কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১১৬তম জন্মদিন আজ

Looks like you've blocked notifications!
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি : পিন্টারেস্ট

প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাসাহিত্যে হয়ে ওঠেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। কথাসাহিত্যে জায়গা করে নেন শ্রেষ্ঠত্বের স্থানে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীজুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় সময়ে বাংলা কথাসাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে নতুন বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয়, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। মানিক তার ছোট্ট জীবন কালজয়ী  অসংখ্য লেখা রেখে গেছেন। মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্তিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ, ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ, পদ্মানদীর মাঝি, পুতুলনাচের ইতিকথার মতো লেখা এসেছে তার কলমে। তার লেখায় নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র।‌ আজ এই প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিকের জন্মদিন।

১৯০৮ সালের ১৯ মে ভারতের বিহারের সাঁওতাল পরগনা, বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন এই লেখক। যদিও তার পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের বিক্রমপুরে।

জীবনের প্রথমভাগে তিনি ফ্রয়েডীয় মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া মার্কসবাদও তাকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিল। তার অধিকাংশ রচনাতেই এই দুই মতবাদের নিবিড় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ব্যক্তিজীবনে মানিক ছিলেন মধ্যবিত্ত মানসিকতার উত্তারাধিকারী। তার প্রথম গল্পগুচ্ছ অতসী মামী ও অন্যান্য সংকলনে সব কয়টি গল্প এবং প্রথম উপন্যাস দিবারাত্রির কাব্য মধ্যবিত্ত জীবনভিত্তিক কাহিনীতে গড়া।

এ ছাড়া গ্রামীণ হতদরিদ্র মানুষের জীবনচিত্রও তার বেশকিছু লেখায় পাওয়া যায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যে বস্তুবাদের প্রভাব লক্ষণীয়। মনুষ্যত্ব ও মানবতাবাদের জয়গানই তার সাহিত্যের মুল উপজীব্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের ভাঙ্গা-গড়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবকে তিনি তার সাহিত্যে চিত্রায়িত করেছেন। সমাজের শাসক ও পুঁজিপতিদের হাতে দরিদ্র সমাজের শোষণ-বঞ্চনার স্বরূপ তুলে ধরেছেন সাহিত্যের নানান চরিত্রের আড়ালে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বমোট ৪০টি উপন্যাস ও ৩০০টি ছোট গল্প রচনা করেছেন। তার লেখা অন্যতম ছোটগল্প হলো মাসি-পিসি, যেটি সর্বপ্রথম ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় ১৩৫২ বঙ্গাব্দের চৈত্র সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।

এ ছাড়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসীমামী, প্রাগৈতিহাসিক, ছোটবকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি গল্পসংকলন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। ইংরেজি ছাড়াও তার রচনাসমূহ বহু বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

১৯৩৮ সালে এই কথাসাহিত্যিক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৪৪ সালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। এ সময় থেকে তার লেখায় কম্যুনিজমের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ১৯৪৬ সালে প্রগতি লেখক সংঘের যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৪৬ সালে ভারতের দাঙ্গা-বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন এবং ১৯৫৩ সালে প্রগতি লেখক ও শিল্পী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মাত্র ৪৮ বছর বয়সে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী এই কথাসাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে।