তেলাপোকা থেকে উদ্ধারকারী সাইবর্গ
পোকার শরীরে যন্ত্র যুক্ত করে একে নিয়ন্ত্রণের একটি ধারা সম্প্রতি শুরু হয়েছে। গুবরে পোকার পর এই ধারায় যুক্ত হলো তেলাপোকা। তেলাপোকার শরীরে যন্ত্র বসিয়ে একে উদ্ধারকারী রোবটের মতো ব্যবহারের জন্য গবেষণা চলছে।
তেলাপোকাকে যন্ত্রে পরিণত করা না বলে একে সাইবর্গে রূপান্তর বলা উচিত। কারণ জীবন্ত তেলাপোকার পিঠে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। বিজ্ঞান কল্পকাহিনী অনুযায়ী অর্ধেক প্রাণী আর অর্ধেক যন্ত্রকে বলা হয় সাইবর্গ।
রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারের রানা প্লাজা ধসের কথা সবারই মনে থাকার কথা। ওই ঘটনায় হাজারের অধিক মানুষ নিহত হন। রানা প্লাজায় উদ্ধারকাজে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল ছোট সব স্থানে পৌঁছাতে না পারা। ভবনধস বা বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে মানুষ উদ্ধারে ছোট আকৃতির রোবট ব্যবহার করা যায়। এমন ব্যবহারের লক্ষ্যেই সাইবর্গ তেলাপোকা নিয়ে গবেষণা চলছে।
২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক তেলাপোকাকে সাইবর্গে রূপান্তরের গবেষণা শুরু করেন। মাদাগাস্তারে সহজলভ্য এক ধরনের তেলাপোকাকে গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া হয়। গবেষকরা তেলাপোকার পিঠে বৈদ্যুতিক যন্ত্র স্থাপন করেন। আর এর মাথায় থাকা দুটি শুঁড় (অ্যানটেনার) সঙ্গে বৈদুত্যিক যন্ত্র যুক্ত করা হয়। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে তেলাপোকাকে একটি উদ্ধারকারী সাইবর্গে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে এমন তেলাপোকা ব্যবহার করে ধ্বংসাবশেষের মধ্য থেকে মানুষ শনাক্তের লক্ষ্যে কাজ করছেন গবেষকরা।
সাইবর্গ তেলাপোকা নিয়ে গবেষণার অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে সম্প্রতি পপুলার সায়েন্স সাময়িকীকে গবেষকরা জানিয়েছেন তেলাপোকায় সংযুক্ত যন্ত্রপাতি ও কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে।
১. যন্ত্রপাতি বসানোর স্থান
তেলাপোকার শরীরের চেয়ে একটি ছোট প্লাস্টিকের টুকরো। ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারে এটি তৈরি করে নেওয়া হয়। তেলাপোকার পিঠের সঙ্গে আঠা দিয়ে এটি যুক্ত করা হয়। এর ওপরে একটি ছোট বৈদ্যুতিক সার্কিট বসানো হয়। এ ছাড়া জোড়া হয় একটি প্রিন্ট করা সার্কিট বোর্ড, যা বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রকে সংযুক্ত করে।
২. সংযুক্তকারী তার
দুটি ছোট বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে তেলাপোকাকে যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। তার দুটির একটি প্রান্ত তেলাপোকার দুই শুঁড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে। তারে অপর অংশ সংযুক্ত থাকে পিঠে থাকা বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সঙ্গে। এর মাধ্যমে সাইবর্গ তেলাপোকার চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ডানপাশের শুঁড়ে নির্দেশের মাধ্যমে তেলাপোকাকে বামদিকে নেওয়া হয়। আর বাম শুঁড়ে নির্দেশের মাধ্যমে তেলাপোকাকে ডানে সরানো যায়।
৩. রেডিও যন্ত্র
তেলাপোকার পিঠে স্থাপন করা হয় দ্বিমুখী রেডিও যন্ত্র (নির্দেশ পাঠানো ও গ্রহণ)। এর মাধ্যমে তেলাপোকার গতিবিধি, পরিবেশ ও কাছাকাছি থাকা শব্দ সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হয়। পরে কম্পিউটারে নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
৪. শব্দগ্রহণ যন্ত্র
তেলাপোকার পিঠে থাকা সার্কিট বোর্ডের মধ্যে যুক্ত থাকে ক্ষুদ্র শব্দগ্রহণ যন্ত্র (মাইক্রোফোন)। এর মাধ্যমে পাওয়া শব্দ কম্পিউটারের নিয়ে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়। ধ্বংস্তূপের মধ্যে অনেক শব্দের মধ্য থেকে মানুষের শব্দ কম্পিউটারে আলাদা করা হয়।
৫. ব্যাটারি
বৈদ্যুতিক সার্কিট বোর্ডের পেছনের দিকে তিন ভোল্টের একটি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি যুক্ত করা হয়। এর ওজন হয় মাত্র আধা গ্রাম। এই ব্যাটারি তেলাপোকার পিঠে বসানো সব যন্ত্রপাতির বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করে। এ ছাড়া পিঠের যন্ত্রপাতির মধ্যে ছোট আকৃতির সৌর কোষ বসানো হয়, যা দুই ঘণ্টায় ব্যাটারিকে পুরোপারি চার্জ করে।