গণিতমামার ভূত রহস্য

Looks like you've blocked notifications!

কয়েক মাস আগের কথা। রবিন পড়ছিল। যেহেতু পরীক্ষা সামনে, তাই সে রাত জেগেই পড়ে বেশি। কিন্তু আজ তার বেশ ঘুম পাচ্ছিল।

ঘুম তাড়ানোর জন্য সে মামার রুমে ঘিয়ে হাজির।

মামা বলে, কি রে ঘুমাসনি?

না মামা। ঘুম আসছে না।

তাহলে বস আমার সাথে।

তুমি কী করছ?

একটা অঙ্কের হিসাব কষছি।

অঙ্ক আমি ভালো পারি, আমায় বল।

আরে ধ্যাত সেই অঙ্ক না।

ওহ আচ্ছা। এদিকে রান্নাঘরে ঝনঝন শব্দ শুনতে পেয়ে রবিন ঘাবড়ে গেল।

মামা শুনে বলে, কিসের শব্দ রে?

জানি না মামা।

মা উঠেছে বোধ হয়। কিন্তু না, শব্দটা আবার বাজেভাবে ধরা দিল। রবিন এবার বেশ ঘামছিল। মামা, ভূতটুত না তো?

দাঁড়া দেখছি।

মামা হকস্টিক নাও।

আরে লাগবে না।

রান্নাঘরে দুজন গিয়ে দেখে কিছু নেই। সব ঠিকঠাক। সব কিছুই  ঠিক আছে। কিন্তু রান্নাঘরে যে টিয়া পাখি ছিল না, সেটা তারা খেয়াল করেনি। গণিতমামার মায়ের খুব পাখি পালার শখ। তিনি সব জায়গায় কোনও না কোনও পাখি রাখেন। তার পাখির শব্দে ঘুম ভাঙে। এতে তিনি মহা আনন্দ পান। সে রাতে রবিন মামার সাথেই ঘুমিয়ে গেল ভয় পেয়ে।

সকালে মায়ের চিৎকারে সবার ঘুম ভাঙে। গণিতমামা আর রবিন ছুটে এসে দেখে মা কাঁদছে।

গণিতমামা বলে, কী হয়েছে মা কাঁদছ কেন?

আমার পাখি নেই, টিয়া পাখি নেই। কই গেলো রে বাবা।

তুমি শান্ত হও, আমি দেখছি। কান্না করো না।

গণিতমামা আর রবিন ছুটোছুটি করছে। বাইরে সব জায়গায় দেখল কোথাও পেল না। এক পর্যায়ে গণিতমামা দেখে রান্নাঘরের বাইরে নিচে টিয়াপাখিটি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়া। তার মাথা নেই। শুধু নিচের অংশটা আছে। খুব বীভৎসভাবে তাকে মারা হয়েছে। মাকে এ কথা বলা যাবে না। মা জানতে পারলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। আগে জানতে হবে এই কাজ কার? গণিতমামা তাই মাকে কিছু বলল না।

বিকেলে দুজন মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল। রবিন বলল, কে করতে পারে এই কাজ?

তা ভাবছি। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে কোনও কুকুর ওঠা সম্ভব নয়। এই কাজ মানুষের।

ঠিক বলেছ মামা। আমার দেখে বমি এসেছে মামা। মানুষের মতো পাখিটাকে মারা হয়েছে।

যে-ই করেছে, মায়ের সাথে শত্রুতামি করেই করেছে।

হুমম।

চল মাকে কিছু জিজ্ঞেস করি।

চল। গণিতমামা আর রবিন মায়ের কাছে এসে বসল। মা, তুমি কি রাহেলা খালাকে কিছু বলেছিলে। আজ দুই দিন সে আসে না কেন?

দুই দিন শরীর খারাপ বলে ছুটি নিয়েছে।

তার সাথে তোমার কোনও তর্ক বা এমন কিছু হয়েছে?

না, শুধু বলেছি পাখিগুলোর যত্ন একটু বেশি করে নিতে, আমার না নিলেও চলবে। পাখিদের ওপর তার বিরক্তি একটু বেশি।

আর কিছু?

হ্যাঁ, এক দিন তাকে দেখে টিয়া বলেছিল তুই চোর তুই চোর। আমার সামনে এই কথা বলাতে রাহেলা খেপে গিয়েছিল।

বুঝেছি এইবার। তুমি রাহেলা খালার বাসায় ফোন করে কাল আসতে বলবে, অন্য কিছু বলবে না।

আচ্ছা বাবা। গণিতমামার মা রাহেলাকে ফোন করে আসতে বলল।

সে একটু  জবুথবু হয়ে আছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি আসামি ধরা পড়ে গেল। গণিতমামাকে সে এমনিতেই ভয় পায়। মনে মনে ভাবে আর রেহাই নেই।

গণিতমামা চেয়ার টেনে বসল খালার সামনে। বলে, খালা কেমন আছেন?

জি, ভালো আছি বাবা। গণিতমামা লক্ষ করল তার হাতে একটি দাগ। গণিতমামা এবার নিশ্চিত এটা রাহেলার কাজ।

খালা, আপনি কি কিছু লুকোচ্ছেন?

না বাবা, কী লুকাব?

আপনার হাতে কিসের দাগ।

আমার নাতি কামড় দিয়েছে।

কিন্তু এটা তো ঠোকরের চিহ্ন মনে হচ্ছে।

খালা আপনি আমাকে সব সত্যি বলেন, আমি পুলিশে দেব না। শুধু সত্যিটাই বলেন।

রাহেলার মুখ ঘেমে অস্থির। হাত-পা কাঁপছে। ভয়ে গা থরথর।

রাহেলা পায়ে ধরে বলে, বাবা আমি কিছু করিনি। আমি কিছু করিনি। আমার ছেলে বুঝতে পারেনি, আপনাদের গ্রিল ভেঙে চুরি করতে এসেছিল, টিয়া পাখি চোর চোর চিৎকার করলে তাকে আমার ছেলে গলা টিপে মেরে ফেলে। সেখানে সে মারা যায়। আমাদের মাফ করে দাও ভাই।

তাই বলে এইভাবে একটি অবুঝ পাখিকে হত্যা করবে? হায় আল্লাহ! আহা, মানুষ কত নিষ্ঠুর! এই বলে গণিতমামা তার ছেলেকে যা ব্যবস্থা করার দরকার তা-ই করল।