কিশোর নাগরিক বিজ্ঞানী ডিলান

বয়স মাত্র ১৬। সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী নন, এমনকি পেশাদার স্কুবা ডাইভারও নন। অথচ সমুদ্রের তলাতেই সবসময় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ডিলান ভেকিওনে। সমুদ্রের নিচে প্রবালের মৃত্যু ঠেকাতে সোচ্চার ডিলান। নিজে কাজ করছেন হাওয়াই দ্বীপের প্রবাল নিয়ে।
এখনো স্কুলের গণ্ডি না পেরোলেও জ্যোতির্বিদ্যা ও সমুদ্রবিদ্যায় আগ্রহ রয়েছে তাঁর। ক্লাসের পড়ালেখার বাইরে এগুলো নিয়ে বিস্তর লেখাপড়া রয়েছে ডিলানের।
সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য কাজ করে চলছেন ডিলান। এ বিষয়ে তিনি একজন সুবক্তা। বিভিন্ন সেমিনারে সামুদ্রিক জীব রক্ষায় রাজনীতিবিদ, পরিবেশবিদসহ সবাইকে হাওয়াই দ্বীপে প্রবাল দেখার আমন্ত্রণ জানান ডিলান। তাঁদের সাথে নিয়ে সমুদ্রের নিচে ডুব দিয়ে দেখিয়ে আনেন সেখানকার মৃতপ্রায় প্রবালগুলোর দশা। চাক্ষুষ এই দর্শনের পর এগুলা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং তার জন্য করণীয় সম্পর্কে বর্ণনা দেন ডিলান।
ডিলানের বয়স যখন সাত বছর তখন তাঁকে নিয়ে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাউইতে গিয়েছিলেন ডিলানের মা-বাবা। তখনই ডিলানের প্রথম প্রবাল দর্শন এবং সমুদ্রকে ভালোবেসে ফেলা। সেই থেকে আগ্রহের শুরু। কিন্তু এক বছর পর সেই একই জায়গায় ঘুরতে গিয়ে বুঝতে পারলেন প্রবালগুলো কত দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তখনই এই বিষয়ে কাজ করার ব্যাপারে মনস্থির করেন ডিলান।
ডিলান বলেন, ‘আমি সমুদ্রের কাছাকাছি বেড়ে উঠেছি। তাই এ ব্যাপারগুলো ভালোমত বুঝি। সমুদ্রপৃষ্ঠ আমাকে সবসময়ই টানে। ওখানে গেলে নিজেকে অনেক হালকা মনে হবে আপনার। এই অভিজ্ঞতা বলে বোঝানো মুশকিল।’
যারা প্রবাল ক্ষয়ের ব্যাপারে জানে না তাদের জানানোর দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নিলেন ডিলান। ক্যামেরা নিয়ে নেমে পড়লেন সমুদ্রে। তুলে আনলেন প্রবাল ক্ষয়ের দৃশ্য। নিজে একটা ওয়েবসাইট খুললেন। সেখানেই নিজের অভিজ্ঞতা, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করতে শুরু করলেন।
নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ডিলান বলেন, ‘প্রবালগুলোর অবস্থা দেখে আমার খুব খারাপ লাগল। আমার মনে হলো মানুষ এই বিষয়ে সচেতন নয়। তখন নিজেই কাজ করা শুরু করলাম। যখন কাউকে দেখতাম সমুদ্রের পাড়ে প্রবাল নিয়ে খেলছে বা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে, সাথে সাথে তাকে থামাতাম। বলতাম, এদেরও প্রাণ আছে।’
ডিলান প্রতিষ্ঠা করেছেন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, ‘রিফ কোয়েস্ট’। এর মাধ্যমে নাগরিক বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিতে চান তিনি। মানুষকে বিজ্ঞানের সাথে আরো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ফেলতে চান তিনি।
ডিলান বলেন, ‘সমুদ্র নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি বুঝেছি সামুদ্রিক সবকিছুই একে অপরের সাথে জড়িত। এখানে কোনো কিছুর ক্ষতি হলে সেটাতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আমি সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করতে চাই। কারণ পৃথিবীর অর্ধেক অক্সিজেন উৎপাদন করে এই সমুদ্র।’
গত আট বছর ধরে মানুষের মধ্যে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সচেতনতা তৈরি করতে সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় এক হাজার ছবি তুলেছেন ডিলান। সেগুলো নিজের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন মাধ্যমে শেয়ার করে মানুষকে দেখিয়েছেন এবং আহ্বান জানিয়েছেন এই কিশোর। ডিলান মনে করে সমুদ্রের নিচের এই জীববৈচিত্র্য রক্ষার দায়িত্ব সবার।