সাক্ষাৎকার
মুস্তাফিজের উঠে আসার গল্প
কয়েক দিন আগেও তাঁকে তেমন কেউ চিনত না। অথচ ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মুস্তাফিজুর রহমানের নাম এখন সবার মুখে মুখে। ওয়ানডে অভিষেকে পাঁচ উইকেট নিয়ে হৈচৈ ফেলে দেওয়া এই বাঁহাতি পেসার সাতক্ষীরা থেকে উঠে এসে জাতীয় দলে স্থান করে নিয়েছেন নিজ যোগ্যতায়। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এলো মুস্তাফিজের জীবনের নানা গল্প।
প্রশ্ন : ওয়ানডেতে স্বপ্নের মতো অভিষেক, দারুণ সাফল্য। অনুভূতিটা কেমন?
উত্তর : অবশ্যই খুব ভালো লাগছে। অভিষেকেই এমন সাফল্য পাব তা কখনোই ভাবিনি। আমার একমাত্র ভাবনা ছিল দলের জন্য শতভাগ উজাড় করে দেওয়া। সে জন্য চেষ্টা করেছি, তাই হয়তো সাফল্য এসেছে।
প্রশ্ন : ভারতের বিশ্ববিখ্যাত ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বল করেছেন। কখনো কি নার্ভাস লেগেছে?
উত্তর : না, মোটেও নার্ভাস লাগেনি। আর দশটা ম্যাচের মতোই খেলতে নেমেছি। ব্যাপারটা আমার কাছে স্বাভাবিকই মনে হয়েছে।
প্রশ্ন : অভিষেকেই পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। কার উইকেট নিয়ে সবচেয়ে খুশি লেগেছে?
উত্তর : সবগুলো উইকেট নিয়েই ভালো লেগেছে। কোনো উইকেটকেই আলাদা করে দেখছি না।
প্রশ্ন : এই সাফল্যের পেছনে কারণ কী?
উত্তর : অনেকেই বলছে, ভারতের ব্যাটসম্যানদের আমার অফ কাটার খেলতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। হয়তো এটাই সাফল্যের অন্যতম কারণ।
প্রশ্ন : এই অফ কাটার রপ্ত করেছেন কীভাবে?
উত্তর : ওপেনার এনামুল হক বিজয়ের কাছ থেকে অফ কাটারটা শিখেছি। মজার ব্যাপার হলো, ঘরোয়া ক্রিকেটে একবার এই অফ কাটার বলেই তাকে আউট করেছিলাম।
প্রশ্ন : ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে আপনার ধাক্কা লাগা নিয়ে এখন তুমুল আলোচনা। এ সম্পর্কে আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি।
উত্তর : আসলে আমারই ভুল ছিল। এ জন্য ধোনিকে দায়ী করা ঠিক হবে না। বল করতে গিয়ে ব্যাটসম্যানের লাইনে চলে গিয়েছিলাম বলেই ধাক্কাটা লেগেছে। পরে ধোনির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমরা ব্যাপারটা মিটমাট করে নিয়েছি।
প্রশ্ন : কিন্তু আপনাকে তো ব্যথা পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়েছিল।
উত্তর : হ্যাঁ, ব্যথা পেয়ে কিছুক্ষণের জন্য মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলাম। শুশ্রূষা করে ১০ মিনিটের মধ্যেই মাঠে ফিরেছি।
প্রশ্ন : আপনার আদর্শ বোলার কে?
উত্তর : তিনিও একজন বাঁহাতি পেসার। পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমির আমার আদর্শ বোলার। তাঁকেই অনুকরণ করার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন : কিন্তু তিনি তো স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযাগে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন!
উত্তর : ব্যক্তি আমিরকে নয়, বোলার আমিরকে আমার ভালো লাগে। তার বোলিং অনুকরণের চেষ্টা করি।
প্রশ্ন : ক্রিকেটে আপনার হাতেখড়ি কীভাবে? কার উৎসাহে এত দূর এলেন?
উত্তর : সাতক্ষীরা শহর থেকে দূরে একটা প্রত্যন্ত গ্রামে আমাদের বাড়ি। আমি সাতক্ষীরা শহরও চিনতাম না। আমার সেজো ভাই মোখলেসুর রহমানের উৎসাহে ক্রিকেট খেলা শুরু করি। তিনি প্রতিদিন সকালে মোটরসাইকেলে করে আমাকে সাতক্ষীরা শহরে অনুশীলনের জন্য নিয়ে আসতেন। অনুশীলন শেষে আবার বাড়ি নিয়ে যেতেন। তাঁর উৎসাহ-অনুপ্রেরণায় এতদূর আসতে পেরেছি।
প্রশ্ন : জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার কথা জানতে চাই।
উত্তর : আমি মূলত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলোয়াড়। জাতীয় দলের অনুশীলনে নেটে মাঝেমধ্যে বল করতাম। সেখানেই নির্বাচকদের চোখে পড়ে যাই। গত এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টির দলে জায়গা পেয়েছিলাম। এবার ওয়ানডেতেও সুযোগ পেলাম।