‘বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ কারাজীবন বাঙালি জাতির দীর্ঘ অমানিশার সমার্থক’

Looks like you've blocked notifications!
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে বাংলা একাডেমির অনলাইনে আয়োজন। ছবি : সংগৃহীত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমি ‘শোক ও শক্তির মাস আগস্ট ২০২১’ শিরোনামে অনলাইনে আলোচনা, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতাপাঠ ও আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

বাংলা একাডেমি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গতকাল সোমবার বেলা ৩টায় অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিনের আয়োজন অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহিদ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ‘বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন : অন্ধকারে দীপশিখা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক রাশিদ আসকারী। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্বরচিত ‘শোকের চিহ্নগুলি তোমার’ কবিতা পাঠ করেন কবি অসীম সাহা। কবি মযহারুল ইসলাম রচিত ‘একটি সূর্যের হাত ধরে’ কবিতার আবৃত্তি পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বইয়ের ডিজিটাল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব এ. এইচ. এম. লোকমান। সভাপতির বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

প্রাবন্ধিক রাশিদ আসকারী বলেন, বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে দীর্ঘতম কারাভোগকারী জাতীয়তাবাদী নেতাদের অন্যতম বঙ্গবন্ধু। তাঁর দীর্ঘ কারাজীবন বাঙালি জাতির দীর্ঘ অমানিশার সমার্থক। আর তাঁর চূড়ান্ত কারামুক্তি বাঙালি জাতির চূড়ান্ত মুক্তির অর্থাৎ আলোর সমার্থক। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে তিনি যখন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন, কেবল সেই লগ্নেই বিজয়ের অর্থ পূর্ণতা পায়।

রাশিদ আসকারী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনই বাঙালির সবচাইতে বড় রাজনৈতিক ঐতিহ্য, শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকার। সেই উত্তরাধিকার সংরক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। আর সে জন্য প্রয়োজন যত্নশীল বৌদ্ধিক প্রয়াস। তাঁর কারাজীবনের প্রতিদিনের প্রতিটি ঘটনার কার্যকারণ নির্ণয়ের মধ্যে দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস অনেক বেশি সুরক্ষিত এবং সত্যায়িত হতে পারে, বাঙালির রাজনৈতিক ঐতিহ্য সংরক্ষিত হতে পারে।

সভাপতির বক্তব্যে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ১৯৭১ সালের ২ আগস্ট জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে শক্তি সঞ্চয় ঘটে। অপরদিকে, পাকিস্তানি রাষ্ট্রশক্তি বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের বাস্তবতা স্বীকার করে। বাংলাদেশের ভেতরে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে গেরিলাযুদ্ধ জোরদার হয়। আর ১৯৭৫-এর ২ আগস্ট উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি মি. কিম ইল সুং-এর বিশেষ প্রতিনিধি মি. ইয়াং হাইওন সপের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে এসে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন এবং জাতীয় স্বাধীনতা সংহতকরণে বঙ্গবন্ধুর নির্ভুল নেতৃত্বাধীনে নতুন সমাজ গঠনের সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণের বিশাল সাফল্যের প্রতি উত্তর কোরিয়ার গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। একই দিনে ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব বাস্তবায়নে বেসরকারি শিল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে ভাষণ দেন উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন ছিল অনন্ত আলোকায়নের পথে সোচ্চার অভিযাত্রা। কারান্তরাল থেকে জাতীয় স্বাধীনতার বিষয়ে তাঁর উপলব্ধি আরও দৃঢ় ও প্রগাঢ় হয়। আমাদের স্মরণে রাখতে হবে, কারাবাস থেকেই তাঁর অসামান্য রচনা কারাগারের রোজনামচার জন্ম হয়। এই রোজনামচা রচনার নেপথ্যে জাতিমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং এটি বই আকারে প্রকাশের বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানও আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘শোক ও শক্তির মাস আগস্ট ২০২১’ শিরোনামে বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী আলাচনাসভা, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতাপাঠ ও আবৃত্তি  অনুষ্ঠান আজ শুরু হবে বেলা ৩টায়। অনুষ্ঠানটি বাংলা একাডেমির ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।