নারী নির্যাতন
আমরা মুখ খুলব, তবেই বাঁচব
দীর্ঘ চার বছর পর মানুষরূপী পশু পরিমলের ছাত্রী ধর্ষনের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হওয়ায় নারী হিসেবে বলতে গেলে স্বস্তি পেলাম। ধন্যবাদ স্কুলের সেই ছাত্রী এবং তার অভিভাবককে, সাহস করে মামলা করেছিলেন বলে।
যদি তা তারা না করত, তবে পরিমল কখনই নিজেকে শুধরা তো না। পরবর্তী সময়ে আরো অনেক মেয়ের সর্বনাশের খেলায় মেতে উঠত। আর সেই সাথে আমাদের চারপাশের হাজারও পরিমল উৎসাহিত হতো এবং তেলাপোকার মতো বৃদ্ধি পেত আরো পরিমল।
আমাদের দেশে ধর্ষণের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও নেই যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য কোনো আইন। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে ২০০৯ সালে মামলা করা হলে মাননীয় উচ্চ আদালত যৌন হয়রানির প্রতিরোধের জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। মাননীয় আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধকল্পে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের নির্দেশনার ৯নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি শুধু যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধকল্পে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
মাননীয় হাইকোর্ট ডিভিশনের নির্দেশনার ৯-এর (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অভিযোগ কমিটি ন্যূনতম পাঁচজন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে এবং পাঁচ সদস্যের মধ্যে তিনজন নারী হবেন। যদি সম্ভব হয় তবে কমিটির আহ্বায়ক নারী হওয়া বাঞ্ছনীয়। নির্দেশনার ৯-এর (গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অভিযোগ কমিটির দুজন সদস্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে হবে, যে প্রতিষ্ঠান জেন্ডার এবং যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে কাজ করে।
আমি যেহেতু যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধের বিষয়ে আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকি তাই আামি এই নির্দেশনা হওয়ার পর দেখছি, দেশের বেশির ভাগ পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অভিযোগ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বেশ ভালো কাজও করছে তারা। লক্ষনীয় যে বহুকাল ধরেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই এ ধরনের ঘটনাগুলো আমরা বেশি ঘটতে দেখি। বোধকরি সেখানের শিক্ষক ও ছাত্ররা ভেবেই নেয় যে তারা পার পেয়ে যাবে।
কিন্তু সময় বদলেছে। নারী যেহেতু দিনদিন শিক্ষিত হচ্ছে তাই তাদের মধ্যে কোনো ঘটনা চেপে রাখার প্রবণতা কমছে এবং সেই সাহস করে বলার পরিমাণটা আমাদের আরো বাড়াতে হবে।
শুধু যৌন হয়রানি বা ধর্ষণ নয়, পারিবারিক নির্যাতনের ক্ষেত্রেও আমাদের আর মুখ বুজে সহ্য করার দিন নেই। কারণ পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের জন্যও আইন তৈরি হচ্ছে, আর এসব নির্যাতন বন্ধের জন্য রয়েছে নানারকম প্রতিষ্ঠান।
নারীদের আর ভয় পেলে চলবে না, নারীদের বলতে হবে- আমরা মুখ খুলব, প্রতিরোধ করব, লড়াই করব, তবেই আমরা বাঁচব।
লেখক : সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন