এমবাপ্পে ও মাদ্রিদ, এই নাটকের অবসান কবে?
একটু ক্রিকেট দিয়ে শুরু করি। সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটার স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের টেস্ট গড় ৯৯.৯৬। আর দশমিক শূন্য চার হলেই গড়টা ১০০ হয়ে যেত। শেষ টেস্টের শেষ ইনিংসে রান করার আগেই আউট হওয়ায় সেটি হয়নি। ব্র্যাডম্যানের স্ত্রী কথায় কথায় একবার বলেছিলেন— এই দশমিক শূন্য চারেই লুকিয়ে আছে লৌকিক আর অলৌকিকের পার্থক্য!
এবার আসল কথায় আসা যাক। কেন ছোট এই গল্পটা টানা হলো, তাতে আলোকপাত করি। "কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদে আসছেন"— কয়েকটি শব্দ জুড়ে দিয়ে তৈরি হওয়া বাক্যটা গত সাত বছরে কমপক্ষে হাজারবার উচ্চারিত হয়েছে, গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। হাজারবার কি বেশি বলা হলো? বোধহয় না। গত সাত বছরে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন মিলিয়ে ফুটবল পেয়েছে ১৪টি দলবদলের বাজার। প্রতি দলবদলের এক মাস সময়ের পুরোটাই আলোচনায় সেই এক কথা, এমবাপ্পে আসছেন? এবার বলুন, ১৪ মাসে হাজারবার বাড়িয়ে বলা হলো?
গত জানুয়ারিতে মাঝ-মৌসুমের দলবদল শেষ হলো। আলোচনা, চর্চা সবই হয়েছে। যথারীতি এমবাপ্পের যাওয়া হয়নি। সামনের দলবদল মৌসুম শুরু হতে এখনো চার মাস বাকি। তবে, ৩১ জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডো বন্ধ হলেও এই আলোচনা থেমে নেই। সর্বশেষ খবর, মাদ্রিদেই আসছেন বলে মনস্থির করেছেন এমবাপ্পে। মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ ও পিএসজি সভাপতি নাসের আল-খেলাইফি একটা সমঝোতায় এসেছেন। কিছু যদি কিন্তু আছে, সেসব উৎরাতে পারলে আসছে মৌসুমেই মাদ্রিদের হচ্ছেন এমবাপ্পে।
২০১৭ সালে ফরাসি ক্লাব মোনাকো থেকে প্যারিসে নয়, মাদ্রিদেই আসার কথা ছিল এমবাপ্পের। সেই আসা পরিণত হয়েছে না আসার হতাশায়। নিজের আদর্শ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে খেলবেন একই ক্লাবে, ছোট বয়সের এমবাপ্পের বেডরুমের দেয়ালজুড়ে থাকা রোনালদোর ছবি, বেশ সাড়া ফেলেছিল ফুটবল দুনিয়ায়। রোনালদো মাদ্রিদ ছাড়লেন, এমবাপ্পে বিশ্বকাপ জিতলেন, কিশোর থেকে পরিণত হলেন; তবু তার সাদা পোশাক গায়ে জড়ানো হলো না।
মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট পেরেজকে বলা হয় দলবদলের বাজারের অলিখিত গডফাদার। যাকে যখন চান, নিয়ে আসেন ক্লাবে। এমবাপ্পের বেলায় পারলেন কই? এমবাপ্পেও কি প্যারিসের অর্থের কাছে স্বপ্ন বেঁচে দিয়েছেন? প্রতিবার সময় বুঝে নিজের বাজারদর বাড়ানোর অভিনব পন্থা নয় তো? না কি আসলেই তিনি নিরুপায়?
অজস্র প্রশ্ন আছে এমন। সবগুলো প্রশ্ন সেই ব্র্যাডম্যানের স্ত্রীর কথার দিকে তাক করে— পেরেজ, এমবাপ্পে দুজনই লৌকিক। উভয়ের সীমাবদ্ধতা আছে, দুর্বলতা আছে। তবু, মাদ্রিদ ভক্তদের প্রত্যাশা এমবাপ্পে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আসবেন। নাটকের অবসান ঘটিয়ে গ্যালাক্টিকোসের একজন হবেন।