ফেসবুকে ধর্ম ‘অবমাননা’র অভিযোগে রংপুরে বাড়িঘরে আগুন-লুটপাট
ফেসবুকের এক আইডি থেকে ধর্ম অবমাননা করা হয়েছে—এমন কথিত অভিযোগকে কেন্দ্র করে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের উত্তর করিমপুর কসবা মাঝিপাড়া গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ ওঠে রামনাথপুর ইউনিয়নের এক কিশোরের বিরুদ্ধে। পরে ঘটনাটি পীরগঞ্জ থানায় জানিয়ে ওই কিশোরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। এ নিয়ে ওই এলাকায় গতকাল রোববার বিকেল থেকে উত্তেজনা চলছিল। পরে সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পৌর মেয়র, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) ওই কিশোরের বাড়িতে অবস্থান নেয় পুলিশ। এর মধ্যে বিক্ষুব্ধ জনতাও ঘিরে ফেলে বাড়িটি। তবে, এর আগেই সপরিবারে পালিয়ে যায় ওই কিশোর। একপর্যায়ে গতকাল রাত ৯টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত ওই কিশোরের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে করিমপুর-কসবা-মাঝিপাড়া এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ ছাড়া ১৮টি ঘর ও একটি দোকানে দেওয়া হয় আগুন। বাড়ির সামনে এবং রাস্তার ধারের অনেক খড়ের গাদায়ও আগুন দেওয়া হয়। আগুনে পুড়ে যায় ঘরবাড়ি, দোকান, গবাদিপশু, ভ্যানসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। লুট করা হয় গরু, ঘরের আসবাবপত্রসহ মালামাল। আতঙ্কে অনেকেই আশ্রয় নেয় পাশের ধানখেতসহ বিভিন্ন জায়গায়। ভাঙচুর করা হয় মন্দিরের প্রতিমাও।
ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। পরে দিবাগত রাত ১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুরো ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে রাতভর উপস্থিত থাকেন জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপারসহ (এসপি) প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক করা হয় ২০ জনকে।
এদিকে, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আজ সোমবার সকালে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
রংপুরের এসপি বিপ্লব কুমার সরকার জানান, ১৫-১৬ বছরের কিশোরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র কেন্দ্র করে গতকাল সন্ধ্যার পরপর অসংখ্য লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং ওই কিশোরের বাড়িতে আক্রমণের জন্য সমবেত হতে থাকে। এ খবর পাওয়ামাত্রই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে পুলিশ ফোর্স এবং ইউএনও’র নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে আসে।
এসপি আরও বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠাই। পরে ডিসি সাহেব খবর পেয়ে তিনিসহ অন্যান্যরা আসেন। তখন আমরা সবাই মিলে ওই কিশোরের বাড়ির আশপাশের পরিবেশ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হই। মূল আক্রমণের স্থল, অর্থাৎ ওই কিশোরের বাড়ি আমরা রক্ষা করতে পেরেছি। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে আমরা কিছু নাম পেয়েছি, প্রায় ২০ জনের মতো ব্যক্তিকে আটকও করেছি। তারা আশপাশের যে গ্রামগুলো রয়েছে, সেখানে বিনা উসকানিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এ ছাড়া গবাদিপশু লুটপাট করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে, মন্দিরের প্রতিমাও ভাঙচুর করেছে। এটি ওই কিশোরের বাড়ি থেকে আধা বা এক কিলোমিটার দূরে। এতে বোঝা যায় এটি একেবারেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে করা হয়েছে।’