‘মা’–একটি শব্দেই পূর্ণতা

‘কোনো ব্যক্তিই গরীব নন, যদি তার একজন বিশ্বাসী মা থাকেন’–কথাটা আব্রাহাম লিংকনের। লিংকন ভুল বলেছিলেন? একরত্তিও না। হিসেব কষলে দেখা যাবে, জগতে কেউই গরীব নয়। প্রত্যেকের মা বিশ্বাস করেন, তার সন্তান সেরা। সেরাদের সেরা না হোক, মায়ের কাছে তারাই পৃথিবী। যাদের মা নেই? মায়েরা আসলে থাকেন না থেকেও। সন্তান মাকে ভুলতে পারে না। সুখে-দুঃখে, স্মৃতিতে, আবেগে, প্রার্থনায় মা থাকেন। চলে যাওয়ার আগ মুহূর্তেও মায়ের ভাবনায় ওই সন্তানই থাকে। তাহলে বলুন তো, আমরা কেউ গরীব?
‘হয়নি বলা অনেক কথা
বলব কী করে?
বলার আগেই মা দেখি
বুঝে যান চট করে!’
মায়েরা হচ্ছে সন্তানের প্রতিবিম্ব। মুখ দেখে ঠিক ধরে ফেলেন, কী হতে যাচ্ছে, কী বলতে চাচ্ছে। রাজ্যের যত আবদার শুনতে কখনোই ক্লান্তি আসে না তাদের। স্রষ্টা এক অদ্ভুত শক্তি নিয়ে মায়েদের পাঠিয়েছেন পৃথিবীতে। শূন্য থেকে শৃঙ্গে পৌঁছানো সন্তানের প্রতিটি সিড়িতে মায়ের ছাপ থাকবেই।
মাকে আমরা প্রতিদিন ভালোবাসি। প্রতিদিন মিস করি। প্রতিদিন প্রার্থনায় রাখি। মাঝেমধ্যে প্রবল ব্যস্ততায় প্রার্থনায় রাখতে হয়তো ভুলে যাই। কিন্তু, প্রার্থনায় প্রতিদিন থাকি। অধুনা সমাজে যত ব্যস্ততা, চাপ, অসহনীয় জীবনব্যবস্থা–সবকিছু থেকে কোথাও না কোথাও এতটুকু মুক্তি মেলে। তার পেছনে আমাদের সাফল্য তো আছেই, মা নামক জাদুকরী শক্তির প্রার্থনাও কিন্তু থাকে।
একটি শব্দ, কেবল একটি– ‘মা।’ বর্ণও একটি। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট বাক্য। এরচেয়ে সুন্দর, মধুর শব্দ দ্বিতীয়টি নেই অভিধানে। কবি কাদের নেওয়াজ তার কবিতাতে তুলে ধরেছিলেন যথার্থই…
“মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো ভাই
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।
সত্য ন্যায়ের ধর্ম থাকুক মাথার পরে আজি,
অন্তরে মা থাকুন মম, ঝরুক স্নেহরাজি।”
প্রতি বছর মে’র দ্বিতীয় রোববার পালিত হয় মা দিবস। মায়ের জন্য দিবসের প্রয়োজন হয় না যদিও। পৃথিবীর সব দেশে, সব ভাষায়, সব জাতির, সব ধর্মের মায়েরা মিলিত হন এক জায়গায়। নেই ভেদাভেদ। চরিত্রে নেই তফাৎ। সন্তানের জ্বরে মায়েদের গা গরম হয়, সন্তানের চিন্তায় পড়ে কপালে ভাঁজ। সন্তান যখন বিশ্বজয় করেন, মায়েদের তখন বিশ্বজয় হয়ে যায়।
মায়ের জন্য দিবসে কী এসে যায়। যার ঋণ কখনও শোধ হওয়ার নয়, বিশেষ দিনে কতটাই করা যায়! তবু, এই দিনটিতে মাকে একটু বেশিই ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। সরল মায়েরা জানতে পারলে হেসে কুটিকুটি হয়ে তখনও বলে উঠবেন, ‘কী চাই তোর বলে ফেল দেখি…’
একটাই চাওয়া, মায়েরা থাকুন দুধে-ভাতে। আমাদের কাছে যেমন, স্রষ্টার কাছেও। সৃষ্টির সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায় চিরসবুজ হয়ে আমাদের প্রাণ জুড়িয়ে দিক।
লেখক : সাংবাদিক