ফজলুল কবিরীর একগুচ্ছ কবিতা

Looks like you've blocked notifications!

প্রত্নের চিরকুট

প্রত্ন, সুবোধ শিশুর মতো তাকায় আমার দিকে 

বাবাইয়ের মুখের কালো তিলে খোঁজে কৌতূহলের আগুন

স্বপ্নে-পালানো মায়ের প্রতীক্ষায় তার ক্ষণগুলো

ফুটে ওঠে স্ফুলিঙ্গের দাগ হয়ে

দেয়ালের রঙিন পলেস্তারায়

দূরের রাস্তায় বেজে ওঠা হর্ন জানালা গলিয়ে

ঢুকে পড়ে প্রত্নের গুহায়

দেয়ালের পিঁপড়ার সারি সমূহ সংকটের আঁচ পেয়ে

এদিক-ওদিক তাকায়, ভয়ার্ত হরিণের মতো

প্রত্ন তারও অধিক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে

বাবাইয়ের ভয়ার্দ্র তিলটার দিকে

প্রত্ন দাঁড়িয়েই আছে—গ্রিল ধরে

পায়রার মলিন পায়ের ছাপে হাত রেখে

নিচের রাস্তায় কৌতূহলের চরিত্রগুলো

তার দিকে তাকিয়ে পলক ফের ছুটে যাচ্ছে

তাড়া-খাওয়া কুকুরের মতো

ডগ! যেই না উৎফুল্ল চিৎকারে কেঁপে ওঠে

পাশের গুহার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা

ইশারার সমব্যথী দেবদূত এক

প্রত্ন, ফের কুকুরের খোঁজে

নিচের রাস্তায় কৌতূহলের বারুদ ছড়িয়ে দেয়—সোৎসাহে

ঘুমিয়েছে প্রত্ন, ইশারায় তার শ্বাস নাকে নিয়ে

বিনিদ্র রাতের শোধবোধ শেষে

মায়ের ক্লান্তির ছাপ ধীরে ধীরে বেরিয়ে যাচ্ছে জানালা গলিয়ে

ঘুমের নাজুক মুহূর্তগুলো হয়ে ওঠে

শোকের গুমোট হাহাকার

বুকের জমাট দুধের তামাম অপচয় ছাপিয়ে

দলা পাকায় কান্নার স্বর

দেয়ালের চারপাশে

কেন তবে এত কান্না—

নিঝুম ছুটির দুপুর গলিয়ে

হাহাকার কেন জমে ওঠে?

রাতের গভীর বুদবুদে জমে থাকা ক্লান্তি

দেয়ালের উজ্জ্বল আলোয়

ছড়িয়ে কি দেয়

প্রত্নের গোপন বার্তা?

যেইমাত্র দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কোলে

প্রত্নের সুডৌল মুখে দেবদূত হেসে ওঠে

বহুবার এই দৃশ্য দেখি

ঘুমে-জাগরণে

তবু তার নরম বাহুর ওমে খুঁজি

স্বাধীনতার গোপন কোনো স্বাদ

ইচ্ছে করে তার বুকে মুখটা আনত করি

হৃদয়ের তপ্ত শ্বাসে দিই স্বস্তির সহজ নিরাময়

রঙিন বলের খোঁজে তার দস্যিপনা

চারকোনা দেয়ালের গায়ে

ছড়িয়ে দিয়েছে হইহুল্লোড়ের স্বাদ

ধীরে, শান্ত পদক্ষেপে যাই এগিয়ে—বলের খোঁজে

তারপর বুকের গভীর ওমে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে

দেখি, গড়িয়ে পড়ছে

শৈশবের হারানো এক ক্ষয়িত স্মৃতির দাগ

প্রত্ন, নিবিড় বিস্ময়ে মাকে দেখে, বলে

মানুষ হারিয়ে গেলে ভূত হয় কেন?

তার ব্যথাতুর মুখে ফুলে-ফেঁপে ওঠে

গোপন কোনো বেদনার ধারাভাষ্য

যেন কোনো এক ক্ষতের গভীরতর

চিহ্ন—তারপর, তারও অধিক বিস্ময়ে

মাকে বলে—ধরো, যদি তুমি মরে যাও

আত্মাটা বেরিয়ে যায় তোমার শরীর

ফুঁড়ে, আমি ফের দৌড়ে গিয়ে ছুঁয়ে দেব

তোমার আত্মাকে, তুমুল জড়িয়ে ধরে

আবার ঢুকিয়ে দেব টেনে বা হিঁচড়ে

তোমার শরীরে, ফের তুমি জেগে উঠে

আমাকে গভীর ইশারায় টেনে নেবে

তোমার জঠরে, ঘুমে-বিস্ময়ে-আবেশে

[লেখক পরিচিতি : ফজলুল কবিরী। জন্ম অক্টোবর ০৯, ১৯৮১। লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্ততা দুই দশক। তাঁর সাহিত্যকর্ম কথা, উলুখাগড়া, উত্তরাধিকার, পুষ্পকরথ, সূনৃত, ছান্দস, চারবাক, সমুজ্জল সুবাতাস, ঘুড়ি ইত্যাদি ছোটকাগজসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ওয়েবজিনে প্রকাশিত। গল্পগ্রন্থ : বারুদের মুখোশ, প্রকাশকাল : একুশে গ্রন্থমেলা, ২০১৫; প্রকাশক : বাঙলায়ন। গল্পগ্রন্থ : ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া গল্প, প্রকাশক : জেব্রাক্রসিং, প্রকাশকাল : একুশে গ্রন্থমেলা, ২০১৮। উপন্যাস : ঔরসমঙ্গল, প্রকাশকাল : একুশে গ্রন্থমেলা, ২০১৭, প্রকাশক : বেহুলাবাংলা]