ব্যাট হাতে শুরুর ধারাবহিকতায় হঠাৎ ছন্দপতন। সহজ জয়ের পথ হয়ে পড়ে কঠিন। সেখান থেকে লোয়ার অর্ডারের কল্যাণে ম্যাচ বের করে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তুলে নেয় জয়। আজ শনিবার (২৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ পেয়েছে ৪ উইকেটের জয়। সিরিজে ১-১ সমতা এনেছে স্বাগতিকরা।

বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় আয়ারল্যান্ড। ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে সফরকারীরা তোলে ১৭০ রান। জবাবে ১৯.৪ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৪ রান করে বাংলাদেশ।

রান তাড়ায় উদ্বোধনী জুটি শুরুটা করেছে দেখেশুনে। সাবধানি ব্যাটিংয়ের পরও অবশ্য রক্ষা হয়নি। রানআউটের দুর্ভাগ্যে কাটা পড়েন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। তৃতীয় ওভারে দলীয় ২৬ রানে বিদায় নেন তামিম। তার ব্যাট থেকে আসে ১০ বলে ৭ রান। তামিম ফিরলেও আইরিশ বোলারদের শাসন করে যান অপর ওপেনার পারভেজে হোসেন ইমন।

গ্যারেথ ডিলানির বলে জর্জ ডকরেলের  তালুবন্দি হওয়ার আগে ইমনের ব্যাট থেকে আসে ২৮ বলে ৫টি চার ও ২ ছক্কায় ৪৩ রানের ঝলমলে ইনিংস। যা গড়ে দেয় জয়ের ভিত। সেই ভিতে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক লিটন দাস তুলে নেন অর্ধশতক। মার্ক আডাইরের বলে লেগবিফোর হওয়ার আগে সমান তিনটি করে চার ও ছক্কায় ৩৭ বলে ৫৭ রান করেন লিটন।

লিটন বিদায় নিলে হঠাৎ শুরু হওয়ার আসা-যাওয়ার পুরোনো মিছিল। ১৭ বলে ২২ করে ফেরেন সাইফ হাসান। তাওহিদ হৃদয় রানআউট হন ৯ বলে ৬ রান করেন। নুরুল হাসান সোহানও বোল্ড হন ৭ বলে ৫ রানে। জয়ের পথ কঠিন হয়ে পড়ে ক্রমাগত উইকেট পতনে। সেখান থেকে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও শেখ মেহেদী মিলে দলকে ‍উদ্ধার করে জয়ের বন্দরে নোঙর করান। ৭ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন সাইফউদ্দিন। ৩ বলে একটি চারে অপরাজিত ছয় রান আসে শেখ মেহেদীর ব্যাট থেকে।

আইরিশদের পক্ষে দুটি করে উইকেট পান আডাইর ও ডিলানি।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের রীতিমতো তুলোধুনা করেন দুই আইরিশ ওপেনার পল স্টার্লিং ও টিম টেক্টর। প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে আয়ারল্যান্ড তোলে ৭৫ রান। বাংলাদেশকে প্রথম উইকেটের মুখ দেখান তানজিম হাসান সাকিব। ডিপ স্কয়ার লেগে আইরিশ অধিনায়ক স্টার্লিংয়ের ক্যাচ নেন সাইফ হাসান। ১৪ বলে তিনটি চার ও দুটি ছক্কায় ২৯ রান করেন স্টার্লিং।

উইকেট হারালেও বাংলাদেশের বোলারদের আক্ষেপ বাড়িয়ে আয়ারল্যান্ড বেশ গতিশীলভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল। সেই গতি টেনে ধরে বাংলাদেশ। বল হাতে স্পিন ঘূর্নিতে ভুমিকা রাখেন স্পিনার শেখ মেহেদি। তানজিম সাকিবের প্রতিরোধ ভেঙে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে এগিয়ে যায় আইরিশরা। দুই ভাই হ্যারি টেক্টর আর টিম টেক্টর মিলে তোলেন ২১ বলে ৩১ রান। এরপর অষ্টম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন শেখ মেহেদি।

ওভারের প্রথম বলেই ফেরান তাণ্ডব চালানো টিম টেক্টরকে। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ব্যাটে-বলে সংযোগ করতে পারেননি তিনি। বল ধরেই স্ট্যাম্প ভেঙে দেন লিটন দাস। ফেরেন ২৫ বলে ৩৮ রান করে। ওভারের পঞ্চম বলে বোল্ড করে ফেরান হ্যারি টেক্টরকে। ১১ বলে ১১ রান করে ফেরেন তিনি।

নিজের পরের ওভারে এসে আবারও উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান মেহেদি। এবার ফেরান পাঁচ নম্বরে নামা বেন কালিটজকে। ৯ বলে ৭ রান করে ফেরেন তিনি।

জর্জ ডকরেলকে সাজঘরের পথ দেখান এই ম্যাচে একাদশে সুযোগ পাওয়া সাইফউদ্দিন, ২১ বলে ১৮ করে লং-অনে তানজিদ তামিমের তালুবন্দি হন। শেষ পর্যন্ত আইরিশরা গড়ে ১৭০ রানের পুঁজি।

বাংলাদেশের পক্ষে চার ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন শেখ মেহেদী। একটি করে উইকেট পান সাকিব ও সাইফউদ্দিন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আয়ারল্যান্ড : ২০ ওভারে ১৭০/৬ (স্টার্লিং ২৯, টেক্টর ৩৮, হ্যারি ১১, টাকার ৪১, কালিটজ ৭, ডকরেল ২১, ডিলানি ১০*;  মেহেদী ৪-০-২৫-৩, নাসুম ৪-০-৩১-০, সাকিব ৩-০-১৭-১, সাইফউদ্দিন ৪-০-৪০-১, সাইফ ১-০-৭-০)

বাংলাদেশ : ১৯.৪ ওভারে ১৭৪/৬ (ইমন ৪৩, তামিম ৭, লিটন ৫৭, সাইফ ২২, হৃদয় ৬, সোহান ৫, সাইফউদ্দিন ১৭*, মেহেদী ৬*; হামফ্রিস ৪-০-৩৮-০, আডাইর ৪-০-৩৬-২, ম্যাকার্থি ৪-০-২৭-০, লিটল ৩.৪-০-৩৯-০, ডিলানি ৪-০-২৮-২)

ফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।