শিক্ষা
উচ্চশিক্ষার আধুনিকায়নে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল

১০ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার আধুনিকায়নে বহু প্রত্যাশিত অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত ওই আইনের খসড়াটি জাতীয় সংসদে পাস করা হলেই তা আইনে পরিণত হবে। পরে এর পরিপ্রেক্ষিতেই ওই কাউন্সিলের গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
তবে মন্ত্রিসভায় গৃহীত নীতিগত সিদ্ধান্তের আলোকে খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী জানা গেছে, অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হবে। একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ওই কমিশনের চারজন পূর্ণকালীন সদস্য এবং আরো আটজন খণ্ডকালীন সদস্যসহ সর্বমোট তেরো সদস্যের কমিশন হবে এটি। এর সঙ্গে সাচিবিক কাজে সহায়তার জন্য একাধিক দপ্তর নিশ্চয়ই থাকবে, যা পূর্ণাঙ্গ আইনটি অনুমোদিত হয়ে প্রকাশিত হওয়ার পরই হয়তো জানা যাবে। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম যাচাই করে এ বিষয়ে স্বীকৃতিসূচক সনদ দেবে সংস্থাটি। বর্তমানে বাংলাদেশের ৩৮টি সরকারি ও ৯৬টি বেসরকারিসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই ওই কাউন্সিলের স্বীকৃতি পেতে হবে।
এ আইন অনুযায়ী অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের সনদ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান অ্যাক্রিডিটেশনপ্রাপ্ত বলে প্রচার করতে পারবে না। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক ছাড়া কোনো সার্টিফিকেট দিতে পারবে না। সংস্থাটি গঠনের জন্য প্রাথমিক নীতিগত অনুমোদন লাভের পর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিশিষ্ট দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদরা একে স্বাগত জানিয়ে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগতমান ও উচ্চশিক্ষার আধুনিকায়নে তদারকি বৃদ্ধি করার জন্য বিশ্বে অন্যান্য দেশের মতো একটি অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অনেকের কাছে প্রত্যাশিত ও সময়ের দাবি ছিল। আর সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই বর্তমান শিক্ষাবান্ধব শেখ হাসিনার সরকার ‘অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল আইন, ২০১৬’-এর খসড়া মন্ত্রিসভায় তাঁর সভাপতিত্বে প্রাথমিক অনুমোদন লাভ করেছে। প্রাথমিক শর্তাবলিতে থাকা কিছু তথ্য থেকে জানা যায়, কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ২৫ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ও সেখানে অধ্যাপক হিসেবে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তিকে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগদানের বিধান রেখে আইনটি পাস করা হচ্ছে। সংস্থাটি গঠনের ক্ষেত্রে একটি বিষয় বারবার সামনে এসেছে, আর তা হলো বর্তমানে ইউজিসির সঙ্গে এটি কোনো সংঘর্ষ তৈরি করবে কি না। সে বিষয়ে প্রাথমিক ব্রিফিং দেওয়া হয়েছে। এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ইউজিসি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেট, ফাইন্যান্স, জনবল ইত্যাদি দেখে থাকে। আর অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের কাজ হবে শিক্ষার মান যাচাই করা।
কিন্তু তার পরও যদি কোনো কোনো বিষয়ে সংঘর্ষ সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করে সেই সংঘর্ষ দূর করে সময়োপযোগী ও আধুনিক করা হবে ইউজিসিকেও। কাজেই নবগঠিত এ কমিশনের প্রধান কাজ হবে, উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে কনফিডেন্স সার্টিফিকেট বা ক্ষেত্রমতে অ্যাক্রিডিটেশন সার্টিফিকেট দেওয়া বা স্থগিত করা। যদি কাউন্সিল মনে করেন, দেওয়ার মতো নয়, তখন স্থগিত করবেন, বাতিল করবেন বা প্রদান করবেন। এ তিনটিই মূলত তাদের প্রধান দায়দায়িত্ব থাকবে। এর মাধ্যমে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। বর্তমানে এমন অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা শোনা যায়, যারা নামসর্বস্ব এবং সার্টিফিকেট বিক্রির একপ্রকার কারখানা। তবে বাংলাদেশে নতুন যেকোনো বিষয় নিয়ে ভালো-মন্দ মিলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে দেখা যায়।
এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এখানে একে বেশির ভাগ মানুষই স্বাগত জানিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। আবার কেউ কেউ আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন এই ভেবে যে, তদারকির নামে এমন কিছু করা যাবে না, যাতে উচ্চশিক্ষা মুখ থুবড়ে পড়ে এবং এ খাতে ভয়ভীতি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সবকিছুই যেন আইন ও নীতিনৈতিকতার ভেতর দিয়ে চলে সেদিকে সংশ্লিষ্টদের কড়া নজর রাখতে হবে। অন্যথায় একটি ভালো উদ্যোগ নিমেষেই বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। যেমনটি একসময় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের বেলায় দেখা দিয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। সে জন্য প্রথম যাদের দিয়ে কাউন্সিলটি গঠন করা হবে, তারা যেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, সেদিকে নজর দিতে হবে। তা ছাড়া বর্তমানে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় উচ্চশিক্ষায় সেশনজট নেই বললেই চলে। তার পরও যতটুকুই আছে, সেটুকু যেন না থাকে সে জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউজিসি এবং নবগঠিত এ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলকে একসঙ্গে কাজ করতে, হবে কারণ সবার আগে হলো শিক্ষা। তাহলেই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ও প্রত্যাশিত এ সংস্থাটির অগ্রযাত্রা সফলতা পবে।
লেখক : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।