‘আগস্ট শোকের মাস, শক্তি সঞ্চয়ের মাস’

Looks like you've blocked notifications!
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্ট বাংলা একাডেমি দিনব্যাপী আয়োজন করে। ছবি : সংগৃহীত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে।

বাংলা একাডেমি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গতকাল রোববার সকাল ৭টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন (অর্ধনমিত) করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার নেতৃত্বে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় একাডেমির সচিব এ. এইচ. এম. লোকমান, পরিচালক, উপপরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কমর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। এর পর বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদ স্মরণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় শোক দিবস-২০২১ স্মরণে ‘শোক ও শক্তির মাস আগস্ট ২০২১’ শিরোনামে বাংলা একাডেমির মাসব্যাপী অনলাইন অনুষ্ঠানের আজকের আয়োজনে গতকাল বেলা ৩টায় শুরুতে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তিসংগ্রাম’ শীর্ষক নিবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক-গবেষক মফিদুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন। কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ পর্বে স্বরচিত ‘বজ্রকণ্ঠ থেমে গেলে’ শীর্ষক কবিতা পাঠ করেন কবি আসাদ চৌধুরী। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা রচিত ‘পনেরো আগস্ট’ কবিতার আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিকশিল্পী রূপা চক্রবর্তী এবং কবি আমিনুর রহমান রচিত ‘রাসেলের সমান বয়সী’ কবিতার আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিকশিল্পী হাসান আরিফ। ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে’ শীর্ষক সংগীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী তিমির নন্দী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সচিব জনাব এ. এইচ. এম. লোকমান।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, আগস্ট বাঙালির জন্য শোকের মাস। আগস্ট আবার শক্তি সঞ্চয়েরও মাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। তবে ব্যক্তিকে হত্যা করে যে আদর্শকে পরাস্ত করা যায় না, তা আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে।

সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর চিন্তা-চেতনা-আদর্শ ও বিশ্বাসে ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি। বাঙালিত্বের শুদ্ধ ধারণাই তাঁকে আলোকিত বিশ্বমানবে পরিণত করেছে।

প্রাবন্ধিক মফিদুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রায়োগিক প্রকাশ ঘটিয়েছেন ভাষাভিত্তিক এবং অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা ১৯৭৫-এর পর বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতীকগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে বাংলাদেশকে পরাজিত পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তাই আজ বঙ্গবন্ধুকে প্রকৃত স্মরণ মানে তাঁর লালিত আদর্শের বাস্তবায়ন।

জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলা একাডেমি শোকাবহ আগস্ট মাসে অনলাইনে যে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে, তার মর্মবাণী নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এগিয়ে যেতে হবে।

বাংলা একাডেমি পরিচালিত রাজবাড়ীর পদমদীস্থ মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র এবং রংপুরের পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রেও জাতীয় শোক দিবস ২০২১ স্মরণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।