কারণ ছাড়াই বাড়ছে দুর্বল বিডি ফাইন্যান্সের শেয়ার দর
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নন ব্যাংকিং আর্থিক খাতের দুর্বল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের (বিডি ফাইন্যান্স) শেয়ার দর অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে। গত ৩২ কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এই কোম্পানির শেয়ার দর কারণ ছাড়াই বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। শেয়ারটির দর এতো বৃদ্ধির বিষয়টি ইতোমধ্যে নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে।
ডিএসইতে গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোরব) বিডি ফাইন্যান্সের প্রতি শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ১৬ টাকা ৬০ পয়সা। যা আগের মাসের ৭ সেপ্টেম্বর শেয়ার দর ছিল ৯ টাকা ৯০ পয়সা। গত এক মাস ১৭ দিন বা ৩২ কর্মদিবসে ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ছয় টাকা ৭০ পয়সা। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার কোম্পানির মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন দাঁড়ায় ৩১২ কোটি ৪৭ লাখ ২২ হাজার ৩২ টাকা। যা ৭ সেপ্টেম্বর বাজারে মূলধন ছিল ১৮৬ কোটি ৩৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪৩ টাকা। এসময়ের ব্যবধানে মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন বেড়েছে ১২৬ কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ৯৮৯ টাকা বা ৬৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
কারণ নেই তবুও শেয়ার দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জানিয়ে বিডি ফাইন্যান্সের শেয়ার ধারণ করা বিনিয়োগকারীরা বলছেন, গত ৩২ কর্মদিবস ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। শেয়ারের বাজার মূলধন বেড়েছে ১২৬ কোটি টাকা। শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কোম্পানিটির সচিব মুন্সি আবু নাঈম বলেন, ‘বিডি ফাইন্যান্সের শেয়ার দর কেন বাড়ছে, সেই বিষয়ে আমার তথ্য জানা নেই।’ শেয়ার দর বাড়ার মতো কোম্পানিটিতে এখন কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্যও নেই।
অপরদিকে শেয়ার দর বাড়ার কারণে সম্প্রতি কোম্পানিটিতে ডিএসই নোটিস পাঠিয়েছিল। এর জবাবে চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটি জানায়, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে। ওইদিন (১৪ সেপ্টেম্বর) শেয়ার দর ছিল ১০ টাকা ৯০ পয়সা। পরে যেন শেয়ার দরের গতি আরও বেড়ে যায়। শেয়ার দর বেড়ে গত বৃহস্পতিবার দাঁড়ায় ১৬ টাকা ৬০ পয়সা। এই ধরনের দর বাড়ায় এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে রেগুলেটরদের বিশেষ অনুরোধ করেন বিনিয়োগকারীরা।
গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দাঁড়ায় ৬৯ পয়েন্টে। পিই রেশিও অনুসারে কোম্পানিতে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ ঝুঁকিতে রয়েছে। পুঁজিবাজারের কোনো কোম্পানির পিই রেশিও যদি সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে, তাহলে সেখানে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নিরাপদ ধরে নেওয়া হয়। এছাড়া পিই রেশিও ডিজিট যদি ১৫ পয়েন্ট পর্যন্ত অবস্থান করে, তবে সেখানেও বিনিয়োগ নিরাপদ বলে ধরা হয়ে থাকে। তবে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসাবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। সেই হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। অর্থাৎ পিই রেশিও ৪০ এর ওপরে গেলে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পিই রেশিও যত বাড়বে ঝুঁকির মাত্রা তত বাড়তে থাকবে।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের (২০২৫ সাল) দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) আর্থিক প্রতিবেদনে বিডি ফাইন্যান্সের সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে সাত পয়সা। আগের বছরের (২০২৪ সাল) একই সময়ে (এপ্রিল-জুন) শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১৩ পয়সা। কোম্পানিটির চলতি বছরের দুই প্রান্তিকে (জানুয়ারি-জুন) সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১২ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে (জানুয়ারি-জুন) শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ৩৩ পয়সা। আলোচিত দুই প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে নেগেটিভ ১৬ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ ছিল ৫৪ পয়সা। গত ৩০ জুন সমন্বিত কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে নেগেটিভ ২৯ টাকা ৯২ পয়সা।
এর আগে ২০২৪ সমাপ্ত বছরে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য নো লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই বছরে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ৪১ টাকা ৬১ পয়সা। ওই সমাপ্ত বছরে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল নেগেটিভ ৬১ পয়সা। সমন্বিত শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল নেগেটিভ ৩০ টাকা পাঁচ পয়সা।
২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বিডি ফাইন্যান্স। ‘জেড’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৬০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১৮৮ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। শেয়ার সংখ্যা ১৮ কোটি ৮২ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৭টি। রিজার্ভ নেগেটিভ ৭৫৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৩ দশমিক ৪২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গত বছরের (২০২৪) ডিসেম্বরে কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ছিল ৪৭১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান