মৌলিক চাহিদা হাতের নাগালে পেলে গ্রামবাসীরা শহরে স্থানান্তর হবে না : পলক

Looks like you've blocked notifications!
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ অন্যরা। ছবি : সংগৃহীত

শেষ হলো বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন (ইনফো-সরকার ৩য় পর্যায়)” শীর্ষক প্রকল্প।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর)  রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত শেরাটন ঢাকা হোটেলে উক্ত প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন হয়। সেখানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের গ্রামবাসীকে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, আধুনিক সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রদান করতে পারি, তাহলে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর হওয়ার প্রয়োজন হবে না।

পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গত নির্বাচনে তাঁর ভিশন ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি গ্রামবাসীদের সব মৌলিক চাহিদা প্রদান করতে চান। তিনি আমার গ্রাম, আমার শহর নামে ভিশন ঘোষণা করেছিলেন।

পলক আরও বলেন, আমাদের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা যদি তারা পায়, তবে তারা তাদের গ্রামে থাকতেই খুশি হবে। আমি মনে করি, আমরা যদি আইসিটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের শহর ও গ্রামীণ জীবনের আধুনিকীকরণ বাস্তবায়নের জন্য উভয়ই সরকারের অনুমোদন পেতে পারি, তাহলে আমরা সত্যিই আমাদের নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব আধুনিক সেবা প্রদান করতে সক্ষম হব। সবশেষে, প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতকে উক্ত প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য বিশেষ বিবেচনায় রাখার অনুরোধ জানান।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন,  বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, সবার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নত অর্থনীতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভের মধ্যে কানেক্টিং সিটিজেন স্তম্ভটির উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইনফো-সরকার ফেজ-৩ প্রকল্পটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. মুশফিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনফো-সরকার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (গ্রেড-১: অতিরিক্ত দায়িত্ব) বিকর্ণ কুমার ঘোষ। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিসিসি নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার। এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিআরআইজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গুওয়া ওয়ে এবং হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিইও প্যান জুনফেং।

দেশের প্রান্তিক গ্রামীণ জনপদে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে এই প্রকল্প। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করার পাশাপাশি প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তর, বিদ্যালয়, কলেজ, গ্রোথসেন্টার ও অন্যান্য সরকারি কার্যালয় সমূহে নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপনের জন্য, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) এর নেটওয়ার্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এ ছাড়া জাতীয় আইসিটি নীতিমালা ২০১৫ এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ই-সার্ভিসে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং জাতীয় আইসিটি নেটওয়ার্কের সাথে বাংলাদেশ পুলিশ নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করতে জিওবি এর আওতায় পুলিশ ইউনিটের সর্বস্তরে অবাধ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা ছিল উক্ত প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে এ প্রকল্পটিতে দেশের ২৬০০ ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি প্রদান করার পাশাপাশি এক হাজার পুলিশ অফিস ভিপিএন কানেক্টিভিটির মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে ইউডিসি থেকে গ্রামীণ জনগণকে প্রায় ৮০ কোটি সরকারি সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে, যার একটি বিরাট অংশ এই প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে।

এ প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত নেটওয়ার্ক থেকে সারাদেশে ৮৪ হাজার ২৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্রডব্যান্ড সংযুক্ত হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন ইনফো-সরকার তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন মোতাবেক জাতীয় অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে গত ৬ ডিসেম্বর ২০১৮ গেজেটে প্রকাশ হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১২ ডিসেম্বর ২০২১-এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ২৬০০ ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটির  উদ্বোধন করেন।