হাফিজ রশিদ খানের কবিতা

Looks like you've blocked notifications!

অপর সভ্যতা

 

 

আমার যে সভ্যতা

           ছায়ায় তার তুমি হেঁটো না সারস

                   তফাতে-তফাতে পালকের যশ

                                    ছড়িয়ে গন্তব্যে চলো

                                  তোমার ক্রেঙ্কারে সেই কথা বলো

 

তোমাকে খুনের পর সভাসদ

          যে-মুকুট পরায় আমার শিরে

                     সেখানে রঙিন হয়ে ওঠে

                             তোমার পালকগুচ্ছ গানের মদিরে

 

পার্থক্য রচনা করো হে বিধুর

                  গাঙ্গেয় উপত্যকার প্রাণ

                            রক্তপিপাসু সভ্যতা

                                      আমার বন্দুকে

 

উড্ডয়নে দাও রুখে ...

 

ঝরাপাতায় বেড়ালের পায়ের আওয়াজে

 

পিচঢালা পথ বেয়ে এসেছে সভ্যতা

          বসনে ও হুকুমে ওরা তো রক্তচোখ

                               কাড়ে বাসনের ভাত

কঠিন পাথরে দেয়াল তুলেছে, ভেতরে জলসাঘর

 

ম্রো রমণী

      রুপোর ভূষণে বাঁধি গোত্রের নিয়ম

                         বুনি শস্যের আবাদ

                                প্রভুর প্রসন্ন ঋতুসমূহের সমারোহে

 

কালো পাগুলো এখানে হাঁটে সজ্জিত কাঁটার বর্মে

আমি নারী

          অমন চাহনি

                   দেখিনি কখনো

 

বুকে ফুঁ দিই ঝরাপাতায় বেড়ালের পায়ের আওয়াজে

           অপাত্মা তাড়াতে চেরাগে ছোঁয়াই দেশলাই

                             

দিয়ে গেছে এই মন্ত্র মায়ে আর বাপে...

 

লাকিং মে

 

মত্ত হাঙর গিলেছে মৎস্যকুমারীকে

            স্ফীতোদর দেখিয়ে সে

                     লেজ নাড়ছে বেবাম সাগরের বুকে

 

পাতি ও মাঝারি মীনদল

          বেঁচে গেছে ভেবে

               জলসভায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে আপাতত

                                        বড়-বড় চোখ মেলে

 

আরেকটি গ্রাসে তলিয়ে যাবার ত্রাসে

         কৃশ থেকে কৃশতর হচ্ছে

                 তাদের চলন অন্বেষণ ও বুদবুদ বিতরণের

                                         প্রান্তিক আকাঙ্ক্ষা

 

তীক্ষ্ম হারপুনে গাঁথি এইসব কঠিন হাঙরে...

 

নন্দিনী পরমা

 

কী বিস্ময় উরুসন্ধিতে, পৃথিবী কাঁদে

                         তোমার শয্যার পাশে

                           আবির্ভূত সত্তার কান্নায় দৃশ্যপট

                  নিবিড় বদলে যায় অনন্তর

সৃষ্টির দুয়ারে হাসো বেদনামোহিত

 

রক্ত রজঃ ও শক্তির ক্ষয়ে

তুমিই কী এনেছ সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর আবর্তন

          নেপোলিয়নের শৌর্য

                         অ্যারিস্টটলের প্রমা

                               করুণার আঁখিজল ছিন্নবসন পথের মাওলানা

 

তুমিই কী বয়ে যাও অনন্ত নির্ঝর

                    মহিরুহ শেকড় ভিজিয়ে

                                     গভীর-গোপন

 

প্রথম নির্ভুল হরণ হয় কি তোমার ত্রিশূলে

                    অলৌকিকের লৌকিক ভূতের ফসিল

 

সেই তুমিই তো হয়ে আছ গৃহশোভা

                         প্রতারক বিশ্বের নন্দিনী পরমা...

 

মা

 

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রচিত ভূখণ্ড তোমার অধীন

ফলভারানত বৃক্ষ তোমাকে কুর্নিশ করে

                           অমায় ও পূর্ণিমায়

                 প্রান্তবাসী জাগে তোমার ছায়ায়, স্বর্ণালি ঊষায়

                                  স্বচ্ছ স্রোতোস্বিনীগুলো লীন হয় সাগরের জলে

                           নিত্য উচ্ছল নাচনে

 

তোমার নরম মাটি ভেদ করে আসে কুশাগ্র অঙ্কুর

       তারা তোমার সহজমনের সন্ধানে

                                  অবিরত আরতি সাজায়

 

তুমি কুসুমিত পরগনা বসন্তের সাজিভরা

 

রক্তরাগের ঘূর্ণিতে মাতাল মধ্যরাতের হত্যাকাণ্ডে

                  বেগানা দুশমনের বুটে কেঁপে ওঠো

                       তখন বদলে যাও তুমি

         ছিঁড়ে ফেলো বুকের বসন

মুখোমুখি আসো যুদ্ধে

 

তুমি আমার মা

পৃথিবীর সর্বাধিক রৌদ্রজ্বলা নারী...