গর্ভে সাত মাসের শিশু নিয়ে অলিম্পিকের মঞ্চে চিকিৎসক মা
অলিম্পিককে বলা হয়ে থাকে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। সত্যিকার অর্থেই তাই। চলমান প্যারিস অলিম্পিকের কথাই ধরুন না—যেখানে অংশ নিয়েছে ২০৬টি দেশের সাড়ে ১০ হাজার ক্রীড়াবিদ। যারা ৩২টি খেলার ৩২৯টি ইভেন্টে লড়াই করছেন পদক জয়ের আশায়।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়াযজ্ঞ এলে খেলার পাশাপাশি নানা রকম চমকপ্রদ ঘটনা সামনে আসে। তেমনি এবারের আসরেও সবাইকে চমকে দিলেন নাদা হাফেজ। যিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। আরেকটু বাড়িয়ে বললে, তিনি একজন সম্ভাব্য নতুন মা!
অলিম্পিকের মঞ্চে এই নতুন মা লিখেছেন নতুন রূপকথা। গর্ভে সাত মাসের শিশু নিয়েই এই মেগা ইভেন্টে পদকের লড়াইয়ে নামেন এই মিশরীয় চিকিৎসক।
প্যারিস অলিম্পিকের ফেন্সিংয়ে লড়াই করেছেন ২৬ বছর বয়সী নাদা হাফেজ। টানা তিনটি অলিম্পিক ফেন্সিংয়ে মেয়েদের ব্যক্তিগত স্যাবরে ইভেন্টে অংশ নেওয়া নাদা নিজেই জানালেন নিজের সুখবর।
গতকাল সোমবার প্যারিসের গ্রঁ পালাইয়ে নিজের ইভেন্টে যুক্তরাষ্ট্রের এলিজাবেথ তার্তাকোভস্কিকে ১৫–১৩ পয়েন্টে হারিয়ে শেষ ষোলোয় নিশ্চিত করেন নাদা। যদিও শেষ ষোলোতে আর পেরে ওঠেননি। দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিযোগী হা–ইয়াং জিওনের কাছে ১৫-৭ পয়েন্টে হেরে যাত্রা থামে এই প্রতিযোগীর।
বিদায় বেলায় দর্শকদের ভালোবাসায় মুগ্ধ হন নাদা। করতালিতে সব দর্শকরা বিদায় জানান এই মাকে। বিদায়ের মুহূর্তে আবেগী হয়ে কান্না করে ফেলেনে এই চিকিৎসক। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অনুভূতি জানিয়ে নাদা লিখেছেন, ‘ পোডিয়ামে (বিজয় মঞ্চে) আপনারা দুজন খেলোয়াড়কে দেখেছেন, আসলে আমরা তিনজন ছিলাম! আমি, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী এবং আমার ছোট্ট সন্তান, যে এখনো পৃথিবীতে আসেনি! আমি ও আমার সন্তান শারীরিক ও মানসিকভাবে (প্রতিপক্ষকে) দারুণ চ্যালেঞ্জ জানাতে পেরেছি। এটা গর্বের। এটা আমার সত্তাকে পূর্ণতা দিয়েছে।’
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অলিম্পিকের মঞ্চে লড়াই করার জন্য স্বামী ইব্রাহিম ও পরিবারের সমর্থন পেয়েছেন নাদা। সেই অবদানের কথাও উল্লেখ করেন নাদা। তিনি লিখেছেন, ‘গর্ভাবস্থার এই রোলারকোস্টার যাত্রা বেশ কঠিন। কিন্তু জীবন ও খেলাধুলার ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য এই লড়াই কোনো দিক থেকে কম তীব্রতর ছিল না। এটা আমার কাছে মূল্যবান। আমি ভাগ্যবান যে আমার স্বামী (ইব্রাহিম ইহাব) ও পরিবারের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি এবং এত দূর আসতে পেরেছি।’
২০১৬ রিও ডি জেনেইরো, ২০২১ টোকিও অলিম্পিকে রাউন্ড অব ৩২ পেরিয়ে যেতে পারেনি নাদা। এবার গর্ভে সন্তান নিয়ে রাউন্ড অব ১৬-তে জায়গা করে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন এই মিশরীয় নারী।