ফ্যাশন শো
নারীত্বের উদযাপন, ভিক্টোরিয়া সিক্রেট
এই শোর প্রতীক্ষা থাকে গোটা বছর, যত দিন যায় ততই এই শোকে ঘিরে বাড়তে থাকে কৌতূহলের পারদ। মুখিয়ে থাকেন মডেলরা পরী হওয়ার জন্য। পাঠক এরপর নিশ্চয়ই আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই কী নিয়ে কথা হচ্ছে। ঠিকই ধরেছেন। ভিক্টোরিয়া সিক্রেটের ফ্যাশন শো। বছরের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী রানওয়ে শো। ১০ নভেম্বর নিউ ইয়র্কের লেকজিনটন আর্মারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৫ সালের আসর। এটা আসলে ঠিক ফ্যাশন শো নয়। বরং বলা যেতে পারে নারীত্বে উদযাপন। জম্পেশ আয়োজন, হিউম্যান হ্যাঙ্গারদের চটকদার শরীরী বিভঙ্গে অনিন্দ্য অন্তর্বাসের নান্দনিক উপস্থাপনা : রঙ, ডিজাইন, ফ্যাব্রিক আর আর প্রেজেন্টেশনের অবিরল চমক। ডানা কাটা আর ডানাওয়ালা পরীদের লাস্য-মৌতাত। সবমিলিয়ে এটা শো আদপে আদ্যান্ত সেলিব্রেশন। অবশ্য সে তো কেবল হাতে গোনা কিছু মানুষের জন্য। সারা পৃথিবীর তাই অপেক্ষা ছিল, যা শেষ হয়েছে ঠিক এক মাস পর। ৮ ডিসেম্বর সিবিএস টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছে ফ্যাশনের এই জমকালো আসর। পুনঃপ্রচার করা হবে ১৫ ডিসেম্বর।
আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত দুই তরুণী- কেন্ডাল জেনার আর গিগি হাদিদ। মডেল হিসেবে দ্যুতি ছড়িয়ে চলেছেন বেশ। রয়েছেন যথেষ্ট আলোচনায়। এই দুই উদ্ভিন্ন মডেলের অভিষেক হয়েছে এ বছরের ভিক্টোরিয়া সিকরেটের ভুবনমাতানো আসরে। এঁরা ছাড়া আরো আটজন মডেল প্রথমবার এই ব্র্যান্ডের অন্তর্বাস পরে র্যাম্পে হেঁটেছেন। এদের সঙ্গে পুরোনো পরীরা তো ছিলেনই- আদ্রিয়ানা লিমা, ক্যানডাইস সোয়ানপোল আর লিলি অলড্রিজ। এই শোর সবচেয়ে সিনিয়র ব্রাজিলের আদ্রিয়ানা লিমা হাঁটছেন সেই ১৯৯৯ সাল থেকে। ২০১০ সালে তিনি ফ্যান্টাসি ব্রা পরিহিত পরী হয়েছিলেন।
লিলি হেঁটেছেন এবারের ২০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের চোখধাঁধানো ফ্যান্টাসি ব্রা পরে। এই বক্ষবন্ধনীতে হীরে, নীল টোপাজ, হলুদ স্যাফায়ার, গোলাপি কোয়ার্তজ মায় ছিল সাড়ে ছয় হাজার মূল্যবান মণিকাঞ্চন- ১৮ ক্যারেট সোনায় খচিত। সঙ্গে ছিল আরো ৪০০ মণিমানিক্য আর ১২৬টি হীরে খচিত ম্যাচিং নিকারস।
কে না জানে এই ফ্যান্টাসি ব্রা পরতে পারাটাও এক অনন্য সম্মান। এর জন্যও প্রতীক্ষা থাকে মডেলদের। থাকে ভেতরে ভেতরে উৎকণ্ঠা আর ছদ্ম লড়াই। সবাই পরতে চান। তাই তো শিকে ছেঁড়ার অপেক্ষায় থাকতেই হয়। এই সৌভাগ্য এর আগে যেমন হয়েছে টায়রা ব্যাঙ্কস, জিজেল বুন্দসেনদের।
এখানে একটু মনে করা যেতে পারে সেই ১৯৯৫ সালে নিউইয়র্কের প্লাজা হোটেলে নিতান্ত সাদামাটাভাবে এই আসর শুরু হয়েছিল। দুই দশক পেরিয়ে ভিক্টোরিয়া সিক্রেট শো এখন বছরের মূল চমকের নামান্তর। বিশ্বের বলতে গেলে সব সুপার মডেলই গত ২০ বছরে কোনো না কোনো শোতে ভিক্টোরিয়া সিকরেটের অন্তর্বাস পরে র্যাম্পে পা মিলিয়েছেন। টানা চারবার প্লাজা হোটেল ভেনু থাকলেও পঞ্চমবার সরে যায় অন্যত্র। তবে নিউ ইয়র্কেই। ২০০১ সালে দেশান্তরি হয় কানে। এরপর মাঝেমধ্যেই পৃথিবীর কোনো না কোনো শহরে তাদের এই বার্ষিক আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বছর অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনে। এ বছর আবার ভিক্টোরিয়ার গ্লামারাস ক্যারাভান ফের ফিরেছে নিউইয়র্কে। এখানেই অবশ্য গত ২০ বছরে বেশির ভাগ শো হয়েছে। ১৯৯৮ সালে ভিক্টোরিয়া সেকরেটসর শোয়ে পাখা যোগ হয়। মডেলরা অন্তর্বাসের সঙ্গে পাখা পরে র্যাম্পে হাঁটেন।
নতুন হলেও ভিক্টোরিয়ার আসরে গিগি আর কেন্ডাল এবার দুই ধরনের অন্তর্বাসে দুইবার র্যাম্পে এসেছেন। এই শোর জন্য উভয়কেই দীর্ঘ অনুশীলনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। নির্দিষ্ট ডায়েট রেজিম তো ছিল। দুজনেই আর জাঙ্ক ফুডের পোকা। অবশ্য ভিক্টোরিয়ার পরী হওয়ার জন্য সব ত্যাগ স্বীকার করেছেন। নাটকীয় কস্টিউমে এ বছর আসর সূচনা করেন বেহাতি প্রিন্সলু। টানা দ্বিতীয় বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আসেন আলেসান্দ্রো অ্যামোব্রাসিও। তারপর আস্তে আস্তে অন্যরা। এবার অবশ্য থিম ছিল স্নো কুইন্স, ফায়ারওয়ার্ক আর কার্নিভাল।
রিহানা আপরগতা প্রকাশের পর এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের সুরের ভেলায় ভাসানোর দায়িত্ব নেন এলি গোল্ডিং, সেলেনা গোমেজ আর দ্য উইকেন্ড। শো শেষে আতশবাজির রংমশালে আলোকিত হয় চারপাশ। মার্থা হান্টের পরা একজোড়া আলোজ্জ্বলা পাখা আতশবাজির রোশনাইয়ের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায়।
এই শো-চমকের নেপথ্যে যে প্রতিষ্ঠান- ভিক্টোরিয়া সিকরেট তার ইতিহাসও চমকপ্রদ। জন্ম ১৯৭৭ সালে এক পুরুষের হাত ধরে। রে রেমন্ড, যিনি নিজের স্ত্রী গ্যায়ের জন্য অন্তর্বাস কিনতে গিয়ে বীতশ্রদ্ধ হয়েই শুরু করেন ভিক্টোরিয়া সিকরেট ব্র্যান্ড। সময়ের ব্যবধানে বিশ্বজুড়ে নারীত্ব উদযাপনের প্রধান অনুষঙ্গ হয়েছে এই ভিক্টোরিয়া সিক্রেট। হয়েছে ফ্যাশনেবল নারী তো বটেই ভুবনমোহিনীদের স্ট্যাটাস সিম্বল। বর্তমানে অন্তর্বাস, রাতপোশাক আর মিউজিক সিডি রয়েছে তার পণ্যতালিকায়। তার লনজারির একটি বিখ্যাত লাইন হলো অ্যানজেল। প্রচলন হয় ১৯৯৭ সালে। সেই থেকে ভিক্টোরিয়া সিকরেটের শো স্থান পায় অ্যানজেলরা। বিখ্যাত সব মডেলই হয়েছেন ভিক্টোরিয়া সিকরেট অ্যানজেল।
লেখক : সাংবাদিক ও লাইফস্টাইল প্রফেশানাল