আকাশপথে পরিবহণ সহজ করবে ফ্লাইয়িং ট্যাক্সি

Looks like you've blocked notifications!

অনেক কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্রে শহরের মধ্যে অসংখ্য উড়ন্ত যান চোখে পড়ে। কিন্তু বাস্তবে ছোট আকারের এমন উড়োজাহাজ এখনো স্বপ্নই থেকে গেছে। কিন্তু শহরের আকাশে দ্রুত ‘ফ্লাইয়িং ট্যাক্সি' চালু করার উদ্যোগ চলছে। আকাশে ওড়ার স্বপ্ন আবার নতুন করে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বিদ্যুৎশক্তি চালিত এমন হাজার হাজার উড়ন্ত ট্যাক্সি আকাশ ছেয়ে যেতে পারে। ‘লিলিয়ুম' নামের জার্মান স্টার্টআপ কোম্পানি গোটা বিশ্বে আরও প্রায় একশ কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিচ্ছে। সেরা প্রযুক্তি ও সবচেয়ে দ্রুত ছাড়পত্রের জন্য সব কোম্পানি এই দৌড়ে নেমেছে। স্পেনের আটলাস পরীক্ষা কেন্দ্রে সকালে চরম ব্যস্ততার পরিবেশ। কড়া গোপনীয়তার বেড়াজালে সবকিছু ঘটছে। এই প্রথম সেখানে ক্যামেরা টিম প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে।

কারণ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ডানিয়েল ভিগান্ড ‘ফিনিক্স ২' মডেলের প্রোটোটাইপের ক্ষমতা দেখাতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের জন্য পরীক্ষামূলক উড়াল অত্যন্ত জরুরি। একদিকে আমরা যানটির ওড়ার ক্ষমতা পরখ করে দেখতে চাই। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণের সফ্টওয়্যার একই সঙ্গে এয়ারোডাইনামিক্স এবং শূন্যে ভেসে থাকার কাঠামোর সঙ্গে কীভাবে কাজ করছে, তা দেখতে চাই। অন্যদিকে আমরা গোটা প্রক্রিয়ার ধাপগুলিও পরীক্ষা করতে চাই, যাতে ছাড়পত্র পাওয়ার সময়ে যতটা সম্ভব দক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব হয়।'' ‘ফিনিক্স ২' উড়ন্ত যানের মূল্য প্রায় ৪০ লাখ ইউরো। এখনো মর্যন্ত এই প্রোটোটাইপ মানুষ ছাড়াই উড়ছে।

একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে রিমোট কনট্রোলের মাধ্যমে সেটি চালনা করা হচ্ছে। প্রতিটি পরীক্ষামূলক উড়ালের সময়ে ৩০ জন ইঞ্জিনিয়ার ও সফ্টওয়্যার বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকেন। লিলিয়ুম কোম্পানির টেস্ট পাইলট আন্দ্রেয়াস ফিস্টারার বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি উড়াল নতুন এক অধ্যায়। পরীক্ষামূলক উড়াল আসলে ক্ষমতার সীমা খতিয়ে দেখার মতো।

একের পর এক সীমা ভেঙে চলার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনে এক ধাপ পিছিয়ে যাবার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হয়।'' কয়েক ঘণ্টার প্রস্তুতির পর উড়াল শুরু করার পালা। ৩৬টি বৈদ্যুতিক রোটোর প্রথমে যানটিকে সোজা শূন্যে ভাসিয়ে দিলো। তারপর সেই ফ্লাইয়িং ট্যাক্সি একটি দিকে যাত্রা শুরু করলো। এমন অভিনব কনসেপ্ট নিয়ে ভিগান্ডের গর্বের শেষ নেই। তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই ইলেকট্রিক জেট সত্যি ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারবে কিনা, সে বিষয়ে কয়েক জন বিশেষজ্ঞের মনে সন্দেহ রয়েছে। ফ্লাইয়িং ট্যাক্সির মধ্যে একজন পাইলট ও ছয় জন যাত্রী বসতে পারেন। ২০২৫ সালেই লিলিয়ুম এই যান বাজারে আনতে চায়৷ ডানিয়েল ভিগান্ড বলেন, ‘‘আমি নিজে ইঞ্জিনিয়ার। আমি এই উড়োজাহাজের পেছনে পদার্থবিদ্যার ক্রিয়া বুঝতে পারি। পাশে দাঁড়িয়ে এটিকে উড়তে দেখলে, প্রায় কোনো শব্দ না শুনলে সেটা আমার গভীর বিস্ময়ের কারণ হয়। গোটা টিম কীভাবে নিরাপদে এটি চালাতে চাইছে, সেটা আমাকে মুগ্ধ করে।''

এই স্টার্টআপ কোম্পানি সম্প্রতি পুঁজিবাজারে নথিভুক্ত হয়েছে এবং আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রাও স্থির করছে। লিলিয়ুম কয়েক বছরের মধ্যেই কোটি কোটি ইউরো আয় করবে বলে ভিগান্ড প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। গাড়ি ও ট্রেনের বিকল্প হিসেবে এই ফ্লাইয়িং ট্যাক্সিকে তুলে ধরা হচ্ছে। ডানিয়েল বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে আমরা আঞ্চলিক স্তরে এক নতুন পরিবহণ প্রণালী সৃষ্টি করতে পারি, যার আওতায় আমরা ভার্টিকাল টেকঅফ করে, এমন ইলেকট্রিক বিমানের মাধ্যমে শহরগুলিকে যুক্ত করতে পারবো। জমির পরিবহণের তুলনায় অনেক দ্রুত গতিতে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবো।'' কিন্তু এমন ফ্লাইয়িং ট্যাক্সি চাপার সামর্থ্য কয় জনের রয়েছে ? প্রথম দিকে নিশ্চয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং ধনী ব্যক্তিরা এমন যান ব্যবহার করতে পারবেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

কিন্তু বিমান চলাচল সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ মানফ্রেড হাডারের মতে, চিরকাল সেরকমটা থাকবে না। তিনি বলেন, ‘‘নতুন মোবিলিটি প্রণালী হিসেবে ফ্লাইয়িং ট্যাক্সি দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে একমাত্র তখনই সফল হবে, যখন সেটি সব মানুষের নাগাল ও সামর্থ্যের মধ্যে আসবে। সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতার লক্ষ্যে শিল্পজগত কাজ করছে। সেই সঙ্গে বড় আকারে উৎপাদনের মাধ্যমে ফ্লাইয়িং ট্যাক্সির দামও দ্রুত কমানোর উদ্যোগ চলছে।'' কিন্তু প্রশ্ন হলো, এমন যান কোথা থেকে ওঠানামা করবে? শব্দদূষণের আশঙ্কাই বা কতটা ? এখনো অনেক প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যায় নি। তবে নতুন এই প্রযুক্তি যে পরিবেশবান্ধব, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই৷ লিলিয়ুম কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ডানিয়েল ভিগান্ড বলেন, ‘‘এই পণ্যের পরিবেশবান্ধব দিক হলো, উড়ন্ত যানটি কোনো কার্বন নির্গমন করে না, যেটা একটা বড় পদক্ষেপ। দ্বিতীয় পদক্ষেপে আমাদের দেখাতে হবে, যে উৎপাদন থেকে শুরু করে যানটির আয়ু শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা টেকসই পদ্ধতিতে ব্যাটারি ও কাঠামোর রিসাইক্লিং করতে পারছি।'' আপাতত ‘ফিনিক্স ২' হ্যাঙারে ফিরে যাচ্ছে। স্পেনের অলিভ গাছের সারির উপর দিয়ে আরও অনেকবার ওড়ার পর ফ্লাইয়িং ট্যাক্সির স্বপ্ন সম্ভবত বাস্তবে পরিণত হবে।