আটটি দল, একটি লক্ষ্য—শিরোপা

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন— ‘৩৩ বছর কাটল, কেউ কথা রাখেনি।’ হঠাৎ সুনীলকে কেন টেনে আনা? আগামীকাল বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। টুর্নামেন্টের আয়োজক পাকিস্তান। সুনীলের কবিতার মতো ৩৩ বছর না হলেও, আইসিসির কোনো ইভেন্ট আয়োজন করতে পাকিস্তানকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ২৯ বছর। এক্ষেত্রে বলা যায়, আইসিসি অবশেষে মুখ তুলে তাকিয়েছে। সুনীলের কবিতার মতো চূড়ান্ত হতাশায় ফেলেনি পাকিস্তানকে।
১৯৯৬ বিশ্বকাপের পর আবারও আইসিসির ইভেন্টের আয়োজক হিসেবে আছে পাকিস্তানের নাম। এবারেও তারা একা আয়োজন করছে না। ’৯৬-তে সহ-আয়োজক ছিল ভারত ও শ্রীলঙ্কা। ২০২৫ এ পাকিস্তানের সহ-আয়োজক নেই। তবে, আছে ভিন্নতা। ভারতের আপত্তিতে টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে হাইব্রিড মডেলে। ভারত নিজেদের ম্যাচগুলো খেলবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাইয়ে। এতটাই অভাগা পাকিস্তান, ভারতের বিপক্ষে নিজেদের ম্যাচটিও খেলতে হবে দুবাইয়ে। অথচ, আয়োজক তারাই।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রথম ম্যাচ পাকিস্তান খেলবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। করাচি জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় শুরু হবে ম্যাচটি। হাইব্রিড মডেলে হলেও নিজেদের জায়গা থেকে আয়োজনে কমতি রাখেনি পাকিস্তান। সাজ সাজ রব দেশটিতে। প্রায় তিন দশক পর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের আয়োজন বলে কথা। যে টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবার পাকিস্তান। ২০১৭ সালে সর্বশেষ আসরের ফাইনালে ভারতকে ১৮০ রানে উড়িয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে পাকিস্তান।
একদিনের ক্রিকেটে দ্বিতীয় মর্যাদাপূর্ণ আসর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ওয়ানডের সেরা ৮ দলের লড়াই বলে কথা। আতশকাঁচের নিচে ঝালিয়ে তারপর সেরা স্কোয়াড সাজিয়েছে সবাই। চোখ শিরোপায়। বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যেই যাচ্ছি।’ অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা বাস্তবতায় থাকছেন। তার কাছে মনে হয়েছে বিশ্বকাপের চেয়ে বেশি প্রতি্দ্বন্দ্বিতাপূর্ণ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।
বাভুমা একেবারে খারাপ বলেননি। ৮ দলের টুর্নামেন্টে ছোট দল বলতে কেউ নেই। ২টি গ্রুপে ৪টি দলে ভাগ হয়ে খেলবে দলগুলো। রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে প্রত্যেকে নিজ গ্রুপের প্রতি দলের সঙ্গে একটি করে ম্যাচ খেলবে। ৩টি ম্যাচ, পা হড়কালে পড়তে হবে সমীকরণের মারপ্যাঁচে। দুই গ্রুপের সেরা দুটি করে দল যাবে সেমি ফাইনালে। ‘এ’ গ্রুপে আছে স্বাগতিক পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও নিউজিল্যান্ড। ‘বি’ গ্রপে লড়বে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তান।
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে টুর্নামেন্টের। ম্যাচের আগে শক্তিমত্তায় পিছিয়ে রাখা যাবে না কাউকে। পাকিস্তান স্বাগতিক। ঘরের মাঠের চেনা পরিবেশ। নিউজিল্যান্ড আবার এগিয়ে থাকবে সাম্প্রতিক বিবেচনায়। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে প্রস্তুতি হিসেবে পাকিস্তানে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছিল কিউইরা। যেখান অংশ নিয়েছিল পাকিস্তানও। সিরিজে সবগুলো ম্যাচ জিতে শিরোপা নিজেদের করে নেয় নিউজিল্যান্ড। তারচেয়ে বড় ব্যাপার, প্রস্তুতি সেরেছে দারুণভাবে।
পাকিস্তানের প্রেরণার বড় জায়গা, তারা আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। স্কোয়াডও হয়েছে ভারসাম্যপূর্ণ। দলের নেতৃত্বে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ানসহ, বাবর আজম, ফখর জামান, সৌদ শাকিলরা সুযোগ পেলে ব্যাট হাতে বদলে দিতে পারেন ম্যাচের চিত্র। বল হাতে পাকিস্তানের পেস আক্রমণ বরাবরই বিশ্বের অন্যতম সেরা। শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ, নাসিম শাহর পেস ত্রয়ী প্রতিপক্ষের জন্য সবসময়ই ত্রাস।
অন্যদিকে, ম্যাচ শুরুর আগে ব্ল্যাকক্যাপস শিবিরে খানিকটা অস্বস্তি। দলের গুরুত্বপূর্ণ পেসার লোকি ফার্গুসন চোটের কারণে ছিটকে পড়েছেন টুর্নামেন্ট থেকে। তার জায়গায় নেওয়া হয়েছে কাইল জেমিসনকে নিয়ে। তবে, মিচেল স্যান্টনারের দলে আছেন কেইন উইলিয়ামসন, মার্ক চ্যাপম্যান, ডেভন কনওয়ে, রাচিন রবীন্দ্র, ম্যাট হেনরিরা। যারা যেকোনো সময় ম্যাচের মোমেন্টাম বদলাতে বেশ পারদর্শী।
ওয়ানডেতে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে পাকিস্তান। দুদলের ১১৮ দেখায় পাকিস্তান জিতেছে ৬১ ম্যাচ, নিউজিল্যান্ড ৫৩। ফল হয়নি ৪টিতে। ইভেন্ট যখন আইসিসির, নিউজিল্যান্ড সবসময়ই থাকে ফেভারিটের কাতারে। তাই বলে, পাকিস্তানকে ফেলে দেওয়া যাবে? সেরার তকমা তো তাদের গায়েই। আর চিরস্থায়ী অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে পাকিস্তানের চেয়ে আনপ্রডিক্টেবল দল কেইবা আছে?
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি—বাংলা করলে দাঁড়ায় সেরাদের শিরোপা। যারা আছেন, তারা ইতোমধ্যে সেরা ৮-এ জায়গা করে নিয়েছেন। এবার সবার সেরা হওয়ার পালা। ১৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৯ মার্চ পর্যন্ত চলবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ১৫ ম্যাচের রোলার কোস্টার রাইড রাইড আর উত্থান-পতনের সাক্ষী হতে ক্রিকেট দুনিয়ার সঙ্গে আপনি প্রস্তুত তো?
পাকিস্তান স্কোয়াড :
মোহাম্মদ রিজওয়ান (অধিনায়ক), বাবর আজম, ফখর জামান, কামরান গুলাম, সৌদ শাকিল, তৈয়ব তাহির, ফাহিম আশরাফ, খুশদিল শাহ, আগা সালমান, উসমান খান, আবরার আহমেদ, হারিস রউফ, মোহাম্মদ হাসনাইন, নাসিম শাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদি।
নিউজিল্যান্ড স্কোয়াড :
মিচেল স্যান্টনার (অধিনায়ক), মাইকেল ব্রেসওয়েল, মার্ক চাপম্যান, ডেভন কনওয়ে, কাইল জেমিসন, ম্যাট হেনরি, টম লাথাম, ড্যারিল মিচেল, উইল ও’রর্ক, গ্লেন ফিলিপস, রাচিন রবীন্দ্র, বেন সিয়ার্স, নাথান স্মিথ, কেইন উইলিয়ামসন, উইল ইয়ং।