ঈদের ছুটিতে নেপাল যাবেন কেন?

নেপাল হচ্ছে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট সংলগ্ন স্থলবেষ্টিত একটি জায়গা। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম একটি সুন্দর দেশ হচ্ছে নেপাল। এটি উত্তরে তিব্বতের সঙ্গে এবং দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারতের সঙ্গে, সিকিম দ্বারা ভুটান থেকে এবং পশ্চিম্বঙ্গের শিলিগুড়ি দ্বারা বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন সীমানায় অবস্থিত।
অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের কাছে নেপাল খুব জনপ্রিয় একটি জায়গা। এর মূল কারণ নেপালে রয়েছে এভারেস্ট বেজ ক্যাম্প এবং রাজকীয় হিমালয় পর্বতমালা, যা একইসঙ্গে চ্যালেঞ্জিং এবং অপ্রতিরোধ্য। এ কারণে নেপালে সবসময়ই পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। ভ্রমণ পিপাসুদের বর্তমানে নেপাল প্রথম পছন্দ। বাংলাদেশ থেকে খুব সহজে ও অল্প সময়ে নেপাল ভ্রমণে যাওয়া যায়। তাই আপনি চাইলে নেপালে ভ্রমণ করতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক নেপাল ভ্রমণে কেন যাবেন, তার কয়েকটি কারণ বিস্তারিত তুলে ধরে হলো।

অন-অ্যারাইভাল ভিসা
নেপালে ভ্রমণে পূর্ব থেকে কোনো ভিসা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশিরা নেপালে যাওয়ার রিটার্ন টিকিট কাটলেই খুব সহজেই অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে নেপাল ভ্রমণ করতে পারবেন। সেক্ষেত্র বছরে প্রথমবার বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ফি সম্পূর্ণ ফ্রি।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন যেহেতু নেপাল ভ্রমণে কোনো ভিসা লাগে না। সেক্ষেত্র শুধুমাত্র নেপালে যাওয়ার আপ-ডাউন টিকিট কাটলেই বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পার হওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের জন্য এনওসি, ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স, পেশাজীবীদের সার্টিফিকেট এগুলো ইমিগ্রেশনে দেখাতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বৈধ পাসপোর্ট ও পাসপোর্টের মেয়াদ ছয় মাস থাকতে হবে। ইমিগ্রেশন কৃর্তপক্ষ সন্তুষ্ট হলে ঝামেলা ছাড়া আপনাকে নেপাল ভ্রমণের অনুমতি দেবে।

নেপাল যেতে সময় লাগে
বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা থেকে নেপালে যেতে সোয়া এক ঘণ্টা সময় লাগে। তবে ফ্লাইটের দুই ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে বোর্ডিংয়ের জন্য পৌঁছার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নেপালের ইমিগ্রেশনের প্রক্রিয়া খুব সহজ ও ঝামেলা বিহীন। কেউ যদি বাংলাদেশ থেকে নেপাল ভ্রমণ করতে চান, তাহলে এই লিংকে গিয়ে একটি ফরম পূরণ করে নিয়ে যান তাহলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে নেপালের অন-অ্যারাইভাল ভিসা মিলবে। তবে কেউ যদি ব্যস্ততার কারণে বা না জানার কারণে অগ্রিম ফরম পূরণ না করেন, সেক্ষেত্রে আপনি এয়ারপোর্টে নেমেই সেখানে কম্পিউটারে ফরম পূরণ করতে হবে। অন-অ্যারাইভাল ভিসা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কোনো বাড়তি টাকা গুনতে হবে না।

নেপালে হোটেল বুকিং
নেপালে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভালোমানের একটি হোটেল বুকিং করা প্রয়োজন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও নেপালের ইমিগ্রেশনের জন্য হোটেল বুকিং করা বাধ্যতামূলক। ইমিগ্রেশনে হোটেলের বুকিং দেখাতে না পারলে ঝামেলা হতে পারে। অপরদিকে নেপালের থামেল, পোখারা ও ত্রিভূবণ এয়ারপোর্টের সামনে অনেক হোটেল রয়েছে সেখানে থাকতে পারেন। অথবা আপনি চাইলে পোখারায় বাসে করে চলে যেতে পারেন।
নেপালে মুদ্রা বিনিয়ম
নেপালে ভ্রমণে নেপালি মুদ্রা আবশ্যক। নেপালের মুদ্রাকে নেপালি মুদ্রা বলে। বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া ডলার নেপালের যে কোনো মানি একচেঞ্জ (মুদ্রা বিনিয়ম) থেকে বিনিময় করা যায়। তবে এয়ারপোর্টে না বিনিময় করে থামেলে মুদ্রা বিনিয়ম করা ভালো। এ ক্ষেত্রে ডলার থেকে রুপির মান ভালো পাওয়া যায়। বাংলাদেশি কোনো মুদ্রা নেপালে চলে না, তাই বাংলাদেশি মুদ্রা না নিয়ে যাওয়ায় ভালো। আপনি বাংলাদেশি টাকা থেকে নেপালি মুদ্রা বিনিয়ম করতে পারবেন না।

নেপালে ট্রান্সপোর্ট
নেপালে ট্রান্সপোর্ট আমাদের দেশের মতো পাঠাও অ্যাপস কাজ করে। আপনি নেপাল নেমে সিম ক্রয়ের পরে পাঠাও অ্যাপস ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ট্যাক্সি চালকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা করতে হবে না ও কম টাকায় আপনি নেপালে ঘুরতে পারবেন।
নেপালে যা দেখবেন
নেপাল পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত পর্বতমালা, হিমালয়, যার মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর মাউন্ট এভারেস্ট। ট্রেকিং করতে বা পর্বতারোহণ করতে আসা পর্যটকদের জন্য এটি একটি স্বর্গরাজ্য। এ ছাড়া নেপালে বহু প্রাচীন মন্দির, গুম্বা (বৌদ্ধ মন্দির) ও স্তূপ রয়েছে, যেমন কাঠমান্ডু উপত্যকা, যা বৌদ্ধ এবং হিন্দু ধর্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
নেপালের সংস্কৃতি, ভাষা এবং ঐতিহ্য খুবই বৈচিত্র্যময় এবং সমৃদ্ধ। এখানে নানা ধরনের উৎসব ও অনুষ্ঠান উদযাপন হয়, যা দেশটির ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলে। নেপাল তার প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি যেমন জঙ্গল, হ্রদ, ঝরনা ও অরণ্য দিয়ে ঘেরা। পর্যটকরা এখানে ক্যাম্পিং, জঙ্গলে সাফারি, রাফটিংসহ অন্যান্য অ্যাডভেঞ্চার কাজ উপভোগ করতে পারেন। নেপালের মানুষ খুবই অতিথিপরায়ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ, যা পর্যটকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করে। যারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধ্যাত্মিকতা এবং অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাদের জন্য নেপাল একটি নিখুঁত গন্তব্য।