জেনে নিন বইমেলার খুঁটিনাটি সব তথ্য

Looks like you've blocked notifications!
অমর একুশে গ্রন্থ মেলা। ছবি : এনটিভি

বইপ্রেমীদের জন্য প্রাণের অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হচ্ছে আগামীকাল বুধবার। বিকেল তিনটায় মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটের কারণে গত দুই বছর বইমেলা উদযাপনে অসুবিধা হলেও যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবার। তাই উচ্ছ্বাসিত লেখক-পাঠক-পাঠিকা। যদিও বই প্রকাশে কাগজ ও আনুসঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় বেচাবিক্রি নিয়ে শঙ্কায় আছেন প্রকাশকরা। এদিকে, মেট্রোরেলের কাজ সামনে রেখে মেলার ডিজাইনে আনা হয়েছে পরিবর্তন। সুষ্ঠু পরিচালনায় নিরাপত্তা দিতে থাকছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিবেদনের এ পর্যায়ে থাকছে বইমেলার খুঁটিনাটি…

ইউনিট ও প্যাভিলিয়ন সংখ্যা

এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায় এ মেলা বসছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকছে।

উদ্বোধনী দিনে সর্বসাধারণের জন্য মেলা উন্মুক্ত হবে যখন

আগামীকাল (বুধবার) বিকেল ৩টায় এই মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সাতটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন এবং নির্বাচিত ১৫ জনকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রদান করবেন। এরপর বিকেল ৫টায় সর্বস্তরের জনসাধারণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে মাসব্যাপী এ মেলা।

যে পথে প্রবেশ, যে পথে বাহির

এবার বইমেলার আঙ্গিকগত ও বিন্যাসে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে, মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ এবার একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে, অর্থাৎ মন্দিরের গেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। গতবারের প্রবেশপথটি বাহির-পথ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এ ছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশন অংশে আরও তিনটি প্রবেশ ও বাহির পথ থাকবে।

নামাজের স্থান

গতবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে ১৮২টি স্টল এবং ১১টি প্যাভিলিয়ন ছিল। পাঠক, দর্শক এবং প্রকাশকদের সম্মিলিত আহ্বান ছিল— এবারের মেলায় যেন তাদের দৃশ্যমান অংশে সন্নিবেশ করা হয়। তবে গতবারের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশনের স্থানটিকেও এবারের মেলার একটি অংশ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানে নামাজের স্থান করা হয়েছে। থাকছে অন্যান্য পরিষেবাও।

শিশুচত্বর

শিশুচত্বরটি মন্দির গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে। শিশুরা  যেন অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে, সেজন্য এভাবে বিন্যাস করা হয়েছে বলে দাবি মেলার আয়োজক কমিটির।

লিটল ম্যাগাজিন চত্বর

এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থ উন্মোচন অংশের কাছাকাছি। সেখানে ১৫৩টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

ওয়াশরুম

ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে অন্যান্য পরিষেবার মধ্যে শৌচাগারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বই কিনলে কমিশন মিলবে যত

বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। 

সেমিনার-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে যা থাকছে

বাংলা একাডেমির তিনটি প্যাভিলিয়ন এবং শিশুকিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য একটি স্টল থাকবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে। এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১৩৬টি বই।

তথ্যকেন্দ্র

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। অমর একুশে বইমেলার প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে একটি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুটি তথ্যকেন্দ্র থাকবে।

মিডিয়া সেন্টার

সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে একটি মিডিয়া সেন্টার থাকবে। 

ডিজিটাল ডিসপ্লে

বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে জমাকৃত নতুন বইয়ের প্রচ্ছদ, তথ্য এবং বইমেলার মানচিত্র পর্যায়ক্রমে প্রদর্শিত হবে। মেলায় ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে। মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার।

অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও প্রকাশকদেরকে জন্য থাকছে যেসব পুরস্কার

অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২২ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। 

এ ছাড়া ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে। 

তিন স্তরের নিরাপত্তা

বইমেলার প্রবেশ ও বাহির পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‍্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। 

বইমেলার সময়সূচি

বইমেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।