যে ১০টি বই জীবনে একবার হলেও পড়া উচিত

Looks like you've blocked notifications!

লেখকদের মতে, একজন মানুষকে সবকিছু থেকে দূরে সরে যেতে বা পালাতে সাহায্য করে গল্প, উপন্যাস বা সাহিত্য। ইংরেজি ভাষায় যাকে বলা হয় ‘এস্কেপিজম’। এই পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অন্য যেকোনো শিল্পের চেয়ে সাহিত্যের ক্ষেত্রে তীব্র ও শক্তিশালী।

বর্তমান সময়ে অনেকের মধ্যেই আকারে বিশাল বা মোটা বইগুলো পড়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যায়। তবে ই-রিডারের এই যুগে হাজার হাজার শব্দকে পকেটে নিয়ে চলা খুব কঠিন কিছু নয়।

চলুন, একনজরে দেখে নেওয়া যাক সাহিত্যের ১০টি উপন্যাসের নাম, যা সবার পড়ার তালিকাতেই থাকা উচিত।

হারম্যান মেলভিলের মোবি-ডিক (দ্য হয়েল)

যুক্তরাষ্ট্রের লেখক মেলভিলের ৭২০ পৃষ্ঠার বই ‘মোবি-ডিক (দ্য হোয়েল)’ এক অনবদ্য সৃষ্টি। কেন্দ্রীয় চরিত্র আহাবকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই বইয়ের গল্প। হোয়েলিং শিপ ‘পিকোড’-এর ক্যাপ্টেন হলেন আহাব। বিশালাকার হোয়াইট স্পার্ম তিমির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। কারণ, এই তিমি তাঁর হাঁটুর নিচ থেকে পায়ের অংশ কামড়ে নিয়ে গেছে। এ জন্য পাগলের মতো সাগরে সেই তিমির অনুসন্ধান করে চলেন আহাব।

গল্পের বর্ণনাকারী হলেন ইসমায়েল নামের এক নাবিক। এই বইয়ের অন্যতম জনপ্রিয় উক্তি হলো ‘আমাকে ইসমায়েল বলে ডাকুন’।

পাণ্ডিত্যপূর্ণ, গভীর অর্থবহ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত হয় ‘মোবি-ডিক (দ্য হোয়েল)’ বইটি।

হানিয়া ইয়ানাগিহারার আ লিটল লাইফ

ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল এ বইটি। উপন্যাসটি গড়ে উঠেছে চার বন্ধুর জীবনের গল্পকে ঘিরে। কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে তাঁরা অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে নিউইয়র্ক শহরে যান।

এ বইয়ের চরিত্রগুলোর মধ্যে জেবি হলেন শিল্পী, উইলিয়াম একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিনেতা এবং ম্যালকম একজন স্থপতি। আর জুড হলেন নিজের ক্ষতি করতে চাওয়া একজন আইনজীবী।

জুডের রয়েছে একটি রহস্যময় অতীত। আর এ বইয়ে তাঁর এই গল্পই বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

গল্প এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জুডের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টিও বেশি প্রকাশ পেতে থাকে। যেখানে কয়েক দশকের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

জর্জ এলিয়টের মিডলমার্চ

এলিয়টের মাস্টারপিস হিসেবে বিবেচিত উপন্যাস ‘মিডলমার্চ’ একটি কাল্পনিক শহরের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জীবন নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে।

ভূমি মালিক থেকে শুরু করে খামার বা কারখানার শ্রমিক পর্যন্ত সবার কথাই স্থান পেয়েছে বইটিতে।

তবে মূল দৃষ্টিপাত করা হয়েছে দুটি চরিত্রের ওপর। একজন হলেন জেদি ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন ডোরোথিয়া ব্রুক এবং অন্যজন আদর্শবাদী টারটিয়াস লিডগেট। তাঁরা দুজনই বিপর্যস্ত বৈবাহিক জীবনের শিকার।

উনিশ শতকে লেখা হলেও বইটিতে রয়েছে অবিশ্বাস্য রকম আধুনিকতাবোধ। কারণ, বইটিতে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির সীমাবদ্ধতা এবং এই ত্রুটিপূর্ণ পৃথিবীর একজন নীতিবান ব্যক্তি হয়ে ওঠার পথে নানা সংগ্রামের মতো বড় বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

চার্লস ডিকেন্সের ব্লিক হাউস

ডিকেন্সের দীর্ঘতম উপন্যাস ‘ব্লিক হাউস’। বইটি লেখা হয়েছে জার্নডাইস পরিবারের গল্পকে ঘিরে, যাদের আশা উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পদ পাওয়া। কিন্তু বারবার ব্যর্থতার মুখে পড়ে সেই স্বপ্ন। কারণ, জার্নডাইস অ্যান্ড জার্নডাইস মামলাটি দীর্ঘকাল ধরে আইনি মারপ্যাঁচের মধ্যে চলছে এবং প্রজন্মান্তর ধরে চলে আসছে।

মামলাটি এতটাই জটিল হয়ে পড়ে যে বেঁচে থাকা উত্তরাধিকাররা এই মামলার কিছু বুঝে উঠতে পারে না।

ডিকেন্স এ বইটিতে ‘কোর্ট অব চ্যান্সেরি’ নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন। এই আদালতে একটি মামলা কয়েক দশক ধরে চলতে পারে। উপন্যাসটিতে অসংখ্য চরিত্র রয়েছে এবং বেশ কয়েকটি পার্শ্ব কাহিনিও রয়েছে।

মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসের ডন কিয়োটে

ডন কিয়োটে একজন মধ্যবয়সী স্প্যানিশ ভদ্রলোক, যিনি বীরদের অনেক রোমান্স গাঁথা পড়েন। সেই থেকে তিনি তলোয়ার তুলে একজন ভবঘুরে বীর হয়ে ওঠার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের পুরোনো ঘোড়া এবং বাস্তববাদী মানসিকতা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বিশ্বব্যাপী অভিযাত্রার উদ্দেশ্যে।

ডন কিয়োটের বীরত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে উইন্ডমিলের সঙ্গে লড়াইয়ের চেষ্টা করা। যেগুলোকে তিনি দৈত্য ভেবে ভুল করেছিলেন, এমনকি এক পাল ভেড়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেন তিনি।

প্রভাবশালী এই সাহিত্যকে প্রথম আধুনিক উপন্যাস বলে বিবেচনা করা হয়।

ডেভিড ফস্টার ওয়ালেসের ইনফিনিট জেস্ট

ডেভিড ফস্টার ওয়ালেসের এই মহাকাব্যটি অদূর ভবিষ্যতের ডিস্টোপিয়াকে ঘিরে লেখা হয়েছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো—এই তিন দেশ উত্তর আমেরিকান জাতিগত সংস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়।

ডিস্টোপিয়া হলো সাহিত্যের একটি শাখা। এই শাখায় এমন একটি কাল্পনিক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো নিয়ে কথা বলা হয়, যেখানে কেবল দুর্ভোগ আর অবিচারের রাজত্ব।

মূল গল্পটি শুরু হয় একটি টেনিস একাডেমি ও মাদকাসক্ত নিরাময় সংস্থাকে কেন্দ্র করে।

বইটি এর পরীক্ষামূলক কাঠামোর জন্য বেশ জনপ্রিয়, যেখানে ৩৮৮টি এন্ড নোটস রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটির নিজস্ব পাদটীকা রয়েছে।

লিও টলস্টয়ের ওয়ার অ্যান্ড পিস

টলস্টয়ের মহাকাব্যটি রাশিয়ার নেপোলিয়ন যুগকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্র এবং হোম ফ্রন্টের মধ্যে তিনটি কুখ্যাত চরিত্রকে ঘিরে এগিয়েছে এই বইয়ের গল্প।

চরিত্র তিনটি হলো : পেরে বেজুখভ—একজন কাউন্টের অবৈধ পুত্র, যিনি নিজের উত্তরাধিকারের জন্য লড়াই করছেন; প্রিন্স আন্দ্রেই বলকনস্কি—যিনি নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তাঁর পরিবারকে ছেড়ে চলে এসেছেন এবং নাতাশা রোস্তভ—একজন অভিজাত ব্যক্তির সুন্দরী অল্পবয়সী মেয়ে।

টলস্টয় একই সঙ্গে সেনাবাহিনী ও অভিজাতদের ওপর যুদ্ধের প্রভাব কেমন হয়, সেটি ফুটিয়ে তুলেছেন।

স্টিফেন কিংয়েদ্য স্ট্যান্ড

দ্য স্ট্যান্ড বইটি হলো একটি পোস্ট অ্যাপোক্যালিপটিক হরর-ফ্যান্টাসি ঘরানার বই। যেখানে বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার বা জৈব যুদ্ধের জন্য বিভিন্ন অসুখের দ্রুত পরিবর্তনশীল জীবাণু নিয়ে গবেষণা করার কথা বলা হয়।

দুর্ঘটনাক্রমে সেই জীবাণুগুলো একদিন একটি সুরক্ষিত গবেষণাগার থেকে বের হয়ে যায় এবং এই মহামারিতে বিশ্বের ৯৯ শতাংশেরও বেশি মানুষ মারা যায়।

বইটির দুটি বিকল্প সমাপ্তি রয়েছে। ১৯৭৮ সালে প্রথম প্রকাশিত ৮০০ পৃষ্ঠার মূল সংস্করণে সমাপ্তি ছিল এক রকম। সে সময় প্রকাশকরা এর চেয়ে বড় পাণ্ডুলিপি মুদ্রণ করতে পারতেন না।

তবে ১৯৯১ সালের পরে পূর্ণ এবং অপরিবর্তিত সংস্করণ প্রকাশ করা হয়, যা ভক্তদের মধ্যে আরো আশার সঞ্চার করে।

বিক্রম শেঠের ‘আ সুটেবল বয়

বিক্রম শেঠের ‘আ সুইটেবল বয়’ উপন্যাসটি ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে ভারতবর্ষ বিভাজনের পরের প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখা হয়েছে। যেখানে তুলে ধরা হয়েছে চারটি একান্নবর্তী পরিবারের ১৮ মাসের গল্প।

গল্পের চরিত্র মিসেস রুপা মেহরার একমাত্র মেয়ে লতার জন্য একজন ‘উপযুক্ত পাত্র’ খুঁজে পাওয়ার প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে গল্প এগিয়ে যায়।

মার্সেল প্রুস্টের ইন সার্চ অব লস্ট টাইম

প্রাউস্টের মহাকাব্য ‘আ লা রিচার্চে দু টেম্পস পারদু’ (মূল ফরাসি শিরোনাম) বইটির পৃষ্ঠাসংখ্যা তিন হাজারের বেশি, যাকে ১৩টি ভলিউমে ভাগ করা হয়েছে। বইটির মোট শব্দসংখ্যা প্রায় ১৩ লাখের মতো।

এটি এখন পর্যন্ত দীর্ঘতম উপন্যাস হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে। বইটির গল্প লেখকের শৈশবের স্মৃতি এবং যৌবনের অভিজ্ঞতাগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।

তথ্যসূত্র : বার্তা সংস্থা ইউএনবি ও সংবাদমাধ্যম বিবিসি