বরিশাল শান্ত, আপাতত বিজিবির দরকার নেই : বিভাগীয় কমিশনার
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল বলেছেন, ‘বরিশালের পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। এই মুহূর্তে বিজিবি নামানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে যদি প্রয়োজন হয় এজন্য বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে।’
এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-দক্ষিণ) আলী আরশাদ বলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পৃথক মামলায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
আজ শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে জনজীবন স্বাভাবিক দেখা গেছে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থানে রয়েছে পুলিশ, পাশাপাশি টহল দিচ্ছে র্যাব।
অপরদিকে, মেয়রের ওপর হামলার ঘটনায় আজ শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে সদর উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া বাবুগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
ইউএনও করা মামলার অভিযোগে জানা যায়, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের পক্ষে লাগানো ব্যানার, ফেস্টুন রাতের আঁধারে ছিঁড়ে ফেলায় বাধা দিতে গেলে গত বুধবার রাতে তাঁর সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন আনসার সদস্য আহত হন। ছাত্রলীগের দাবি, এ সময় তাঁদের অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন।
এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শোকের মাসে পরিকল্পিতভাবে একটি শহরকে অশান্ত করতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ইউএনওর বাসায় কেউ হামলা করেনি। এটি পরিকল্পিত ঘটনা। এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার। গত বুধবার রাতের ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল ভোর সাড়ে ৫টা থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়।
ইউএনও ও পুলিশের করা দুটি মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে। তাঁর নির্দেশে হামলার ঘটনা ঘটে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া মামলাগুলোতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৯৪ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরুল ইসলাম।
সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে গুলিবর্ষণের অপরাধে পুলিশের করা মামলার বাদী উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজালাল মল্লিক। অপর মামলার বাদী বরিশাল সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমান।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাইয়েদ আহম্মেদ মান্না, বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, আতিকুল্লাহ মুনিম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব হোসেন খান, মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা অনিক সেরনিয়াবাত, রইজ আহম্মেদ মান্না প্রমুখ।
গতকাল বুধবার রাতে বাসভবনে হামলার ঘটনায় ইউএনও মুনিবুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৭০ থেকে ৮০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই শাহজালাল মল্লিক বাদী হয়ে পৃথক আরেকটি মামলা করেন।