‘ক্রিকেটের কণ্ঠস্বর’ রিচি বেনোর জীবনাবসান
ক্রিকেটার হিসেবে যেমন বিখ্যাত ছিলেন, তেমনি ধারাভাষ্যকার হিসেবে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ধারাভাষ্যে অতুলনীয় দক্ষতার জন্য ক্রিকেট-দুনিয়ায় রিচি বেনোর আরেক নাম ‘ভয়েস অব ক্রিকেট’ বা ‘ক্রিকেটের কণ্ঠস্বর’। সেই অসাধারণ কণ্ঠ আর শুনতে পাবেন না ক্রিকেট-ভক্তরা। ৮৪ বছর বয়সে মারা গেছেন অস্ট্রেলিয়ার এই সাবেক অধিনায়ক।
শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার টিভি নেটওয়ার্ক ‘চ্যানেল নাইন’ জানিয়েছে, রাতে ঘুমের মধ্যেই ‘চিরঘুমের দেশে’ চলে গেছেন বেনো। এই ক্রিকেট-কিংবদন্তির মৃত্যুতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট মর্মাহত। তিনি টুইট করেছেন, ‘আজ অস্ট্রেলিয়ার জন্য ভীষণ দুঃখের দিন। আমরা ক্রিকেটের একজন চ্যাম্পিয়ন আর অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তিকে হারালাম। রিচি বেনোর আত্মার শান্তি কামনা করছি।’ পরে অস্ট্রেলিয়ার এবিসি রেডিওকে অ্যাবট বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার কোটি মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন তিনি। আমরা তাঁর অভাব অনুভব করবই।’
বেনোর পরিবারের কাছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্নের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন অ্যাবট। সে সঙ্গে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
পুরো ক্রিকেট-দুনিয়া এখন বেনোর প্রতি শ্রদ্ধাবনত। অস্ট্রেলিয়াকে পঞ্চম বিশ্বকাপ এনে দিয়ে ওয়ানডে থেকে বিদায় নেওয়া মাইকেল ক্লার্ক বলেছেন, ‘তাঁর প্রতি আমার অসীম শ্রদ্ধা। তাঁর কণ্ঠ শুনেই তো আমরা বড় হয়েছি। তিনি ছিলেন অসাধারণ খেলোয়াড় ও অসাধারণ অধিনায়ক। তিনি জিততে ভালোবাসতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের জয়ের মানসিকতা গড়ে তোলার কৃতিত্ব তাঁরই।’
বেশ কিছুদিন ধরে ত্বকের ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন বেনো। ২০১৩ সালের শেষ দিকে এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার ধকলও সামলে উঠতে পারছিলেন না। তাই ধারাভাষ্যেও ইদানীং দেখা যায়নি ‘ক্রিকেটের কণ্ঠস্বর’কে।
দুর্দান্ত লেগস্পিনার বেনোর ব্যাটিংয়ের হাতও ছিল চমৎকার। ৬৩ টেস্টে ২৪৮ উইকেটের সঙ্গে ২,২০১ রান সে সাক্ষ্যই দিচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটে ২০০ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি দুই হাজার রান করার প্রথম কৃতিত্ব তাঁরই। অধিনায়ক হিসেবেও ছিলেন দারুণ। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বেনোর অধিনায়কত্বে ২৮টি টেস্ট খেলা অস্ট্রেলিয়া কোনো সিরিজে হারেনি।
দীর্ঘদিন বেনোর সঙ্গে বিবিসির ‘টেস্ট ম্যাচ স্পেশাল’ ধারাভাষ্য বক্সে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল জোনাথন অ্যাগনিউয়ের। ইংল্যান্ডের এই সাবেক ক্রিকেটারের মতে, বেনো ‘এক ও অদ্বিতীয়’। বর্তমানে বিবিসির ক্রিকেট প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা অ্যাগনিউ লিখেছেন, ‘তিনি ছিলেন অতুলনীয়। তাঁর মতো কর্তৃত্ব, জনপ্রিয়তা আর দক্ষতা কারোরই ছিল না। শব্দচয়ন, তা বলার ধরন, তাকানোর ভঙ্গি—তাঁর সবকিছুই ছিল অনন্য। এসব মিলে তিনি হয়ে উঠেছিলেন টেলিভিশনের সবচেয়ে পরিচিত মুখ।’
তবে বেনোর প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার জিম ম্যাক্সওয়েলের শ্রদ্ধাঞ্জলি সবচেয়ে আবেগস্পর্শী, ‘যদি ক্রিকেট কখনো পোপ নিযুক্ত করত, তাহলে সেই সম্মান পেতেন রিচি বেনো। গত ৫০ বছরে তিনিই এ খেলার সবচেয়ে প্রভাবশালী, শ্রদ্ধেয় ও সম্মানজনক ব্যক্তিত্ব।’