৩৫ খণ্ডে ঐতিহ্য প্রকাশ করছে সৈয়দ শামসুল হক রচনাসমগ্র

Looks like you've blocked notifications!
বইয়ের প্রচ্ছদ। ছবি : সংগৃহীত

বাংলা সাহিত্যের এমন কোনও শাখা নেই, যা তাঁর সৃষ্টিতে সমৃদ্ধ হয়নি। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, কাব্যনাট্য, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, শিশু-কিশোরসাহিত্য, সায়েন্স ফিকশন, সাহিত্য-কলাম, অনুবাদ, আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা, ভ্রমণকাহিনি—সব ক্ষেত্রেই তাঁর সদর্প পদচারণা। আশি বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে সব সময় সন্ধান করেছেন সাহিত্যের নতুন প্রকরণ। গল্পপ্রবন্ধ, গল্পপট, গাথাকাব্য-এর মতো নিজস্ব সাহিত্যশাখা তৈরি করেছেন। সাহিত্যকর্মের সমান্তরালে রচনা করেছেন স্মরণীয় কিছু চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য এবং কালজয়ী বাংলা গান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতোই তাঁর সৃষ্টিপ্রতিভা বিস্তৃত হয়েছে চিত্রকর্মেও। নিজের বেশকিছু রচনার ইংরেজি অনুবাদও করেছেন তিনি।

কর্কটরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত শেকসপিয়রের ‘হ্যামলেট’ বাংলায় রূপান্তরসহ লিখে গেছেন তিনটি কবিতার বই, একটি গল্পের বই এবং ‘ভাবনার ডানা’ নামের ব্যতিক্রমী ভাবনাগুচ্ছ।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত না করে পৃথিবীর পাঠশালায় শিক্ষিত হয়েছেন; আজ দেশ-বিদেশে তিনি নিজেই প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার বিষয়। ‘সব্যসাচী’ অভিধায় অভিষিক্ত সৈয়দ শামসুল হকের মঞ্চনাটক ‘নূরলদীনের সারাজীবন’, ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে মঞ্চস্থ হয়েছে। তাঁর কাব্য ‘পরানের গহীন ভিতর’ বাংলা কবিতার অমৃত সম্পদ। তাঁর বড়গল্প ‘রক্তগোলাপ’ বিশ্বসাহিত্যের জাদুবাস্তব ধারার পথিকৃৎ সংযোজন। তাঁর উপন্যাস ‘খেলারাম খেলে যা’ আঙ্গিক ও বিষয়শৈলীতে এক সাহসী উপস্থাপনা; একই সঙ্গে ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘নীল দংশন’ বা ‘বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ’ উপন্যাস বাঙালির মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেছে অনন্য ব্যঞ্জনায়। তাঁর প্রাবন্ধিক গদ্যগ্রন্থ ‘মার্জিনে মন্তব্য’, ‘কথা সামান্যই’ এবং ‘হৃৎকলমের টানে’ গোটা বাংলা সাহিত্যের পরিপ্রেক্ষিতেই অভিনব। বাংলা সাহিত্যের ভূগোলে তিনি ‘জলেশ্বরী’ নামের কল্পিত ভূখণ্ডের স্রষ্টা। সমস্ত অন্যায়-অসাম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি ‘জাগো বাহে কোনঠে সবাই’ বলে জাগরণের ডাক দেন।  তিনি সৈয়দ শামসুল হক।

জানা গেছে, সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য প্রকাশ করতে যাচ্ছে বাংলা সাহিত্যের গৌরব ‘সৈয়দ শামসুল হক রচনাসমগ্র’।

ঐতিহ্য জানিয়েছে, আগামী ২৭ ডিসেম্বর সৈয়দ শামসুল হকের ৮৫তম জন্মবার্ষিকীতে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর প্রকাশিত, অপ্রকাশিত, অগ্রন্থিত সমুদয় রচনার সংকলন। এই রচনাসমগ্রের বিশেষ আকর্ষণ সৈয়দ হকের মর্মানুবাদে পবিত্র কুরআনের নির্বাচিত অংশের বাংলা ভাষ্য, তাঁর রচিত চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য, তাঁর লেখা বিখ্যাত গান, তাঁর ইংরেজি রচনা এবং তাঁর অঙ্কিত চিত্রকর্মের প্রতিলিপি।

গত ৫ জুন ঐতিহ্যের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজন করা হয় একটি প্রকাশনা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। সৈয়দ শামসুল হক পরিবারের পক্ষে লেখকের স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হক ও ঐতিহ্যের পক্ষে প্রকাশক আরিফুর রহমান নাইম প্রকাশনা চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

১৮ হাজারের অধিক পৃষ্ঠার এই রচনাসমগ্রের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ৩৫ খণ্ডে প্রকাশিতব্য সৈয়দ শামসুল হক রচনাসমগ্রের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে নিয়মিত সংস্করণ ৩০ হাজার টাকা এবং রেক্সিন বাঁধাই ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা।

ঐতিহ্য পাঠকদের ক্রয়ক্ষমতার কথা চিন্তা করে অগ্রিম বুকিং কার্যক্রমের আওতায় নিয়মিত সংস্করণ মাত্র ১১ হাজার ৭০০ টাকায় আর রেক্সিন সংস্করণ মাত্র ১৩ হাজার ৫০০ টাকায় প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে আগ্রহী পাঠকদের আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে নিয়মিত সংস্করণের জন্য তিন হাজার ৯০০ টাকা এবং রেক্সিন সংস্করণের জন্য চার হাজার ৫০০ টাকা অগ্রিম প্রদান করে বুকিং নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তি ১০ নভেম্বর, ২০২১ এবং তৃতীয় কিস্তি ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১-এর মধ্যে প্রদান করে বুঝে নিতে পারবেন ৩৫ খণ্ড  সৈয়দ শামসুল হক রচনাসমগ্র।

ঐতিহ্য আশা প্রকাশ করে, পূর্বে ঐতিহ্য প্রকাশিত ৩০ খণ্ড রবীন্দ্র-রচনাবলি, ১০ খণ্ড বিভূতিভূষণ-রচনাবলি, ১০ খণ্ড মানিক-রচনাবলি, ১৩ খণ্ড আল মাহমুদ-রচনাবলি, ৬ খণ্ড জীবনানন্দ-রচনাবলি, ৫ খণ্ড শরৎ-রচনাবলি, ৭ খণ্ড প্রমথ চৌধুরী-রচনাবলি, ৪ খণ্ড ঈশ্বরচন্দ্র-রচনাবলির মতো পাঠক ৩৫ খণ্ড  সৈয়দ শামসুল হক রচনাসমগ্র সাদরে গ্রহণ করবে।