাল, ওয়াপদা খাল ও ভূলুয়া নদী হয়ে পানির চাপ অতিমাত্রায় বাড়তে থাকে। তখন থেকেই মূলত বন্যার ভয়াবহতা শুরু হয়। এর আগে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভারী বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। একদিকে ভারী বর্ষণ, অন্যদিকে উজানের ঢলের পানি, সব মিলিয়ে পানির উচ্চতা দ্রুত গতিতে বেড়ে গিয়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জেলার প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে আছে। তবে মেঘনা নদী সংলগ্ন কয়েকটি এলাকায় বন্যার পানি তেমন লক্ষ্য করা যায়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, পানি নামছে। তবে ধীর গতিতে। বৃষ্টি না হলে এবং বন্যাকবলিত পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে পানি না এলে পরিস্থিতি আরও উন্নতি হবে বলে আশাবাদী তিনি। মেঘনার পানি অনেক নিচে। কিন্তু খাল দিয়ে ঠিকমতো পানি নামতে পারছে না। বিভিন্ন স্থানে পানি প্রবাহ বন্ধ করে স্থাপনা বা রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে এগুলো করা হয়নি। যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ এবং রাস্তাঘাট করতে হলে পানি প্রবাহ ঠিক রেখেই করতে হয়। লোকজনের মধ্যে সচেতনতা ছিল না। এ মুহূর্তে এগুলো অপসারণ করতে হলে প্রয়োজন সকলের সমন্বিত উদ্যোগ।