হামলার ঘটনায় ৭২ মামলা, ৪৫০ জন গ্রেপ্তার : পুলিশ
কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটা ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭২টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া, আরও মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
আজ বুধবার পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মোহাম্মদ শাহ জালাল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৭টায় কুমিল্লার সদর থানাধীন নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে মূর্তির পায়ের ওপর কে বা কারা পবিত্র কোরআন শরিফ রেখে চলে যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতকারী উসকানিমূলক ও বিকৃত প্রচারণা চালায় এবং পরবর্তীতে আরও উচ্ছৃঙ্খল দুষ্কৃতকারী সংঘবদ্ধ হয়ে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের চেষ্টা ও পূজামণ্ডপে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ছাড়া, দুষ্কৃতকারীরা শহরের কাপড়িয়া পট্টি কলোনির চানমনি পূজামণ্ডপ, শ্রী শ্রী রক্ষাকালী মন্দির, কালিতলাসহ আরও কয়েকটি পূজামণ্ডপে হামলা চালায় এবং প্রতিমায় অগ্নিসংযোগ করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সেজন্য সারাদেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে। এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে গত ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভার শ্রী ত্রিনয়নী সংঘ রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া, মোকিমাবাদ পূজামণ্ডপে ৫০০ থেকে ৬০০ দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে এবং পাঁচ থেকে ছয়টি পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করে। দুষ্কৃতকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে ১৫ জন পুলিশ সদস্য মারাত্মক আহত হয়। জনগণের জানমাল রক্ষায় এবং আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় পাঁচজন প্রাণ হারায়।
কুমিল্লার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গত ১৪ অক্টোবর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের সর্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা মন্দিরের কাছে ৮০০ থেকে এক হাজার উচ্ছৃঙ্খল লোক জড়ো হয়ে উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা অসংখ্য ইট, লাঠিসোঁটা নিয়ে মন্দিরের সামনে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বিজিবির টহল দলের ওপর হামলা চালায়, মন্দিরের মূর্তি ভাঙচুর করে এবং মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় একজন প্রাণ হারায় এবং পরবর্তীতে পুকুর থেকে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয় বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৭ অক্টোবর রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড় করিমপুর মাঝিপাড়া গ্রামের পরিতোষ (১৯) তার ফেসবুক আইডিতে পবিত্র কাবা শরিফের অবমাননাকর ছবি আপলোড করে। পরবর্তীতে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এরপর রাত প্রায় ৮টার সময় এলাকার কতিপয় দুষ্কৃতকারী ওই গ্রামের একটি মন্দিরসহ ১৮টি পরিবারের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এ ছাড়া, কক্সবাজারের পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলা, সিলেটের জকিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ এবং গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুরসহ দেশের আরও কয়েকটি স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সব ঘটনায় সারাদেশে সাতজন প্রাণ হারায়। তার মধ্যে দুজন হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং পাঁচজন মুসলিম সম্প্রদায়ের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দায়িত্ব পালনকালে ৫০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সংঘটিত এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭২টি মামলা করা হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া, আরও মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। ঘটনা/অপরাধের রহস্য উদঘাটনের জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলোকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে ঘটনা/অপরাধের রহস্য উদঘাটনে প্রযুক্তি নির্ভর তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও উসকানি রোধকল্পে সাইবার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের সব গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষণিকভাবে কড়া নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেকোনো বিভ্রান্তিকর তথ্য অথবা গুজব কিংবা উসকানিতে বিভ্রান্ত বা উত্তেজিত না হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা এবং পরিস্থিতির উন্নয়নে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য দেশের সব সম্মানিত নাগরিকদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।