শ্রদ্ধা
লাকী আখন্দ ও সুরের মোহময় রূপ
যখন এই লেখা লিখছি, তখন বাইরে বৃষ্টি পড়ছে, অঝোরধারায়। আর বৃষ্টিসজল এই সকালে এই শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী লাকী আখন্দের জানাজা। তারপর তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে জলভেজা সকালে চোখের জলে সিক্ত হয়ে এই গুণী সংগীতশিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বহু মানুষ। গার্ড অব অনার প্রদানের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা লাকী আখন্দকে জানানো হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্মান। মনে পড়ে যায় তাঁর সুর করা বিখ্যাত একটি গানের কথা, ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে, মনে পড়লো তোমায়।’ মনে হয়, প্রচারবিমুখ আর নিভৃতচারী এই অসাধারণ শিল্পীর জন্যই হয়তো সকাল থেকে কাঁদছে আকাশ।
লাকী আখন্দের বিদায়মুহূর্তে বৃষ্টির কান্না আমাদের বিষাদ করে তুলল আরো গভীর। তাঁর অপূর্ব কণ্ঠে ‘আমায় ডেকো না, ফেরানো যাবে না’ গানটিতে আমরা বারবার শুনেছি সেই কথা, ‘শেষ হোক এই খেলা এবারের মতো; মিনতি করি, আমাকে, হাসিমুখে, বিদায় জানাও।’ কিন্তু প্রিয় শিল্পীর চিরবিদায় নেওয়ার এই দিনে আমরা অনুভব করছি কেবলই কান্না আর বিষাদ। আর বারবার মনে ভেসে উঠছে তাঁর সৃষ্টি করা সুর। যে সুর আর তাঁর গাওয়া সংগীতের স্মৃতি তাঁকে এ দেশের মানুষের মনে বাঁচিয়ে রাখবে চিরকাল।
লাকী আখন্দের সৃষ্টি করা সুরে বিভিন্ন গীতিকারের কথা হয়ে উঠেছে হৃদয়গ্রাহী সংগীত। এই গান তিনি নিজে গেয়েছেন, গেয়েছেন দেশের প্রখ্যাত শিল্পীরা। তাঁর কাজের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক দিক হলো তাঁর সৃষ্ট সুরের সহজ অথচ মোহময় রূপ। ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে রাতের নির্জনে, জোনাকির আলো নেভে আর জ্বলে শাল-মহুয়ার বনে,’ অথবা ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা, শুধু দু’জনে, চলো না ঘুরে আসি অজানাতে, যেখানে নদী এসে থেমে গেছে,’ কিংবা ‘কে বাঁশি বাজায়রে, মন কেন নাচায়রে, আমার প্রাণ যে মানে না, কিছুই ভালো লাগে না’ এ কথাগুলোতে যে মুহূর্ত বা স্থান বা অনুভবের কথা বলা হয়েছে, অনুভূতিশীল মানুষের ভাবনায় কিংবা অভিজ্ঞতায় তার উপস্থিতি স্বাভাবিক। কিন্তু নির্জন রাতে কবিতার বই নিয়ে নির্ঘুম বসে থাকা, নদীর তীরে কোনো সন্ধ্যায় বন্ধুর সান্নিধ্য কিংবা বাঁশির সুর শুনে হঠাৎ মনে বিচিত্র এক অনুভূতি তৈরি হওয়া এমন আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ মুহূর্তগুলো চিন্তাশীল মানুষের জন্য তৈরি করে রহস্যময় এক মানসিক অনুভূতি, যা সহজে ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। এই সহজ মুহূর্তগুলোর মধ্যে বিরাজ করে যে মুগ্ধতা আর দুর্বোধ্যতা, তা যখন সুরের মাধ্যমে তুলে ধরতে হয়, তখন সেই কাজটিও হয়ে যায় দুরূহ। লাকী আখন্দ এই দুরূহ কাজটিই করতে পেরেছেন অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে। তাঁর সৃষ্ট সুর জটিল হয়নি, কিন্তু সেখানে যে মাধুর্য আর প্রগাঢ়তা তৈরি হয়েছে, তা এই মুহূর্তগুলোর রহস্যময়তা এবং আনন্দময় দিক দর্শকের জন্য তুলে ধরেছে অত্যন্ত সার্থকভাবে। সুরের প্রতি এই বোধ এবং মন আন্দোলিত করার মতো সুরসৃষ্টির সক্ষমতা একজন সুরকার হিসেবে লাকী আখন্দকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
সত্তরের দশকে বাংলাদেশে পপসংগীতের ধারা জনপ্রিয় হয়ে ওঠার সময় লাকী আখন্দ আর তাঁর ছোট ভাই হ্যাপি আখন্দ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন তাঁদের গায়কী আর সৃষ্ট সংগীতের বিশেষ রীতির জন্য। ১৯৮০ সালে চলচ্চিত্রকার সৈয়দ সালাহ্উদ্দীন জাকী তৈরি করেন নান্দনিক দিক দিয়ে প্রথাবিরোধী এবং আকর্ষণীয় চলচ্চিত্র ‘ঘুড্ডি’। দেশের বিভিন্ন শক্তিমান অভিনেতা-অভিনেত্রীকে দেখা যায় বাংলাদেশের গতানুগতিক ছবি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মেজাজের এই ছবিটিতে, যেখানে প্রকাশ করা হয়েছিল রাজনৈতিক সমালোচনাও। এই ছবির একটি দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন হ্যাপি আখন্দ। প্রখ্যাত এই সংগীতশিল্পীকে ছবিতে একাধিক দৃশ্যে সরাসরি গান গাইতেও দেখা যায়। আর ছবিতে ব্যবহৃত হয় ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটি। দেশের অগণিত দর্শকের কাছে দ্রুত অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এস এম হেদায়েতের লেখা আর লাকী আখন্দের সুর দেওয়া এই গান। আজ ৩৭ বছর পরও একইভাবে এই গানটি মন স্পর্শ করে চলেছে ভিন্ন প্রজন্মের মানুষকে, যাঁদের রুচিবোধ আগের মানুষের থেকে পাল্টে গেছে অনেকটাই। কিন্তু এই গানের আকর্ষণ কমেনি, যা নির্দেশ করে গানটির কথা আর সুর মানুষের মনের চিরস্থায়ী কিছু অনুভূতির জন্য আবেদন সৃষ্টি করতে সক্ষম। ‘ঘুড্ডি’ ছবিতে ব্যবহৃত গানগুলোর জন্য সুর সৃষ্টি করেছিলেন লাকী আখন্দ।
সুর সৃষ্টির জন্য লাকী আখন্দ ব্যবহার করেছেন গিটার আর কিবোর্ডের মতো পাশ্চাত্য সংগীতে অধিক প্রচলিত বাদ্যযন্ত্র। তাঁর সুরে পাশ্চাত্যর রক আর পপসংগীতের প্রভাব আছে। তবে বিখ্যাত ব্রিটিশ ব্যান্ড বিটলস বা রোলিং স্টোন্সের মতো লাকী আখন্দের সংগীতও হয়ে উঠেছে একই সঙ্গে জনপ্রিয় এবং চিন্তাসমৃদ্ধ। যে কথাগুলোর জন্য তিনি সুর সৃষ্টি করেছেন, তা চটুল বা অগভীর নয়। একই সঙ্গে তাঁর সৃষ্ট সুরের সুষমা আর নান্দনিকতা সংগীত সম্পর্কে তাঁর ধারণা কতটা সমৃদ্ধ, সেই প্রমাণ বহন করে। সুরের স্বতন্ত্রতার জন্য তাঁর কাজ ভিন্ন হয়ে উঠেছে অন্য সুরকারদের থেকে। ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটির সুরের সঙ্গে পাশ্চাত্যের সফট রক ঘরানার সুরের মিল চোখে পড়ে, আবার ‘কে বাঁশি বাজায় রে’ গানটির সুরে দেশজ ছাপ স্পষ্ট। ‘ঘুড্ডি’ ছবিতে ব্যবহৃত আরেকটি গান ‘সখী চলো না, জলসাঘরে এবার যাই’ গানটিতে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে বাংলার গ্রামীণ সংগীতের সুর। আবার ব্যাকগ্রাউন্ডে তবলার ব্যবহার গানটিতে যুক্ত করেছে জলসাঘরের ধ্রুপদি সংগীতের মজলিশি মেজাজ। এ দুই ধরনের সুর ব্যবহার গানটির সঙ্গে দর্শকের সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে তুলতে কার্যকর হয়েছে। কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়ল তোমায়; অশ্রু ভরা দুটি চোখ; তুমি ব্যথার কাজল মেখে লুকিয়েছিলে ঐ মুখ। বেদনাকে সাথি করে পাখা মেলে দিয়েছো তুমি; কত দূরে যাবে বলো, তোমার পথের সাথী হবো আমি।’ গানটিতে আকর্ষণীয়ভাবে লাকী আখন্দ ব্যবহার করেছেন গজল এবং ধ্রুপদি সংগীতের সুর, যা মানানসই হয়েছে গানটির গাম্ভীর্য আর গভীরতাপূর্ণ কথার সঙ্গে।
‘মা মুনিয়া’ গানটির সুর হালকা, দ্রুতগতির। ফেরদৌস ওয়াহিদের গাওয়া ‘মা মুনিয়া’ গানটিতে আছে এই কথাগুলো, ‘তালে তালে সকলই নাচে; বাবুই দোলে তালেরই গাছে; টোনাটুনি নাচে, তালে তালে নাচে; আমি যে হায় নাচ জানি না।’ এই গানে মানানসইভাবে ব্যবহার করা হয়েছে নাচানি সুর। আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন মেজাজের সুর শুনতে পাই এস এম হেদায়েতের লেখা এবং লাকী আখন্দের গাওয়া আশির দশকের অন্যতম বিখ্যাত গান ‘এই নীল মণিহার’-এ। ‘এই নীল মণিহার, এই স্বর্ণালি দিনে, তোমায় দিয়ে গেলাম, শুধু মনে রেখো’ কথাগুলোর জন্য ব্যবহার করা হয় কোমল, মৃদু সুর। এই গানের ‘স্মরণের জানালায় দাঁড়িয়ে থেকে শুধু আমায় ডেকো, শুধু আমায় ডেকো’ কথাগুলো এই সুরস্রষ্টার মৃত্যুর পর অনেকেরই মনে পড়ছে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আর কানে বাজছে এই গানটির বিষাদগ্রস্ত সুর। ‘কাল কি যে দিন ছিল, দুপুরে নীল আকাশ ছিল’ গানটিতে পাশ্চাত্য সংগীতের সুরের পাশাপাশি যুক্ত করা হয়েছে ভারতীয় রাগসংগীতের আমেজ। লাকী আখন্দের সৃষ্ট সুরে বিভিন্ন ধরনের সংগীতের উপাদান দেখা গেলেও যা তাঁর সুরকে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে তা হলো সুরের একটি সহজ রূপ। এই সহজ সুরের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে গানের কথাগুলো, যা আমাদের মনের গভীরতর অনুভূতি প্রকাশ করে। এই অনুভূতিগুলো ব্যাখ্যা করা সহজ নয়, কিন্তু মনে ঠিকই তা অনুভব করা যায়। লাকী আখন্দের সুর সেই ভাবনাগুলো আরো নিবিড়ভাবে অনুভব করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
লাকী আখন্দের সুর করা গানগুলোর অবস্থান জনপ্রিয় সংস্কৃতির পরিসরে। জনপ্রিয় সংস্কৃতির উপকরণ আর শুধু বাণিজ্যিক লাভের জন্য তৈরি হালকা, চটুল গণসংস্কৃতির উপাদানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। পাশ্চাত্যে বব ডিলান বা বিটলসের গান জনপ্রিয় সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু তাদের সংগীতের কথা আর সুরের গভীরতা জনপ্রিয় সংস্কৃতির উপাদানকেও করে তুলেছে গুরুত্বপূর্ণ এবং নান্দনিকভাবে আকর্ষণীয়। লাকী আখন্দের সংগীত জনপ্রিয় ধারার হলেও তা উচ্চ সংস্কৃতি এবং লোকজ সংস্কৃতির উপাদানের মতোই সৃষ্টিশীল এবং চিন্তাঋদ্ধ। তাঁর সুর সৃষ্টি করেছে গজল, আবার তাঁর সুর করা ‘লিখতে পারি না কোনো গান আজ তুমি ছাড়া; ভাবতে পারি না কোনো কিছু আজ তুমি ছাড়া’ গানটি গেয়েছেন প্রখ্যাত ব্যান্ডসংগীত শিল্পী জেমস। প্রখ্যাত আধুনিক সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ পরিবেশন করেছেন লাকী আখন্দের সুর করা গান ‘যেখানে সীমান্ত তোমার, সেখানে বসন্ত আমার’। নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই গানগুলো ব্যান্ডসংগীত এবং আধুনিক গানের পরিসরকে সমৃদ্ধ এবং অগতানুগতিক করতে ভূমিকা রেখেছে। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই এইচএমভি কোম্পানির সুরকার হয়েছিলেন লাকী আখন্দ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চলে যান ভারতে। স্বাধীন বাংলা বেতারের সদস্য ছিলেন তিনি একজন সংগীতশিল্পী হিসেবে। স্বাধীনতা নিয়ে আছে তাঁর গান, ‘স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে গান তো লিখেছি, শত ব্যথা ভুলে তোমাকে মনে তো রেখেছি।’ তাঁর সুরের মূর্ছনা মুগ্ধ করেছে দশকের পর দশক ধরে এই দেশের মানুষদের, বহু শিল্পীকে অনুপ্রাণিত করেছে লাকী আখন্দের সংগীত। সংগীতশিল্পী হিসেবে এমন অসামান্য অর্জনের পরও তিনি থেকেছেন অনেকটাই নীরবে, প্রচারের উদগ্র বাসনা তাঁর আচরণে দেখা যায়নি কখনোই। নিভৃতে থেকেই তিনি সৃষ্টি করে গেছেন তাঁর সুর, বাংলা আধুনিক সংগীতের ধারায় যুক্ত করেছেন বিশিষ্ট এক রূপ। যে রূপ প্রশংসা পেয়েছে সবার।
লাকী আখন্দের বিশিষ্টতা আর অবদান বাণিজ্যিক আকাঙ্ক্ষা অত্যধিক গুরুত্ব পাওয়া বর্তমান এই সময়ে আমাদের সামনে স্পষ্ট করে তোলে ঠিক আর বেঠিকের পার্থক্য। শিল্প সৃষ্টির যে জীবন, তা আর্থিক লাভ অর্জনের চাপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার পরিবেশ কখনোই কাম্য নয়। যখন যেকোনোভাবে বাণিজ্যিক লাভ অর্জনই প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে, তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিল্প তা সংগীত, সাহিত্য, চলচ্চিত্র, নাটক যাই হোক না কেন। বিশ্বায়নের পর সমাজে বেড়েছে ভোগবাদিতা। সাংস্কৃতিক উপাদান, সেখানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা এবং দর্শক সবই এখন পণ্য। গভীর মনোযোগ আর সাধনার মাধ্যমে উঁচু মানের সংগীত, উপন্যাস, চলচ্চিত্র তৈরির পরিবর্তে দ্রুততার সঙ্গে যেকোনো সাংস্কৃতিক উপাদান তৈরি করার প্রবণতা এখন বেশি চোখে পড়ে। মানের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও বহু দর্শককে আকৃষ্ট করার জন্য ব্যবহার করা হয় চাকচিক্য আর জৌলুস। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক উপাদানটি আর শৈল্পিক থাকে না। তা হয়ে পড়ে লঘু আর অগভীর। বাণিজ্যিক প্রবণতা প্রাধান্য দেওয়ার কারণে সংগীতের সুর আর কথা, নাটক-চলচ্চিত্রের কাহিনী, নির্মাণশৈলী, অভিনয়, উপন্যাস লেখার ধরন আর আগের মতো মানসম্পন্ন থাকছে না। অবশ্য শুধুই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের মান নিয়ে মাথাব্যথা নেই। অর্থনৈতিক সাফল্য পেলেই তাঁরা সন্তুষ্টি। তাই এ ধরনের অগভীর সাংস্কৃতিক চর্চাও বর্তমান সময়ে পাচ্ছে ব্যাপক প্রচার। তবে অগভীর কাজ মানুষকে কেবল তাৎক্ষণিক বিনোদন দিতে পারে, যুগের পর যুগ তার আবেদন মানুষের কাছে থাকে না। এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত নির্মাতা বা শিল্পীরাও দ্রুতই হারিয়ে যান মানুষের মন থেকে। তাঁদের মনে রাখার কোনো প্রয়োজন অনুভব করে না কেউ।
লাকী আখন্দ বর্তমান সময়ে শৈল্পিক কাজের মান-সংক্রান্ত সমস্যার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছিলেন সাধনা আর পরিশ্রম করার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ না থাকার কথা। সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার প্রতি ঝোঁককেও তিনি চিহ্নিত করেছিলেন। লাকী আখন্দের জীবনের দিকে দৃষ্টি দিলে বোঝা যায় সাধনা তাঁর কাছে কতটা জরুরি ছিল। সস্তা খ্যাতি আর প্রচারের পরিবর্তে তিনি নিমগ্ন থেকেছেন সংগীতের সাধনায়। ফলে তিনি যে অসামান্য সুর সৃষ্টি করেছেন, তা তাঁকে করে তুলেছে ইতিহাসের অংশ, অগণিত মানুষের মনে তাঁর স্মৃতি টিকে থাকবে চিরকাল। জানি না সস্তা জনপ্রিয়তার মোহে আচ্ছন্ন থাকার এই সময়ে সাধনামগ্ন থাকার প্রতি বর্তমান সময়ের শিল্পীরা কতটা আগ্রহী হবেন। তবে লাকী আখন্দের মতো শক্তিমান শিল্পীদের কাজ এবং চিন্তাধারা নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত করবে অনেক তরুণ শিল্পীকে। আর তাঁদের মাধ্যমেই এ দেশে টিকে থাকবে শৈল্পিক কাজের শক্তিশালী ধারা। প্রিয় শিল্পী লাকী আখন্দের জন্য গভীর শ্রদ্ধা, যা থাকবে চিরদিন।
লেখক : অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।