ছুটির দিনে
৭৭০ টাকায় ঘুরে আসুন ঐতিহাসিক বাঘা মসজিদ

আমরা বাঙালিরা ভ্রমণবিলাসী। ভ্রমণের তাড়নায় ঘুরে বেড়াই দেশ-বিদেশে; কিন্তু দেশের অনেকাংশেই আমরা ঘুরে দেখি না। এমনকি আমরা অনেকেই জানি না, ব্যস্ত এই নগরীতেই লুকিয়ে আছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান। এই নগরীর ভাঁজে ভাঁজেই লুকিয়ে রয়েছে নানা গুপ্তরহস্য। বাঘা মসজিদ রাজশাহী জেলা সদর থেকে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বাঘা উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। সুলতান নাসিরউদ্দিন নসরাত শাহ ১৫২৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন।
ইতিহাস
মসজিদটি ১৫২৩-২৪ সালে (৯৩০ হিজরি) হুসেন শাহি বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন শাহের ছেলে সুলতান নসরাত শাহ নির্মাণ করেন। পরে বিভিন্ন সময় এই মসজিদের সংস্কার করা হয় এবং মসজিদের গম্বুজগুলো ভেঙে গেলে ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদে নতুন করে ছাদ দেওয়া হয় ১৮৯৭ সালে।
যা দেখবেন
বাঘা মসজিদটির গাঁথুনি চুন ও সুরকি দিয়ে। মসজিদের ভেতরে ও বাইরের দেয়ালে সুন্দর মেহরাব ও স্তম্ভ রয়েছে। এ ছাড়া আছে পোড়ামাটির অসংখ্য কারুকাজ, যার ভেতরে রয়েছে আমগাছ, শাপলা ফুল, লতাপাতাসহ ফার্সি খোদাই শিল্পে ব্যবহৃত হাজার রকম কারুকাজ। মূল মসজিদের চারপাশে চারটি ও মাঝখানে দুই সারিতে পাঁচটি করে মোট ১০টি গম্বুজ আছে। মসজিদের পূর্বপাশে পাঁচটি দরজা আছে। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের চারটি দরজাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২৩.১৬ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১২.৮০ মিটার প্রস্থের এই মসজিদ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ছাদ ধ্বংস হয়ে যায়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ পরে গম্বুজসহ ছাদটি পুনর্নির্মাণ করেন। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে প্রচুর পোড়ামাটির ফলক। এ ছাড়া মসজিদ প্রাঙ্গণের উত্তর পাশেই রয়েছে হজরত শাহদৌলা ও তার পাঁচ সঙ্গীর মাজার। বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহর ছেলে নাসিরউদ্দিন নসরত শাহ জনকল্যাণার্থে মসজিদের সামনেই একটি দীঘি খনন করেন। শাহি মসজিদসংলগ্ন এ দীঘি ৫২ বিঘা জমির ওপর রয়েছে। এই দীঘির চারপাশে রয়েছে সারিবদ্ধ নারিকেল গাছ। প্রতিবছর শীতের সময় এ দীঘিতে অসংখ্য অতিথি পাখির কলতানে এলাকা মুখর হয়ে ওঠে। বর্তমানে দীঘিটির চারটি বাঁধানো পাড় নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ মসজিদসংলগ্ন জহর খাকী পীরের মাজার রয়েছে। মূল মাজারের উত্তর পাশে রয়েছে তাঁর কবর। এ ছাড়া মসজিদসংলগ্ন মাটির নিচ থেকে মহল পুকুর আবিষ্কৃত হয়। ১৯৯৭ সালে মাজারের পশ্চিম পাশে খননকাজের ফলে ৩০ ফুট বাই ২০ ফুট আয়তনের একটি বাঁধানো মহল পুকুরের সন্ধান মেলেছে। এই পুকুরটি একটি সুড়ঙ্গপথ দিয়ে অন্দরমহলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তিন দিক থেকে বাঁধানো সিঁড়ির ভেতরে নেমে গেছে। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে প্রচুর পোড়ামাটির ফলক।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে রাজশাহী যাওয়া যায়। ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে দেশ ট্রাভেলস ও গ্রিনলাইন পরিবহনের এসি বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। এ ছাড়া ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, বাবলু এন্টারপ্রাইজ প্রভৃতি পরিবহন প্রতিষ্ঠানের বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। ঢাকার কমলাপুর থেকে রোববার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যায় আন্তনগর ট্রেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেস এবং মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১১টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তনগর ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেস। ভাড়া শোভন চেয়ার সাড়ে ৩০০ টাকা, স্নিগ্ধা ৬০৪ টাকা, এসি সিট ৭২৫ টাকা, এসি বার্থ এক হাজার ৮১ টাকা। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, ইউনাইটেড এয়ারের বিমান চলাচল করে রাজশাহীতে। রাজশাহী থেকে বাঘা যাওয়ার সহজ উপায় হলো বাস। রাজশাহী সদর বাস টার্মিনাল থেকে বাঘার বাস ছাড়ে। ভাড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।