সাবেক অলিম্পিয়ান এখন অটোরিকশাচালক!

লাহোরের রাস্তায় চলা অটোরিকশাটা বেশ অভিনব। দুই পাশে পাকিস্তানের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে একজনের করমর্দনের ছবি। লাহোরের অনেকেই এই অটোরিকশা দেখলে থমকে দাঁড়ায়, কথা বলতে চায় চালকের সঙ্গে। অশীতিপর চালকের সঙ্গে কথা বললে বিস্মিত হয়ে যায় অনেকেই। জীবিকার তাগিদে অটোরিকশা চালানো ব্যক্তিটি একজন সাবেক অলিম্পিয়ান!
১৯৬০ আর ১৯৬৪ সালে দু-দুটি অলিম্পিকে পাকিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন মোহাম্মদ আশিক। পঞ্চাশের দশকে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বক্সার হিসেবে। কিন্তু চোটের কারণে পরে চলে যান সাইক্লিংয়ে। রোম আর টোকিও অলিম্পিকেও অংশ নিয়েছিলেন সাইক্লিস্ট হিসেবে। কোনো পদক পাননি, কিন্তু সেই সময় পাকিস্তানের জাতীয় বীরে পরিণত হয়েছিলেন তিনি।
সেই জাতীয় বীরের এখন এমন দৈন্যদশা কেন? উত্তরটা জানা নেই ৮১ বছর বয়সী মোহাম্মদ আশিকের। সম্প্রতি তাঁকে খুঁজে পেয়েছেন বার্তা সংস্থা এএফপির এক সাংবাদিক। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দুঃখে-অভিমানে কেঁদে ফেলেছেন হতভাগ্য বৃদ্ধ, ‘বেশির ভাগ মানুষ মনে করে আমি মারা গেছি। কিন্তু একসময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ বহু বড় বড় মানুষের সঙ্গে আমি হাত মিলিয়েছিলাম। কেন আর কীভাবে তাঁরা আমাকে ভুলে গেলেন? আমি তো বিশ্বাসই করতে পারি না। আমি একসময় খুব সুখী ছিলাম। অলিম্পিকে পাকিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতাম।’
সাইক্লিং ক্যারিয়ারকে বিদায় জানানোর পর দুর্ভাগ্যের অন্ধকার নেমে আসে মোহাম্মদ আশিকের জীবনে। অবসরের পর একটি প্রতিষ্ঠানে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালে চাকরিটা হারানোর পর বেঁচে থাকার জন্য কী না করেছেন! কখনো ট্যাক্সি চালিয়েছেন, কখনো ভ্যান। ছোটখাটো ব্যবসা করারও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি কোনোটিতেই। গত ছয় বছর ধরে অটোরিকশা চালিয়ে কোনোরকমে চলছে তাঁর জীবন। সাড়ে ৪০০ বর্গফুটের ঘুপচি বাড়িতে মাথা গুঁজে থাকতে হয় তাঁকে। প্রতিদিনের আয় ৪০০ রুপির মতো।
চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করলেও মোহাম্মদ আশিকের জীবনে অনুপ্রেরণা হয়ে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। কিন্তু দুই বছর আগে স্ত্রীকে হারিয়ে তিনি এখন এই বিশাল পৃথিবীতে একা। চার ছেলেমেয়ে থাকলেও কারো বোঝা হতে চান না। তাই ৮১ বছর বয়সেও অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে সাবেক অলিম্পিয়ানকে। অসহায় অবস্থায় এখন শুধু মৃত্যুকামনাই করতে পারেন তিনি, ‘আমার স্ত্রী আমাকে সব সময় হাসিখুশি থাকতে বলত। যারা আমাকে ভুলে গেছে, উল্টো তাদেরই ভুলে যাওয়ার কথাও বলত। আমি তার কথা মেনে নিয়েছিলাম। আমরা বেশ সুখেই ছিলাম। কিন্তু একদিন সে মারা গেল। আমি এখন শুধু তার সঙ্গে বেহেশতে দেখা হওয়ার আশায় বসে আছি। এই করুণ জীবনকে এড়ানোর জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না।’