নিউইয়র্কে ইফতার
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/06/15/photo-1465990112.jpg)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কিছু জায়গায় গেলে মিনি বাংলাদেশ বলা হয়। বিশেষ করে জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা এবং ব্রুকলিনের কিছু জায়গায়। সরকারি হিসেবে নিউইয়র্কে প্রায় ৭৫ হাজার বাংলাদেশি বাস করেন। কিন্তু বেসরকারিভাবে এ সংখ্যা আরো বেশি। আর বেশির ভাগ বাংলাদেশি একটি এলাকায় বসবাস করেন। ফলে এলাকাগুলো হয়ে উঠেছে মিনি বাংলাদেশ।
পবিত্র রমজান মাসে এসব জায়গা আরো জমজমাট হয়ে ওঠে। ধর্মপ্রাণ মানুষজন রোজা রেখে বিকেলে ভিড় জমান জ্যামাইকির হিলসাইড এভিনিউ বা জ্যাকসন হাইটসে। আড্ডায় কাটায় মুখরিত হয় গোটা এলাকা। এসব জায়গায় যেকোনো দোকানে গিয়ে অনায়াসেই বলা যায়- আপু, ওটার দাম কত। আর এসব কারণেই মুলত যাদের বাসা একটু দূরে তারাও এসে ভিড় করেন এখানে।
পবিত্র রমজানে মাসে ইফতারের বিশাল বাজার বসে জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস এবং ব্রুকলিনসহ নানান জায়গায়। জ্যামাইকাতে বাংলাদেশি অনেক রেস্টুরেন্ট আছে। সাগর রেস্টুরেন্ট, চাংপাই রেস্টুরেন্ট, কিং কাবাব, প্রিমিয়াম ফুড, ধানসিঁড়িসহ নানান খাবারের দোকান। সকাল থেকে দোকানিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন খাবার প্রস্তুতে। দুপুরের পর শুরু হয় কেনাবেচা। আর শেষ বিকেলে তা জমজমাট হয়ে ওঠে। পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, রোল, জিলিপিসহ নানান ইফতার সামগ্রী তৈরি হয় এসব দোকানে। সাথে থাকে চিকেন বিরানি, গোট বিরানি, সাদা ভাত, লাল শাক, মাছ মাংসসহ নানান আইটেম।
নিউইয়র্কে অনেক পরিবারেই সময়ের অভাবে বাসায় ইফতার বানান না। তাদের জন্য এসব দোকানই ভরসা। কাজ শেষে ফেরার পথে এখান থেকে তাঁরা ইফতার কিনে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যদের জন্য। প্রতি বক্স ইফতারী ৬-৭ ডলারে বিক্রি হয়। এতে থাকে দুটি পেঁয়াজু, দুটি বেগুনি, একটি চপ, কিছু ছোলা এবং একটি জিলিপি। এ ছাড়া আলাদাভাবে মুড়ি বা অন্য যেকোন আইটেম যোগ করা যায়। সিংগারা বা সমুচাও পাওয়া যায় প্রতিটি ১ ডলার করে। গোট বিরানি বা চিকেন বিরানি ৬-৭ ডলার করে।
জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশিদের সমাহার আরো বেশি। এখানেও রয়েছে বেশ কটি বাংলাদেশি খাবারের দোকান। কবির রেস্টুরেন্ট, খাবার বাড়িসহ বেশ কটি রেস্টুরেন্ট ঘুরে তাদের ব্যস্ততার নমুনা পাওয়া গেল । দোকানি আপু ভিড় সামলাতে পারছেন না। কোনো প্যাকেটে পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ দিচ্ছেন আবার কোনো প্যাকেটে বিরিয়ানি। কেউবা টেবিলেই বসে গেছেন ইফতার করার জন্য।
কথা হয় ইফতার কিনতে আসা সেলিনার সাথে। উনি জ্যামাইকা থেকে ৬ মাইল দূরে এলমন্টে থাকেন। কাজ শেষে ইফতার কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাসার জন্য। সেলিনা জানালেন বাসায় আজ কিছু করার সময় পাব না। তাই নিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন- এখানে এলে বোঝাই যায় না দেশের বাইরে আছি। পুরো বাংলাদেশি আবহ। সবচেয়ে বড় কথা ইফতারি খাবারে বাংলাদেশে বা এখানে কোনো পার্থক্য পাই না।
জ্যামাইকার একটি রেস্টুরেন্ট চাংপাই। পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে কাজ করেন পাপিয়া তিনি বলেন- চাংপাইতে মানসম্মতভাবে ইফতার সামগ্রী তৈরি ও বিক্রি করা হয়। পেঁয়াজু, বেগুনিসহ সব কিছুই পাওয়া যায়। এ ছাড়া কেউ যদি চাইনিজ আইটমে নিতে চান তাও তাঁরা করে দেন। মোট কথা রোজাদারদের জন্য স্বাস্থ্যকর ইফতার প্রদানে তাঁরা নানা রকম ইফতার সামগ্রী তৈরি করে থাকেন।
এভাবেই বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা প্রবাসীরা নিজ দেশের আবহ ধরে রাখেন নিজেদের মধ্যে। বিদেশে থেকেও দেশের সংস্কৃতি, খাবারকে লালন করে দেশেরই যেন জয়গান করেন।