রেকর্ড গড়ে ভারতকে হারালো অস্ট্রেলিয়া

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ভারত-অস্ট্রেলিয়ার লড়াইটা হয়েছে জমজমাট। স্বাগতিক ভারত শুরুতে ব্যাট করে যে লক্ষ্য দিয়েছে সেখানে পৌঁছাতে হলে অসিদের রান তাড়ায় রেকর্ড গড়তে হতো। এমন হাইভোল্টেজ ম্যাচে শেষ পর্যন্ত নারীদের ওয়ানডে ইতিহাসে রান তাড়ার রেকর্ড গড়েই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া নারী দল।
গতকাল রোববার (১২ অক্টোবর) নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে বিশাখাপত্তনমে টসে হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৪৮.৫ ওভারে ৩৩০ রান করে ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৬ বল ও ৩ উইকেট হাতে রেখেই ৩৩১ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া।
এর আগে নারীদের ওয়ানডেতে রান তাড়ায় ৩০০ পেরিয়ে জয়ের রেকর্ড ছিল একটিই। সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের সেই রেকর্ডটা ছিল শ্রীলঙ্কার দখলে। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পচেফস্ট্রুমে ৩০২ রানের লক্ষ্য তাড়া কেরতে নেমে ৩৩ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখে জয় পায় লঙ্কানরা। গতকাল সেটি ছাপিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া নারী দল।
অস্ট্রেলিয়ার এই ইতিহাসগড়া জয়ের নায়ক ছিলেন অধিনায়ক অ্যালিসা হিলি। ২১ চার ও ৩ ছক্কায় ১০৭ বলে ১৪২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন।
এদিন টসে হেরে ভারতের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ছিল অসাধারণ। ওপেনার স্মৃতি মন্ধানা (৮০) ও প্রতীকা রাওয়াল (৭৫) মিলে ২৪.৩ ওভারে গড়েন ১৫৫ রানের জুটি। ৩০ ওভারেই স্কোর ছিল ১৯২ রান, যা দেখে ৩৫০ রানের লক্ষ্য অস্বাভাবিক মনে হয়নি।
কিন্তু এরপর শুরু হয় ব্যাটিং ধস। শেষ ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৩৮ রান যোগ করতে পারে ভারত। এই ধসই ম্যাচে বড় প্রভাব ফেলে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট পেয়েছেন পেসার অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড।
৩৩০ রানও নারীদের ওয়ানডেতে কম নয়, কেননা এত বড় লক্ষ্য এর আগে কেই ছুঁতে পারেনি। কিন্তু বল হাতে ভারতীয় বোলাররাও তেমন ছন্দে ছিলেন না এই ম্যাচে। একমাত্র স্পিনার শ্রী চারানী ৩ উইকেট পেলেও অন্য বোলাররা ছিলেন খরুচে। স্নেহ রানা ১০ ওভারে ৮৫ রান দেন, আর তরুণ পেসার ক্রান্তি গৌড় দেন ৭৩ রান।
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের শুরুতে কিছুটা ধীরগতিতে খেললেও পরে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। হিলি একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচের গতি বদলে দেন।
৩৩১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ফিবি লিচফিল্ডকে নিয়ে শুরু থেকেই দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিলেন হিলি। উদ্বোধনী জুটিতে ১১.২ ওভারে ৮৫ রান করে তারা। ৩৯ বলে ৪০ রান করে লিচফিল্ড ফেরার পর এলিস পেরিকে নিয়ে ৬৯ রানের জুটি গড়েন হিলির। ব্যক্তিগত ৩২ রানে থাকার সময় আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন পেরি।
এরপর বেথ মুনি ও অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডকেও দ্রুত ফেরায় ভারত। ১৭০ রানে অসিদের ৩ উইকেট পড়ে গেলে কিছুটা স্বস্তিতে ফেরে তারা। কিন্ত সেটি বেশিক্ষণ টিকেনি। চতুর্থ উইকেটে তাহলিয়া ম্যাকগ্রাকে নিয়ে স্কোরবোর্ডে ৯৫ রান যোগ করেন হিলি। ৩৯তম ওভারে হিলি যখন আউট হন অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ তখন ৩৮.৫ ওভারে ২৬৫/৪। জয়ের অনেকটা কাছে চলে গেছে তারা।
তবে ভারত এরপর আরও তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে আবারও ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে। ৩০৩ রানে ৭ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। তবে এর মঝেই আবারও ব্যাটিংয়ে ফিরে এসে কিম গার্থকে (১৪*) নিয়ে বাকিটা পথ সহজেই পার করেন পেরি।
পেরি অপরাজিত ছিলেন ৪৭ রানে। জয়ের মুহূর্তটাও ছিল দারুণ, ৪৯তম ওভারের শেষ বলে স্নেহ রানাকে ছক্কা মেরে যখন ঐতিহাসিক জয় এনে দেন এই অলরাউন্ডার। এই জয়ে ৪ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে এখন অস্ট্রেলিয়া। আর ভারত ৪ ম্যাচে পয়েন্ট নিয়ে ৩ নম্বরে।