মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ‘১৯৭১ ডাঁশার চাষী ক্লাব যুদ্ধ’

Looks like you've blocked notifications!

স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা কুষ্টিয়া। জেলায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে ঘটেছে অসংখ্য বীভৎস ঘটনা। এ জেলায় রয়েছে ছোটবড় অনেক সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্র, গণহত্যা ও গণকবর এবং বদ্ধভূমি। তার মধ্যে ডাঁশার চাষী ক্লাব যুদ্ধক্ষেত্র ও গণকবর অন্যতম, যা এখন ইতিহাসের পাতায় ‘ডাঁশা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ও রক্ত ঋণ-২’ নামে পরিচিত। একটি অবিস্মরণীয় ও উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও এই যুদ্ধের ঘটনা ও বর্বরতার ইতিহাস বই আকারে প্রকাশ হয়নি এবং কোনো ইতিহাস লেখা হয়নি। প্রথমবারের মতো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গবেষক ইমাম মেহেদী কলম ধরেছেন ডাঁশার চাষী ক্লাব যুদ্ধ নিয়ে। বেহুলা বাংলা প্রকাশন থেকে গত বছর প্রকাশিত হয়েছে ‘১৯৭১ ডাঁশার চাষী ক্লাব যুদ্ধ’। মাঠপর্যায়ের এই তথ্যানুসন্ধানী বইটি এরই মধ্যে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। পাঠের সুযোগ হয়েছে আমারও।

ডাঁশার চাষী ক্লাব যুদ্ধের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে লেখক কুষ্টিয়া জেলার খোকসা-কুমারখালী, ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা, রাজবাড়ী ও মাগুরা জেলার যোগসূত্র এবং বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সংঘটিত যুদ্ধের অনেক অজানা তথ্য ও রোমহর্ষক ঘটনা তুলে এনেছেন একেবারে শেকড় থেকে নৈপুণ্যতার সঙ্গে।

অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করেছেন। উপস্থাপন করেছেন সহজ সরল, প্রাঞ্জল ও সাবলীল ভাষা এবং বর্ণনায়। সংগ্রহ করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অনেক অজানা তথ্যের ইতিহাস ও কিছু দুষ্প্রাপ্য ছবি।

মুক্তিযুদ্ধের এত বছরের পুরোনো ইতিহাসের আলামত ও তথ্য প্রমাণ অনেকাংশেই ধ্বংস হয়েছে। সময়ের সঙ্গে রাজাকারদের আধিপত্য ও চেহারা কিছুটা ভিন্ন মাত্রা নিয়ে বেড়েছিল সময়ের প্রেক্ষাপটে। ফলে তথ্য-প্রমাণের জন্য লেখককে ছুটতে হয়েছে বহুপথ বহুজনের কাছে। করতে হয়েছে অনুসন্ধানের অনেক খোঁড়াখুঁড়ি।

যেতে হয়েছে চাষী ক্লাব যুদ্ধের সাথে সংশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহতদের কাছে। সংগ্রহ করেছেন  মৌখিক ইতিহাস। খুঁজে বের করেছেন ওই যুদ্ধে শহীদ পাঁচজন পরিবারের সদস্যদের।

সাক্ষাৎকারে অনেক ইতিহাস তুলে এনেছেন ওই যুদ্ধের যুদ্ধকালীন কমান্ডার লুৎফর রহমানের কাছ থেকে।

১৯৭১ সালের ২২ জুন ডাঁশার চাষী ক্লাব যুদ্ধে এলাকার কুখ্যাত রাজাকার খেলাফত চেয়ারম্যান ও তার বাহিনীর হাতে শহীদ হন কুদ্দুস, ইকবাল, লুৎফর রহমান ও গোপাল ওরফে লুৎফর। মাঠপর্যায়ে গবেষণা করে তুলে নিয়ে এসেছেন পুরো পরিবারের তথ্য। ওই যুদ্ধে আহত হয়ে বেঁচে থাকা আব্দুল মালেক, ছাত্তার, ওয়াজেদ ও সুলতানের যুদ্ধদিনের সেই ভয়াবহ কাহিনি তুলে ধরেছেন বইটিতে। যে ইতিহাস আগামীদিনের দলিল। সাক্ষাৎকার গ্রহণের কিছুদিন পরেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী। এই ইতিহাস সংগ্রহ এবং গবেষণা না করলে হয়তো দিনে দিনে আরো হারিয়ে যেত অনেক কিছু। এ ছাড়া ওই যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারীদের বয়ান এবং সহায়তাকারীদের ভাষ্য রয়েছে এই বইয়ে।

পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার পর রাজাকারদের আনন্দ-উল্লাস, লাশকে ক্ষতবিক্ষত করা, টেনেহিঁচড়ে ফেলে রাখা, গোসল, কাফন ও জানাজাবিহীন গণকবর দেওয়ার সেসব হৃদয়বিদারক কাহিনি রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার পর রাজাকারদের আধিপত্য, স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি ও অন্যান্য ভয়ঙ্কর ইতিহাস জানতে হলে পড়তে হবে বইটি।

নান্দনিক প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী চারু পিন্টু। ১০০ পৃষ্ঠার বইটির দাম ধরা হয়েছে ২২০ টাকা। পাওয়া যাচ্ছে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলার বেহুলা বাংলা প্রকাশনের ৪৬৯, ৪৭০, ৪৭১ নম্বর স্টলে। এ ছাড়া লিটল ম্যাগ চত্বরের সাহিত্যের ছোট কাগজ ‘শব্দকুঠির’ ও ‘পর্ব’-এর  স্টলে।