পান খেতে মহেশখালী
‘যদি সুন্দর একটা মুখ পাইতাম, মহেশখালী পানের খিলি তারে বানায় খাওয়াইতাম’ এই রোমান্টিক গান দিয়েই বুঝা যায় পান একটি সৌখিন খাবার।
এক সময় আমাদের দেশে ঘরে ঘরে দাদা-দাদী, নানা-নানী বয়স্করা পান খেতেন। আর এখন সব বয়সের নারী-পুরুষ শখের বসে পান খেয়ে থাকে। কেবল স্বভাব হিসেবেই নয়, বাংলাদেশে ঐতিহ্যগতভাবে সামাজিক রীতি, ভদ্রতা এবং আচার-আচরণের অংশ হিসেবেই পানের ব্যবহার চলে আসছে।
আর এই পান খেতে আমি আর আমার ভ্রমণ সঙ্গী সানন্দা গিয়েছিলাম মহেশখালীতে।
যেভাবে মহেশখালীতে
কলাতলী থেকে ব্যাটারি চালিত অটোতে করে গেলাম কক্সবাজার ৬ নাম্বার ঘাটে। সেখানে লোকজন যে যার মত গন্তব্য পথে যাচ্ছে কেউ আবার ফিরছে শহর পানে। আমরা এগিয়ে চললাম , আমি আবার সাঁতার জানি না তাই নদী পথে যেকোনো গন্তব্যে ভীতি কাজ করে আমার। এর পরেও মহেশ খালীর পান খাওয়ার জন্য এগিয়ে গেলাম জেটির দিকে। আগের থেকে অনেকেই বলেছিল মহেশখালী জেটিতে ওঠা নামা করা কষ্ট কর। বেশ কায়দা করে উঠে পড়লাম স্প্রিড বোটে। এবার সমুদ্র পাড়ি দেবার পালা। সমুদ্রের ঢেউ এর তালে তালে আমাদের স্প্রিড বোট এগিয়ে চলছে। মাঝে মাঝে সমুদ্রের নোনা জল স্পর্শ করছে। আর এভাবে আমরা মহেশখালীতে পৌছালাম ।
মহেশখালী ও পান
বাংলাদেশে একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী। এখানকার অধিবাসীদের অন্যতম সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পেশা পান চাষ।
বাংলাদেশে উৎপাদিত বাংলা, মিঠা, সাচি, কর্পূরী, গ্যাচ, নাতিয়াবাসুত, উজালী, মহানলী, চেরফুলী, ভাবনা, সন্তোষী, জাইলো, ভাওলা, ঝালি, প্রভৃতি জাতের মধ্যে মহেশখালীর মিষ্টি পান উল্লেখযোগ্য।
মহেশখালীর উঁচু পাহাড়ি জমি যেখানে পানি জমে না, সেসব জায়গায় তিনি পানের বরজের দেখা পান। আমরা এসে পৌছালাম মহেশখালী জেটিতে। মহেশখালী জেটিতে মিষ্টি পান প্রতি খিলি ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। পর্যটকরাও এই আকর্ষনীয় মিষ্টি পান খেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
আমরাও এক খিলি পান কিনে মুখে দিলাম। বাজারে ৫ টাকায় পান পাওয়া গেলেও তাদের পানের কি বিশেষত্ব হলো বিশেষ কিছু মসলা ব্যবহার করা। এগুলো আসে ভারত থেকে। সবচেয়ে কম দামি পানেই তারা প্রায় ২০ ধরনের মসলা ব্যবহার করেন। যেমন নারকেল, কিসমিস, বাদাম, ধনিয়া, মিষ্টি জিরা, তিল ইত্যাদি।
অন্যান্য পানে ব্যবহার করা হয় আরও অনেক মসলা। যেমন পেস্তা, গোলাপের পাঁপড়ি, জ্যষ্টি মধু, কাজু বাদাম। আর ১০০ টাকার পানে দেওয়া হয় ৪০ রকম মসলা। যার মধ্যে জাফরান ও কস্তরী থাকে। পানের দাম যত বেশি, মসলা তত বেশি।
মহেশখালীতে আসা অধিকাংশ পর্যটকই অন্তত এক খিলি হলেও পান খায়। অনেকেই প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার জন্য কয়েক খিলি পান নিয়ে যায়। প্রতিদিন ৬/৭ হাজার টাকার পান বিক্রি হয়।
আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এসব পানে সুপারি ও চুন দেওয়া হয় না। আর এই পান মুখে দিলে সর্বোচ্চ দুই মিনিট থাকবে মুখে।
সাধারণত পান বিক্রি হয় গণ্ডা বা বিড়া হিসেবে। চারটি পান পাতায় এক গণ্ডা এবং ৮০ গণ্ডায় এক বিড়া ধরা হয়। প্রতি বিড়া পান কমপক্ষে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে পানের ওজন গুরুত্বপূর্ণ। এক বিড়া পানের ওজন সাধারণত ৩০০-৪০০ গ্রাম হয়।
গোরকঘাটা ও বড় মহেশখালীর নতুনবাজারে সপ্তাহের মঙ্গল ও শুক্রবার পানের হাট বসে। চাষিরা বরজ থেকে পান তুলে বাঁশের ঝুড়িতে গোল করে সাজিয়ে হাটে নিয়ে আসেন। হাটবারে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আড়তদাররা এসে জড়ো হন মহেশখালীতে। তাঁরা পান কিনে ট্রাকে বা বড় নৌকায় করে নিয়ে যান। খিলি পানের জন্য গোরকঘাটার মিষ্টিমুখ হোটেলের পাশের দোকানটি প্রসিদ্ধ।
মহেশখালীর সব বাগানের পানের স্বাদ এক নয়। পাহাড়ের পাদদেশের পুরনো বাগানের পানই বেশি স্বাদের। নতুন বাগানের পান কিছুটা কম স্বাদের। তবে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার পানের তুলনায় মহেশখালীর সব বাগানের পানের স্বাদই অতুলনীয়।
যাবেন যেভাবে
কক্সবাজার এর যে কোন প্রান্ত থেকে অটোতে চলে যাবেন কক্সবাজার ৬ নাম্বার ঘাট ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা কলাতলি মোড় থেকে । সেখান থেকে স্পিডবোর্ড এ মহেশখালী নেবে জনপ্রতি ১২৫ টাকা। সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত স্পিডবোর্ড চলে। ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে যাওয়া যায় মহেশখালী ভাড়া জনপ্রতি ৫০টাকা করে।মহেশখালী পৌছাতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট।