বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন তারিক কাজী

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের নিয়মিত মুখ তারিক কাজী। সর্বশেষ ৬ মৌসুম ঘরোয়া ফুটবলে কাটিয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের জার্সিতে। ফিনল্যান্ড প্রবাসী এই ফুটবলার এবার ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে কিংসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের খবর জানিয়েছেন এই ডিফেন্ডার।
২০১৯ সাল থেকে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে খেলছেন তারিক। ক্লাবের সঙ্গে তার টানাপোড়েনের খবর তিনি নিজেই প্রকাশ্যে এনেছেন। তারিক জানিয়েছেন, বকেয়া বেতন পরিশোধ না হওয়ার কারণেই বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আজ আমি বকেয়া বেতন পরিশোধ না হওয়ার কারণে আইনগতভাবে আমার চুক্তি বাতিল করেছি বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে।’
তিনি লেখেন, ‘একজন ফুটবলারের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন নীরবতা বহন করা প্রচণ্ড বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি অনিয়মিত ও বিলম্বিত বেতন পরিশোধের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। অনিশ্চয়তার এমন এক সময়, যা আমাকে শুধু একজন পেশাদার হিসেবেই নয়, একজন মানুষ হিসেবেও পরীক্ষা করেছে। এটি শুধু আর্থিক কষ্ট ছিল না, এটি ছিল এক মানসিকচাপ, যা প্রকৃত পেশাদাররা নিঃশব্দে বহন করে। তবু প্রতিদিন আমি একই ভালোবাসা নিয়ে জেগেছি—মাঠে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি আর অন্তরে লড়েছি এক নীরব যুদ্ধ: ভালোবাসা ও অবিচারের মাঝে।’
তারিক আরও বলেন, ‘এই পুরো সময় আমি বেছে নিয়েছি ধৈর্য, পেশাদারিত্ব ও শ্রদ্ধা; এমনকি, যখন পরিস্থিতি আমার সহ্যের সীমা ছুঁয়ে গিয়েছিল। আমি বিশ্বস্ত থেকেছি ক্লাবের প্রতীকে, সতীর্থদের প্রতি এবং সেই সমর্থকদের প্রতি যারা সব সময় পাশে থেকেছেন। আমার এ সবকিছুই ছিল ভালোবাসার কারণে—ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা, দেশের প্রতি ভালোবাসা, আর সেই মানুষগুলোর প্রতি ভালোবাসা যারা স্টেডিয়াম পূর্ণ করেছে একবুক আশায় ও হৃদয় দিয়ে।’
২০২১ সাল থেকে জাতীয় দলেও নিয়মিত, দলের নির্ভরযোগ্য একজন ডিফেন্ডার তিনি। বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠে নেমেছেন ৩৩ ম্যাচে।
তবে ক্লাব ছাড়ার সময়ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এই ডিফেন্ডার। তিনি বলেন, ‘আমার গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই আমার সতীর্থদের, অস্কার ব্রুজন, টিটা ভ্যালেরিউ, মারিও গোমেজসহ পুরো টেকনিক্যাল স্টাফকে, যারা নিরলস পরিশ্রম করেছেন এবং সেই সমর্থকদের, যাদের কণ্ঠ আমাকে শক্তি দিয়েছে, যখন সবকিছু অনিশ্চিত মনে হয়েছে।’
বাংলাদেশের ফুটবলে স্থানীয় অনেক খেলোয়াড় এখনও একই ধরনের আর্থিক অবহেলার শিকার হয় বলেও উল্লেখ করেছেন তারিক। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি খুব ভালো করেই জানি, দেশে এমন অনেক খেলোয়াড় আছেন যারা আরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন- পেশাদার খেলোয়াড় যারা এখনো নীরবে কষ্ট পাচ্ছেন, কারণ কিছু ক্লাব নিয়মিতভাবে খেলোযাড়দের প্রাপ্য বেতন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। তাদের সংগ্রাম হয়তো শোনা যায় না, কিন্তু তাদের অবদানই এই খেলাটিকে বাঁচিয়ে রাখে।’
শেষে তারিক কাজী লিখেছেন, 'এই বিদায় রাগ থেকে নয়- বরং সত্য, মর্যাদা এবং কৃতজ্ঞতা থেকে। আমি বসুন্ধরা কিংস ছেড়ে যাচ্ছি গর্ব নিয়ে, কষ্ট নিয়ে নয়। পরিস্থিতি যেমনই হোক, আমার হৃদয় ভরপুর থাকবে সেই বিশেষ মুহূর্তগুলোতে, যা সারাজীবন মনে রাখব। আমার গল্প এখানেই শেষ নয়, এটি কেবল নতুন অধ্যায়ের শুরু।'