ঢাকা টেস্ট
দুই উইকেটের অপেক্ষায় বাংলাদেশ
ঢাকা টেস্টের পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের অপেক্ষা ছিল ৪ উইকেটের। তবে দিনের প্রথম সেশনে আইরিশদের দৃঢ় প্রতিরোধ গড়তেই দেখা গেল। শেষের দিকের ব্যাটারদের নিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের ভালোভাবেই সামলে গেছেন চতুর্থ দিনে অপরাজিত থাকা কার্টিস ক্যাম্ফার। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে বাংলাদেশও তুলে নিয়েছে দুই উইকেট। ঢাকা টেস্ট জয় পেতে দিনের বাকি দুই সেশনে বাংলাদেশের দরকার আর ২ উইকেট।
আজ রোববার (২৩ নভেম্বর) ঢাকা টেস্টের পঞ্চম দিনে মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ৯৩ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ২৬৩ রান। ৬৩ রানে অপাজিত আছেন ক্যাম্ফার আর ১৮ রানে অপরাজিত গ্যাভিন হোয়ে। জয় পেতে আইরিশদের দরকার ২৪৬ রান আর হাতে আছে ২ উইকেট।
পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের প্রথম উইকেট তুলে নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ৬৮তম ওভারে অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে ফেরান এই বাঁহাতি স্পিনার। ৫৩ বলে ৩ চারে ২১ রান করেন ম্যাকব্রাইন।
ম্যাকব্রাইনের উইকেটটি ছিল তাইজুলের ক্যারিয়ারের ২৫০ তম উইকেট। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন তাইজুল।
এরপর জর্ডান নিলকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন আগের দিন ৩৪ রানে অপরাজিত থাকা ক্যাম্ফার। প্রথম সেশনেই হাফসেঞ্চুরির দেখা পান ক্যাম্ফার। ৮২তম ওভারে নিলকে বোল্ড করে ক্যাম্ফার-নিলের ৪৮ রানের জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪৬ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রান করেন নিল।
গতকাল চতুর্থ দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৫৪ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৬ রান।
এর আগে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে গতকাল মুমিনুল-মুশফিকের ১৬৭ বলে ১২৩ রানের জুটিতে ৫০০ রানের লিড পার বাংলাদেশ। সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা মুমিনুল ৮৭ রানে আউট হলে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ২৯৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে টাইগাররা। পাহাড়সম ৫০৯ রানের লক্ষ্যে আইরিশদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ।
শততম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮১ বলে ১ ছক্কা ও ২ চারে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিকুর রহিম। এর আগে প্রথম ইনিংসে খেলেছিলেন ১০৬ রানের অনবদ্য ইনিংস।
ঢাকা টেস্ট জিততে হলে আইরিশদের গড়তে হবে বিশ্বরেকর্ড। এর আগে টেস্ট ক্রিকেটে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ায় জয়ের রেকর্ডটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দখলে। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল ক্যারিবীয়রা। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে মিরপুরের উইকেটে বাংলাদেশর স্পিনারদের ঘূর্ণি জাদুতে একের পর এক পরাস্ত হয়েছেন আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাররা। আইরিশ ব্যাটারদের বিপক্ষে দাপটের সঙ্গে শুরুটা করেন তাইজুল।
দ্বিতীয় সেশনে আয়ারল্যান্ডের ওপেনার অ্যান্ডি বালবার্নিকে ফিরিয়ে সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন তাইজুল। টেস্টে ২৪৬ নিয়ে শীর্ষে থাকা সাকিবকে টপকে শীর্ষে ওঠেন তাইজুল।
লক্ষ্য তাড়ায় নামা আইরিশদের প্রথম দুই উইকেটই নেন তাইজুল। ২৬ রানে দুই ওপেনারকে হারায় আয়ারল্যান্ড। আইরিশ দুই ওপেনার অ্যান্ডি বালবার্নিকে ১৩ আর পল স্টার্লিং ৯ রানে সাজঘরে ফেরান তিনি।
এরপর পর ৫১ রানের জুটি গড়েন টেক্টর ও কারমাইকেল। ১৯ রান করা কারমাইকেলকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে সেই জুটি ভাঙেন মুরাদ।
এরপর তৃতীয় সেশনে কার্টিস ক্যাম্ফার- হ্যারি টেক্টর বড় জুটি গড়ার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে ৫০ রান করা ক্যাম্ফারকে মুশফিকের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার মুরাদ।
দুই স্পিনারের পর এবারের আইরিশদের ব্যাটিংয়ে আঘাত হানেন পেসার খালেদ আহমেদ। ৩৭ তম ওভারের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার লরকান টাকারকে ফেরান ৭ রানে।
এরপর ৪৯তম ওভারে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে স্টিফেন ডোহেনিকে আউট করেছেন তাইজুল। ৫২ বলে ১ ছয়ে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫ রান।
এর আগে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪১.১ ওভারে ৪৭৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এরপর প্রথম ইনিংসে ৮৮.৩ ওভারে ২৬৫ রানে আইরিশদের গুটিয়ে দেয় টাইগাররা। এতে প্রথম ইনিংসে ২১১ রানের বড় লিড পেয়েছিল বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১৪১.১ ওভারে ৪৭৬/১০ (জয় ৩৪, সাদমান ৩৫, মুমিনুল ৬৩, শান্ত ৮, মুশফিক ১০৬, লিটন ১২৮, মিরাজ ৪৭, তাইজুল ৪, মুরাদ ১১, ইবাদত ১৮*, খালেদ ৮; নিল ১১-১-৪৭-০, ক্যামফার ১০-০-৩২-০, ম্যাকব্রাইন ৩৩.১-৩-১০৯-৬, হামফ্রিস ৫০-৫-১৫১-২, হোয় ৩৪-৩-১১৫-২, টেক্টর ৩-০-১০-০)
আয়ারল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ৮৮.৩ ওভারে ২৬৫/১০ (বালবার্নি ২১, স্টার্লিং ২৭, কারমাইকেল ১৭, টেক্টর ১৪, ক্যাম্পার ০, টাকার ৭৫*, ডোহেনি ৪৬, ম্যাকব্রাইন ০, নিল ৪৯, হোয়ে ৪, হাফফ্রিস ৪; ইবাদত ১২-১-৪৭-১, খালেদ ৮-০-৩৯-২, তাইজুল ৩৫.৩-৬-৭৬-৪, মুরাদ ২১-৩-৫৩-২, মিরাজ ৯-১-৩৮-১, মুমিনুল ৩-১-৫-০)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৬৯ ওভারে ২৯৭/৪ ডিক্লেয়ার ( জয় ৬০, সাদমান ৭৮, শান্ত ১, মুমিনুল ৮৭, মুশফিক ৫৩*; নিল ৯-১-৪৮-১, হামফ্রিস ১৫-০-৫৪-০, ম্যাকব্রাইন ২৬-২-৮২-১, হোয়ে ১৭-০-৮৪-২, টেক্টর ২-০-১২-০)
আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস : ৯৩ ওভারে ২৬৩/৮* ( বালবার্নি ১৩, স্টার্লিং ৯, কারমাইকেল ১৯, টেক্টর ৫০, ক্যাম্ফার ৬৩*, টকার ৭, ডোহেনি ১৫, ম্যাকব্রাইন ২১, নিল ৩০, হোয়ে ১৮* ; ইবাদত ৭-১-২৪-০, খালেদ ১০-০-৩৮-১, তাইজুল ৩৪-৪-৯৪-৪, মুরাদ ১৮-৭-৪৪-২, মিরাজ ২৪-১১-৪৬-১)

স্পোর্টস ডেস্ক