ইউক্লিডের কারণে মহাকাশকে নতুন করে চিনছেন বিজ্ঞানীরা

ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এসা ২০২৩ সালের জুলাইয়ে মহাকাশে ইউক্লিড টেলিস্কোপ পাঠিয়েছে। এটি দিয়ে অন্ধকার মহাবিশ্বের গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ইউক্লিডের পাঠানো তথ্য ও ছবি বিজ্ঞানীদের মহাকাশকে নতুন করে চেনাতে সহায়তা করছে।
বর্তমানে বিজ্ঞানীদের কাছে মহাবিশ্ব সম্পর্কে মাত্র পাঁচ শতাংশ তথ্য আছে। এর বাইরে ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জির মতো বিষয়গুলো এখনও রহস্য হয়ে আছে।
আমরা যা জানি: ডার্ক এনার্জি মহাবিশ্বের প্রসারণকে গতিশীল করে, আর ডার্ক ম্যাটার গ্যালাক্সিগুলোকে একসঙ্গে ধরে রাখে।
ইন্সটিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোপার্টিকেল ফিজিক্সের টোমাস শোয়েটৎস-মানগল্ড বলেন, ‘‘ডার্ক ম্যাটার অধ্যয়নের একটি উপায় হলো ‘গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং’৷ ইউক্লিড ঠিক সেটাই করছে। এর অর্থ হলো, আলো যখন পদার্থের কাছ দিয়ে যায় তখন বেঁকে যায়। সেই বাঁকের বিস্তারিত ম্যাপিং করে আমরা বুঝতে পারি, কী পরিমাণ ডার্ক ম্যাটার আছে, এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, এগুলো মহাবিশ্ব জুড়ে কীভাবে ছড়িয়ে আছে।’’
ইউক্লিডের কারণে বিরল কিছু দৃশ্য দেখা যায়। যেমন ‘আইনস্টাইন রিং’– গ্যালাক্সি থেকে আলো পৃথিবীতে আসার সময় বড় কোনো পদার্থের পাশ দিয়ে যাওয়ার পথে বেঁকে গিয়ে এমন রিং তৈরি হয়। এ ধরনের রিং - যা খোলা চোখে দেখা সম্ভব নয় - ডার্ক ম্যাটার খুঁজে পেতে সহায়তা করে।
এসার ডিরেক্টর অফ সায়েন্স ক্যারোল মুন্ডেল বলেন, ‘‘এটি একটি টাইম মেশিনও। এর সাহায্যে আমরা ১০ বিলিয়ন বছর আগের মহাজাগতিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবো। কারণ আমরা শুধু বিরল কিছু ছবিই পাচ্ছি না, ইউক্লিডে স্পেক্ট্রোগ্রাফও আছে। সে কারণে আমরা পদার্থগুলোর অবস্থান এবং সেগুলো কী গতিতে চলছে, তা পরিমাপ করতে পারি। সে কারণে আমরা মহাবিশ্বের একটি ত্রিমাত্রিক গতিশীল মানচিত্র পাই।’’
এখানেই শেষ নয়। ইউক্লিড বিশাল পার্সিয়াস গ্যালাক্সি ক্লাস্টার এবং ওরিয়ন নক্ষত্রমণ্ডলে থাকা হর্সহেড নীহারিকারও অত্যাশ্চর্য ছবি তুলেছে। ইউক্লিডের কারণেই এই ধরণের ছবি পাওয়া গেছে। মহাবিশ্বের গভীরের খুবই স্পষ্ট ছবি ধারণ করেছে এই টেলিস্কোপ।
মানগল্ড জানান, ‘‘ইউক্লিড ভবিষ্যতে যা পর্যবেক্ষণ করবে তার ছোট একটি অংশ এটি। কিন্তু প্রাথমিক এই সাফল্য খুবই আশাব্যঞ্জক।’’
ইউক্লিডের পাঠানো প্রথম ডেটা সেট থেকে গবেষকরা তিন লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি ছায়াপথের একটি ক্যাটালগ তৈরি করেছেন -যা স্পাইরাল আর্মস, সেন্ট্রাল বার এবং টাইডাল টেইলসের মতো বৈশিষ্ট্য অনুসারে সাজানো হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকদের একটি বড় দল দ্বারা প্রশিক্ষণ পাওয়া এক এআই মডেল এতে সহায়তা করেছে।
ইউক্লিড কনসোর্টিয়ামের মাইক ওয়ালমসলি বলেন, ‘‘একটি ভালো এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দিতে লাখ লাখ তথ্যের প্রয়োজন হয়। আমাদের কাছে অন্যান্য টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া কয়েক লাখ তথ্য আছে। তাই ইউক্লিডের জন্য আমাদের মাত্র এক মাসের চেষ্টার প্রয়োজন ছিল। আমরা প্রায় নয় হাজার মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ যারা আমাদের মডেলগুলোকে আরও উন্নত করতে পর্যাপ্ত তথ্য তৈরিতে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন।’’
এসব তথ্য মহাবিশ্বকে নতুন করে চিনতে সহায়তা করছে। ইউক্লিডকে দিয়ে যতগুলো ছায়াপথের কাজ করানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে তার মাত্র ০.৪ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ বলা যায়, কাজ সবে শুরু হয়েছে।