গরমে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ৫ গন্তব্য

ঘুরতে ভালোবাসেন অথচ চট্টগ্রাম ভ্রমণ করেননি এমন বাংলাদেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না। অবশ্য অনেকে কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান চলে যাবার সময় চট্টগ্রামে নামতে ভুলে যান। কিন্তু পর্বতপ্রেমি পর্যটকদের ভুলে গেলে চলবে না যে, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শত বছরের ইতিহাস। ঢাকার মতো এই ছিমছাম শহরটিও ইতোমধ্যে ফ্লাইওভারে ঢেকে গেছে। পাশাপাশি যানজটের দিক থেকে ঢাকার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকলেও এর দর্শনীয় স্থানগুলো এখনো আকর্ষণ হারায়নি। ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম নগরীর দর্শনীয় স্থান নিয়ে আজকের আয়োজন।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতটি বাংলাদেশের অত্যাশ্চর্য এবং বিখ্যাত সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে অন্যতম। কর্ণফুলী নদী ও সাগরের মোহনায় অবস্থিত পতেঙ্গায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। এছাড়া বন্দরে ছোট-বড় জাহাজের সারি এক ভিন্ন পরিবেশের ছোঁয়া দিবে। এখানে সমুদ্রে ভেসে বেড়ানোর জন্য আছে স্পিডবোট ও সি বাইক। অনেকে ঘোড়ায় চড়ে পুরো সৈকত ঘুরে বেড়ান। পতেঙ্গার আশেপাশে অন্যান্য সুন্দর জায়গার মধ্যে আছে বাংলাদেশ নৌ ঘাঁটি এবং চট্টগ্রাম বন্দরের বাটারফ্লাই পার্ক।
চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৪ কিমি দক্ষিণে পতেঙ্গায় গাড়ি, সিএনজি বা লোকাল বাসে করে যাওয়া যায়। সিএনজিতে গেলে ভাড়া পড়বে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা আর লোকাল বাসে নিবে ৫০ টাকা।
জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও উপজাতি সম্প্রদায়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের লক্ষ্য নিয়ে পথ চলা শুরু হয় দেশের একমাত্র জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরটির। চট্টগ্রাম জেলার আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় বাদামতলী মোড়ের কাছে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে। ১.২৫ একর জমির উপর গড়ে তোলা জাদুঘরটি ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দ্বারা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। জাদুঘরে ২৯টি জাতিগোষ্ঠীর আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি এবং জীবন প্রবাহের জন্য নিবেদিত ১১টি প্রদর্শনী কক্ষ রয়েছে। উপরন্তু বিশ্বব্যাপী ২৫টি বাংলাদেশী জাতিগোষ্ঠী এবং ৫টি অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনামূলক বিশ্লেষণ জাদুঘরটিকে সমৃদ্ধ করেছে। জাতিগত জাদুঘরের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। এটি প্রতি রবিবার এবং সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে।
রাঙ্গুনিয়া কোদালা চা বাগান
১৮৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কোদালা টি এস্টেট বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় চা বাগানগুলোর মধ্যে একটি। ঐতিহ্যবাহী এই চা বাগানটি চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া সদর উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কোদালা ইউনিয়নে অবস্থিত। বাংলাদেশের মোট ১৬২টি চা বাগানের মধ্যে কোদালা চা বাগান গুণগত পরিমাণ ও আয়ের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান হয়ে কোদালা চা বাগানের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই রোডে বাসে চড়ে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান বা সরফভাটা গোডাউন এলাকায় যাওয়া যেতে পারে। তারপর সিএনজি বা অটোরিকশা নিয়ে লিচুবাগান থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে কোদালা চা বাগান।
চালন্দা গিরিপথ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরকার বিভিন্ন রকমের রোমাঞ্চকর স্থানের মধ্যে এই গিরিপথ আশ্চর্যজনক এক দর্শনীয় স্থান। গিরিপথের চারিদিকে সবুজ আর স্রোতের স্বচ্ছ জলের প্রকৃতি মনকে প্রশান্ত করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের খুপরির কাছে পাহাড় থেকে নেমে আসা জলপ্রপাত সবচেয়ে ভালো দেখা যায়।
চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো স্থান থেকে বাস বা সিএনজিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া যায়। চট্টগ্রামের বটতলী রেলওয়ে স্টেশন থেকে শাটল ট্রেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যায়। এখান থেকে জিরো পয়েন্টে যেয়ে টমটম নিয়ে কলা অনুষদে যাওয়া যাবে। কুঁড়েঘর থেকে ৭ থেকে ৮ মিনিট হাঁটার পরে পাওয়া যাবে জলধারার সরু পথ। এই এক ঘন্টার পায়ে হাটা পথটিই চলে গেছে চালন্দায়।