আনোয়ারা সৈয়দ হক ও মৌরি মরিয়ম পেলেন হুমায়ূন সাহিত্য পুরস্কার

Looks like you've blocked notifications!
বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে ‌আনুষ্ঠানিকভাবে কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক ও মৌরি মরিয়মের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। ছবি : সংগৃহীত

এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক ও মৌরি মরিয়ম। কথাসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং নবীন সাহিত্য বিভাগে (অনূর্ধ্ব ৪০ বছর বয়স্ক লেখক) মৌরি মরিয়ম পেয়েছেন এ বছরের পুরস্কার।

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে ‌আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুম ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী অভিনেত্রী-পরিচালক মেহের আফরোজ শাওন।

পুরস্কারপ্রাপ্ত আনোয়ারা সৈয়দ হক ও মৌরি মরিয়মকে ক্রেস্টসহ দেওয়া হয় যথাক্রমে ৫ লাখ ও ১ লাখ টাকার চেক। অনুষ্ঠানটি শুরু হয় রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।

পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, ‘আমি যে স্কুলে পড়েছি, সেই স্কুলে পুরস্কারের এই টাকাটা দিয়ে দেব। শিক্ষার উন্নয়নে এটি ব্যয় হবে।’

নবীন সাহিত্যিক মৌরি মরিয়ম বলেন, ‘এই পুরস্কারটি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পুরস্কারটি হুমায়ূন আহমেদের নামে। এই পুরস্কার আমাকে লেখালেখির চর্চায় উৎসাহিত করবে।’

২০১৫ সাল থেকে প্রবর্তিত হয় ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার।’প্রথমবার এই দুটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছিলেন যথাক্রমে শওকত আলী ও সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম। দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালে হাসান আজিজুল হক ও স্বকৃত নোমান। ২০১৭ সালে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও মোজাফ্ফর হোসেন। ২০১৮ সালে পুরস্কৃত রিজিয়া রহমান ও ফাতিমা রুমি। ২০১৯ সালে পুরস্কার পেয়েছেন রাবেয়া খাতুন ও সাদাত হোসাইন। ২০২০ সালে পুরস্কৃত হয়েছেন হাসনাত আবদুল হাই ও নাহিদা নাহিদ। ২০২১ সালে পুরস্কার পেয়েছেন সেলিনা হোসেন ও ফাতেমা আবেদীন।

আনোয়ারা সৈয়দ হক

ছয় দশক ধরে লিখছেন আনোয়ারা সৈয়দ হক। তাঁর লেখায় বারবার উঠে আসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু আর মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা। এ ছাড়াও নারী জীবনের টানাপোড়েন, নারীর বঞ্চিত, লাঞ্ছিত ও অবহেলিত জীবনযাপনের কথা তাঁর সাহিত্যে প্রধান একটি উপাদান হিসেবে কাজ করেছে। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলোও তিনি তুলে ধরেন তাঁর লেখায়।

আনোয়ারা সৈয়দ হকের জন্ম ১৯৪০ সালের ৫ নভেম্বর, যশোর জেলার মোহনগঞ্জের চুড়িপট্টিতে। মা প্রয়াত আছিয়া খাতুন চৌধুরী। বাবা প্রয়াত গোলাম রফিউদ্দিন চৌধুরী। স্বামী সব্যসাচী লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হক। ১৯৬৫ সালে আনোয়ারা সৈয়দ হক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। লন্ডন থেকে মনোবিজ্ঞানে এমআরসিপি ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৮১ সালে। বর্তমানে তিনি ঢাকার বারডেম হাসপাতালে মনোরোগ বিভাগের অধ্যাপক ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত।

বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আনোয়ারা সৈয়দ হক বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০১০) এবং দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক (২০১৯)। এবার কথাসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২’অর্জন করলেন আনোয়ারা সৈয়দ হক

মৌরি মরিয়ম

এই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় তরুণ লেখক মৌরি মরিয়ম। তাঁর লেখায় মানবিক সম্পর্ক, প্রেম, মান-অভিমান, ভ্রমণ, যাপিত জীবন ও সমকালের প্রেক্ষাপটে এইসব বিষয় মূর্ত হয়ে ওঠে। তাঁর জন্ম বরিশালের গৌরনদী উপজেলায়, ১৯৯১ সালের ২৫ মে। মা মনজু বেগম। বাবা প্রয়াত আজিজুল হক।

মৌরি মরিয়মের লেখালেখির সূচনা গল্প-উপন্যাস পড়ার সূত্রে। তাঁর প্রিয় লেখকদের মধ্যে রয়েছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, বুদ্ধদেব গুহ, হুমায়ূন আহমেদ, জে. কে. রাওলিং, নিকোলাস স্পার্কস। প্রথম লেখাটি প্রকাশিত হয় স্কুল ম্যাগাজিনে। তবে তিনি ২০১৫ সালে নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন অনলাইনে।

প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘প্রেমাতাল’। ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয় তাঁর এই উপন্যাস। তাঁকে সুপরিচিতি এনে দেয় ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘অভিমানিনী’ উপন্যাসটি।‘ফানুস’উপন্যাসের জন্য নবীন সাহিত্যশ্রেণিতে ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২’পাচ্ছেন মৌরি মরিয়ম। এটি তাঁর প্রথম পুরস্কার।