প্রাচীন বৃক্ষ
ইতিহাসের সাক্ষী ৫০০ বছরের তেঁতুল গাছ

ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন ও সাঁওতাল বিদ্রোহ খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন তেঁতুল গাছ। কেউ বলেন, ৭০০ বছর আবার কেউ বলেন প্রায় ৮০০ বছর বয়স এ তেঁতুল গাছটির।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ৫০০ বছর বয়সতেঁতুল গাছটির। আর তেঁতুল জাতের বিবেচনায় দাবি করা যেতে পারে এটিই দেশের প্রাচীন তেঁতুল গাছ। তবে ২০০৩ সালের আগেও কেউ জানত না তেঁতুল গাছটির বয়স কত। ওই বছর তৎকালীন জেলা প্রশাসক নূরুল হক উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করান এবং বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন, গাছটির বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি।
তারপর থেকেই গাছটিকে প্রাচীনবৃক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে এর দেখভালের দায়িত্ব নেয় প্রশাসন এবং গাছটির যাতে কোনো ক্ষতি করা না হয় সেজন্য জনসচেতনতামূলক একটি বোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের বরেন্দ্র ভূমির মাঝে একসময়ের জমিদার এলাকা সুরলা গ্রামে মাথা সোজা করে দাঁড়িয়ে আছে তেঁতুল গাছটি। প্রায় ৩০ বছর আগে ঝড়ে বড় ডালটি ভেঙে পড়লেও মাথা নোয়ায়নি গাছটি। আগের জমিদার এলাকা সুরলার আদিবাসীদের নির্যাতন, অত্যাচার আর দরিদ্রতার আঘাতে মাথা নুইয়ে গেলেও আজও তারা তেঁতুল গাছটি নিয়ে গর্ব করে। শত শত মানুষের গর্ব এই তেঁতুল গাছটি এলাকার দেবস্থান হিসেবেও পরিচিত।
গাছের পাশেই বাস করেন প্রমিলা রানী। নিজের ঘরবাড়ির মতোই তিনি গাছের নিচ পরম মমতায় প্রতিদিন পরিষ্কার করেন। আগে ওই গাছের গোড়ায় ছিল কালীপূজার থান। এখন গাছের পাশেই একটি ছোট মন্দির করে সেখানেই কালীপূজা করেন স্থানীয় আদিবাসীরা। বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত ওই গাছে প্রচুর বক আসে দূরদূরান্ত থেকে। এ ছাড়াও বছরের অন্য সময় টিয়া,ঘুঘু, বক,পেঁচাসহ বিভিন্ন পাখি বাস করে। ৩০ বছর আগে ১১৫ বছর বয়সে মারা গেছেন ওই গ্রামের শশী মোড়লের মা বিরো দাসী। তিনি বলতেন, ‘আমার ঠাকুরদাও দেখেছেন গাছটির এমন বিরাট আকার।’

গ্রামের চন্দনা বর্মন জানান,এই তেঁতুল গাছটা ৫০০ বছরের বেশি। গাছটি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোক দেখতে আসে। দীপক প্রমানিক নামের এক দর্শানার্থী বলেন,আমি লোক মুখে শুনেছি নাচোলের শুড়লা গ্রামে একটি বহুবছর আগের একটি তেঁতুল গাছ আছে।গাছটি দেখার জন্য আমার অনেক কৌতুহল ছিল।গাছটি দেখার জন্য আমি আজ এসেছি। আসলে গাছটি ৫০০বছরের চাইতে ও অনেক বছরের হবে। এলাকার প্রবীণ আদিবাসীরা জানান, জমিদার কুঞ্জু মোহন মৈত্রের কাচারি ও খামারবাড়ি ছিল এখানে। আর তেঁতুল গাছের নিচে ছিল বিরাট কালী মন্দির। কালী মন্দিরে বরেন্দ্র অঞ্চলসহ দেশের দূরদূরান্ত থেকে আদিবাসীরা আসতেন পূজা-অর্চনা করতে। তেঁতুল গাছটি এখনও গ্রামের মানুষের সুখ,দুখের সাক্ষী হয়ে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
নেজামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল হক জানান, ২০০৩ সালের দিকে উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তেঁতুল গাছটি পরীক্ষা করান চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক নূরুল হক। সে সময় বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে গাছটির বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি বলে নিশ্চিত করেন। তারপর থেকেই গাছটিকে প্রাচীনবৃক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রাচীন এ গাছ শুধু আমাদের এলাকার গর্বই নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্যও।’