খরস্রোতা বড়াল নদী এখন মরা খাল

পাবনার ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহরের এক সময়ের খরস্রোতা বড়াল নদী এখন নাব্যতা হারিয়ে সংকুচিত হয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এর তলদেশে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। দখল-দূষণ আর অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদীর বুকে পলি জমে উঁচু হয়েছে। দখল আর দূষণের কারণে দুই পাড় চেপে গেছে। ফলে খরস্রোতা বড়াল নদী আজ শুধুই স্মৃতি, পরিণত হয়েছে মরা খালে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ও অকাল বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য বড়াল নদের উৎপত্তি স্থলে একটি সুইস গেট নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে আটঘড়িয়া, দহপাড়ায় ও পাবনার চাটমোহরে ক্রস বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে প্রায় তিন যুগ সময় পদ্মার পলিযুক্ত পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বড়াল নদীতে বন্ধ থাকায় নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে।
এ ছাড়া নদের দুই পারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর নির্মাণ করে নদ দখল করে চলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে নদের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে পড়েছে। বর্তমানে বড়াল নদীটি শুকিয়ে যাওয়ায় চলন বিলের আটটি উপজেলার মধ্যে নৌ-চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। নদী কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেমে এসেছে স্থবিরতা।
জানা যায়, সড়কপথে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীরা স্বল্পখরচে নৌপথে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আরিচাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্য পরিবহন করে আসছিলেন। এখন নৌপথ বন্ধ থাকায় সড়কপথে অধিক খরচে পণ্য পরিবহন করতে হয়।
স্কুল শিক্ষক আব্দুল খালেক জানান, নদীতে পানি না থাকায় এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলো তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। সেচসহ প্রতিদিনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। এখনই সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করে এ নদীটি পুনঃখনন করা না হলে বড়াল নদী একদিন হারিয়ে যাবে।
স্থানীয় জেলে জগন্নাথসহ একাধিক জেলেরা জানান, এক সময়ে এই বড়াল নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হলেও এখন আর নদীতে মাছ শিকার করা হয় না। পানি না থাকায় অনেক জেলে আজ অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। পদ্মার মুখে পলি মাটি জমে পানির প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড়াল আজ নিজের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। নদীটি পুনঃখনন করে অবাধ পানি প্রবাহের ব্যবস্থার দাবি জানান স্থানীয় জেলেরা।
বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব ও বাপা’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম মিজানুর রহমান বলেন, রাজশাহীর পদ্মা থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত বড়ালসহ প্রায় ১০টি নদী আছে। পদ্মা থেকে বাঘাবাড়ি ২২০ কিলোমিটার নদী পথের মধ্যে নদী দখল করে ৫৬টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। নাটোরের আটঘরি ও রাজশাহীর চারঘাট এলাকায় দুটি সুইচ গেট হয়েছে। এগুলো অপসারণ করা হলেই নদী আবারও প্রাণ ফিরে পাবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। অচিরেই স্থাপনা ও সুইচগেট ভেঙে ফেলা হবে। যদি তা না হয়, তাহলে আন্দোলন গড়ে তুলব।
ছবি: নাব্যতা হারিয়ে পানি শূন্য পাবনার ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহরের এক সময়ের খরস্রোতা বড়াল নদী।